| দুপুর ১২:৫০ - মঙ্গলবার - ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা জারি, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল

মিয়ানমারে সেনাবাহিনী দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে। এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দেশের ক্ষমতা কমান্ডার-ইন-চিফ মিন অং হ্লেইংয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অর্থাৎ মিয়ানমারের ক্ষমতা এখন সেনাবাহিনীর দখলে। খবর আল জাজিরার।

 

এর আগে দেশটির ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রধান অং সান সু চি, দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে সেনাবাহিনী। সোমবার সকালে অভিযান চালিয়ে এসব নেতাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনএলডির মুখপাত্র মিও নিয়ুন্ট।

 

গত কয়েকদিন ধরেই সু চির বেসামরিক সরকার এবং দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সুচির এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। তারপর থেকেই মূলত দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার শুরু। প্রথম থেকেই সেনাবাহিনী নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ করে আসছে।

 

নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনেই মূলত সোমবার ক্ষমতা দখল করেছে সেনাবাহিনী। একই সঙ্গে দেশজুড়ে এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

 

এনএলডির মুখপাত্র মিও নিয়ুন্ট বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, সোমবার সকালের দিকে অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট এবং বেশ কয়েকজন নেতাকে ‘তুলে নিয়ে’ যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমি লোকজনকে বলব চটজলদি এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া না দেখাতে। আমি চাই সবাই আইন মেনে চলবেন। তিনি এএফপি নিউজকে বলেন, আমরা মনে করছি সেনা অভ্যুত্থান শুরু হয়ে গেছে।

 

সোমবার নব-নির্বাচিত সংসদের প্রথম বৈঠক হবার কথা ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী অধিবেশন স্থগিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। নিজেও আটক হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এনএলডির মুখপাত্র।

 

সোমবার সকালে মিয়ানমারের রাজধানী নাইপিদোতে কোনো ফোন সংযোগ পাওয়া যায়নি। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘দেশের প্রধান শহর ইয়াংগুনের সিটি হলের সামনে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।’

 

এনএলডির এক আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সু চি ও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হান থার মিন্ট রয়েছেন।’

 

গত ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে এনএলডি পার্টি ৮৩ শতাংশ আসন পায়। এই ঘটনাকে সু চির বেসামরিক সরকারের প্রতি সর্বসাধারণের অনুমোদন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

 

২০১১ সালে সামরিক শাসন শেষ হওয়ার পর এটি দ্বিতীয় বার নির্বাচন ছিল। তবে সামরিক বাহিনী নির্বাচনের ফলকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তারা সুপ্রিম কোর্টে দেশটির প্রেসিডেন্ট এবং ইলেক্টোরাল কমিশনের প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে।

 

সোমবার সকাল থেকেই রাজধানী নাইপিদো এবং প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। এছাড়া বড় শহরগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ‘টেকনিক্যাল সমস্যার’ কারণে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এবং রেডিওর সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে।

 

বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার

 

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমার-বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সীমান্তে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে উপজেলার তুমব্রু, ঘুমধুম, চাকঢালা সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে বিজিবি।

 

সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে বিজিবি।

 

বিজিবি কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলী হায়দার জানিয়েছেন, সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থায় থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

 

 

মিয়ানমারে অভ্যুত্থান, খাবার-নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার হিড়িক

 

জরুরি অবস্থার মধ্যেই রাজধানী নাইপিদোতে মোবাইল ফোন ও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এবং রেডিওর প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন মায়াবতির সম্প্রচার চালু রয়েছে। দেশটির সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ শহর ইয়াঙ্গুনের বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং ওই শহরের আশেপাশের এলাকাগুলোর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগও বন্ধ রাখা হয়েছে।

 

শহরের বিভিন্ন স্থানে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা গেছে। অভ্যুত্থানের খবরে আতঙ্কিত হয়ে মিয়ানমারের মানুষ টাকা তোলার জন্য এটিএম বুথের সামনে জড়ো হচ্ছেন। অনেক বুথের সামনেই মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে। তবে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি মানুষজন এটিএম বুথ থেকে টাকাও তুলতে পারছে না বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

 

এদিকে, মিয়ানমার ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বর্তমান রাজনৈতি পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট সেবা ব্যহত হওয়ায় দেশটির সব ব্যাংক তাদের সব ধরনের আর্থিক কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

সব ব্যাংকের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ রাখার বিষয়ে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি নেয়া হবে এবং কবে থেকে সব কার্যক্রম আবারও শুরু হবে সে বিষয়টি পরবর্তীতে জানিয়ে দেয়া হবে।

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানে ভারত ‘চিন্তিত’

মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে আটকের পর দেশটির সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত।

 

সেখানে চলমান পরিস্থিতির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

 

ভারতের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা মিয়ানমারের বিষয়টিতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অবশ্যই বহাল রাখতে হবে। আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৩:৫৩ অপরাহ্ণ | ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২১