৫০০ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী মিঞাবাড়ি জামে মসজিদ
বাংলার সুবাদার মুঘল সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় ছেলে শাহজাদা সুজার সঙ্গী হিসেবে এসে বর্তমান ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাভারাম চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ভারুকাঠিতে আস্তানা গড়েন শেখ আব্দুল মজিদ। নির্মাণ করেন তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি পাকা মসজিদ।
জানা গেছে, ঝালকাঠি সদরের গাভারাম চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ভারুকাঠি গ্রামের সুপ্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন এ মিয়াবাড়ি মসজিদ। ধারণা করা হয়, এটি ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়েছে। সদর উপজেলা পরিষদ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ মসজিদটি।
মসজিদজুড়ে চমৎকার নকশার কাজ রয়েছে। মূল মসজিদে রয়েছে তিনটি দরজা। চারপাশে পিলারের ওপর নির্মিত হয়েছে ছোট-বড় পাঁচটি মিনার।
মিনারগুলোতেও সুন্দর কারুকার্যময় নকশা রয়েছে। এর মাঝখানে রয়েছে বড় তিনটি গম্বুজ। এরমধ্যে মাঝখানের গম্বুজটি সবচেয়ে বড়। যার ভেতরের অংশেও রয়েছে কারুকার্যময় সুন্দর নকশার সমাহার। মসজিদের দেয়াল ৪২ ইঞ্চি পুরু।
মসজিদটি নির্মাণের ইতিহাস সম্পর্কে জনশ্রুতি রয়েছে- এ মসজিদটি বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলে ব্রিটিশ আমলের সূচনালগ্নে নির্মিত একটি মসজিদ। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা শাহজাদা সুজা এ মসজিদটি নির্মাণ করেন।
মসজিদের পূর্ব পাশে কয়েক একর নিয়ে বিশাল একটি দীঘিও রয়েছে, যা মসজিদের সৌন্দর্যকে আরো নয়নাভিরাম করে তুলেছে। মসজিদটি প্রাচীনকালের স্থাপত্য শিল্পের সৌন্দর্যের পরিচয় বহন করে। সেই সঙ্গে সেসময়কার মানুষের পরিমিত রুচিবোধেরও প্রকাশ করে।
প্রবীণ ব্যক্তি নেছার উদ্দিন আহমেদ জাহাঙ্গির মিয়া (৮৩) জানান, মসজিদ নির্মাণের সঠিক সময় বলতে না পারলেও পাঁচশত বছর আগে এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে ধারণা করেন তিনি। মসজিদ এবং দিঘী একই সময় নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় গোলাম মহিউদ্দিন নামের এক ভাই নেককার বান্দা ছিলেন। তিনি স্বপ্নে আদেশ পাওয়ার পর মসজিদ সংলগ্ন কাঠাল গাছের গোড়া থেকে সবকটি করবস্থানই বাঁধাই করে রেখেছেন।
শেরে-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক আমার দাদার খালাতো ভাইর ছেলে। পাকিস্তান আমলের মন্ত্রী পিরোজপুরের বাসিন্দা খান বাহাদুর আফজালর মাতুল বাড়ি এটা। ফজলুল হক ও খান বাহাদুর আফজালের অনেক স্মৃতি রয়েছে এ মসজিদ ও ঘাটলায়।
শত স্মৃতিনিজড়িত এ মসজিদের যেতে চাইলে ঝালকাঠি কলেজ মোড় থেকে বাসে করে নবগ্রাম যেতে হবে। এরপর টেম্পু করে গুদিগাটায় নামতে হবে। সেখান থেক ভেতরে একটু বামে গেলেই পাওয়া যাবে ভারুকাঠি মিয়া বাড়ির তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এ জামে মসজিদ।