ময়মনসিংহ মেডিকেলে কার্ডিয়াক ক্যাথল্যাব চালু
অমিত রায়ঃ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদরোগীদের চিকিৎসায় কার্ডিয়াক ক্যাথল্যাব চালু করায় এখন থেকে রক্তনালীর ব্লক নির্ণয়, রিং পরানো ছাড়াও পেসমেকার লাগানোসহ শিশুদের জন্মগত হৃদরোগও নির্ণয় করা যাবে।
কম খরচে হাতের কাছে এনজিওগ্রাম ও রিং পরানোসহ হৃদরোগীদের অন্যান্য এমন সেবা পেয়ে দারুণ খুশি বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের রোগী ও তাদের স্বজনরা।
ক্যাথল্যাব চালুর প্রথম দিনে ৬ জন রোগীর এনজিওগ্রাম ও দুইজনকে রিং পরানো হয়। কিন্তু কার্ডিও সার্জারি বিভাগ না থাকায় অর্থাৎ সার্বক্ষণিক ইন্টারভেনশনাল কার্ডিয়াক সার্জন নিয়োগ না থাকায় এখনই বাইপাস অথবা আরও জটিল রোগীদের সেবা দেয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বর্তমান এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এ হাসপাতালে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল তথা সিলেট, সুনামগঞ্জ, রৌমারী, কুড়িগ্রামসহ এ অঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষের চিকিৎসাসেবার অন্যতম ভরসাস্থল এক হাজার শয্যার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
এই হাসপাতালে হৃদরোগীদের চিকিৎসা থাকলেও জটিল হৃদরোগীদের জন্য এনজিওগ্রাম বা রক্তনালীর ব্লক নির্ণয়, রিং পরানো, পেসমেকার লাগানো হতো না।
ফলে মুমুর্ষ রোগিদের ঢাকায় স্থানান্তরের সময় বা নেয়ার পথেই ঘটতো প্রাণহানির ঘটনা। মচিমহায় কার্ডিয়াক ক্যাথল্যাব চালু হওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তিতে এ অঞ্চলের মানুষ।
হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট ডা. টিআই খান ওয়াসিম জানান, ময়মনসিংহ মেডিকেলের হৃদরোগ বিভাগে ৫০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন দুই শতাধিক রোগী ভর্তি থাকেন। জটিল রোগীদের ঢাকায় স্থানান্তর করার সময় নেয়ার পথেই ঘটতো প্রাণহানির ঘটনা।
এমন বাস্তবতায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উদ্বোধন করা হয় ৮ শয্যার কার্ডিয়াক ক্যাথল্যাব।
এরপর করোনা মহামারিসহ নানা জটিলতায় এটি আর চালু হয়নি। সস্প্রতি সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে গত ২৮ মার্চ চালু হয় ক্যাথল্যাবের কার্যক্রম।
প্রথমদিনে ৬ জন রোগীর এনজিওগ্রাম করা হয়। এদের মধ্যে দুইজনের হার্টে ব্লক ধরা পড়ায় তাদের রিং পরানো হয়। ঢাকার তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সহায়তায় ময়মনসিংহ মেডিকেলের চিকিৎসকেরা সফলভাবে চিকিৎসা সম্পন্ন করেন।
বর্তমানে রোগীদের সবাই সুস্থ আছেন বলে জানান চিকিৎসকরা।
৮ বেডের একটি কার্ডিয়াক ক্যাথল্যাব চালু হলেও সার্বক্ষণিক ইন্টারভেনশনাল কার্ডিয়াক সার্জন নিয়োগ না থাকায় এখনই বাইপাস অথবা আরও অন্যান্য সেবা দেয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. গণপতি আদিত্য জানান, বহুল কাঙ্ক্ষিত ক্যাথল্যাব চালু হওয়ায় এ অঞ্চলের রোগীদের এনজিওগ্রাম বা রক্তনালীর ব্লক নির্ণয়, রিং পরানো, পেসমেকার লাগানোসহ শিশুদের জন্মগত হৃদরোগও নির্ণয় করা যাবে।
এছাড়া এখানে কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ চালু করা হলে বাইপাস সার্জারিসহ অন্যান্য জটিল রোগীদের সুচিকিৎসা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, ক্যাথল্যাব পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যেই কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্সকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। আশা করি খুব দ্রুতই এখানে একটি দক্ষ টিম গড়ে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, ক্যাথল্যাব চালু থাকলেও কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ এখানে চালু জরুরি। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে কোনো ঝুঁকির মধ্যে রাখতে চায় না।