| রাত ৪:৩৯ - শনিবার - ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ময়মনসিংহে স্বামী’র থেকে বিচ্ছেদের একদিন আগেই লাশ হলেন শিউলী

শিউলীর বিয়ে হয়েছিলো বছর পাঁচেক আগে। তবে নির্যাতনের স্বীকার গৃহবধূ শিউলী বিচ্ছেদের একদিন আগেই না ফেরার দেশে চলে গেছেন।

 

আর দশটি মেয়ের মতো তারও সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন ছিল। তবে বিয়ের পর শুরু হয় নির্যাতন। প্রায়ই তাকে মারধর করতেন স্বামী আর শাশুড়ি।

 

প্রাণ শঙ্কায় শেষমেশ মামা শ্বশুরের বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় তাদের বিচ্ছেদের।

 

সোমবার সকালে মর্মস্পর্শী ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের খামারগাঁও গাতিপাড়া গ্রামে। শিউলীর বাড়ি নরসিংদী জেলার মাধবী উপজেলার বগিরাতপুর গ্রামে।

 

শিউলীর মা সাফিয়া খাতুন বলেন, পাঁচ বছর আগে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার গাড়াদিয়া গ্রামের মাইনুল ইসলামের ছেলে মো. তমজিদ ভূঁইয়া ওরফে তৌহিদের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হয়। কিন্তু স্বামী ও শাশুড়ির নির্যাতনের কারণে আমার মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে টিকতে পারেনি।

 

একপর্যায়ে মেয়েটি ২০১৮ সালে কর্ণফুলী রফতানি প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রে স্যুইং অপারেটরের সহকারী হিসেবে চাকরি নেন। তবে বেতনের টাকা স্বামী কেড়ে নেয়ায় সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ি যায়। এরপর আবারো শুরু হয় নির্যাতন।

 

সাফিয়া আরো বলেন, মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে আমি কখনো যাইনি। তবে নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার খবর আমাকে ফোনে জানাতো শিউলী।

 

এ অবস্থায় মেয়েকে আর স্বামীর ঘরে দেব না বলে সিদ্ধান্ত নেই। এ নিয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির কয়েকজনের সঙ্গে কথাও হয়।

 

এর মধ্যে পাঁচদিন আগে আমাকে মেয়ের কাবিনের কাগজ ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে মঙ্গলবার (২ মার্চ) গাড়াদিয়া গ্রামে যেতে বলেছিলেন শিউলির মামা শ্বশুর মো. শাহজাহান।

 

এ কথায় প্রস্তুতও ছিলাম। তবে একদিন আগেই খবর আসে নান্দাইল উপজেলার খামারগাঁও গ্রামে ধর্ম বাবা আব্দুল খালেকের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে শিউলী।

 

মেয়ের অসুস্থের কথা শুনে সোমবার সকালে খালেকের বাড়িতে যান শিউলির মা সাফিয়া। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন তার মেয়েকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে দেখেন মেয়ে মারা গেছে।

 

মেয়ের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আমি তো আমার ধনরে নিতে আইছলাম। অহন কি অইলো।’

 

আব্দুল খালেক জানান, প্রায় দুই মাস আগে শিউলী তাকে ধর্মের বাবা বলে মেনেছিল। এরপর মাঝে মধ্যে তার বাড়িতে আসতো। মেয়েটি স্বামীর ঘরে সুখে ছিল না। তবে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন শিউলীর মামা শ্বশুর মো. শাহাজান।

 

রহস্যজনক মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান নান্দাইল মডেল থানার এসআই মো. ফজিকুল ইসলাম। সেখানে গিয়ে গৃহবধূর মায়ের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পরে লাশ উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জের ২৫০ শয্যার আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠান। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৯:৫৪ অপরাহ্ণ | মার্চ ০২, ২০২১