| বিকাল ৩:৫০ - মঙ্গলবার - ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ - ৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

বৃহত্তর ময়মনসিংহের কৃতিসন্তান শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের ১০৬তম জন্মবার্ষিকী আজ

বাংলাদেশের চিত্রশিল্পীদের মধ্যে প্রথমেই যার নাম বলতে হয় তিনি হলেন জয়নুল আবেদীন। জয়নুল আবেদীনের জন্ম শিক্ষা-সংস্কৃতির জেলা ময়মনসিংহে। জয়নুল আবেদীনের শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে দুর্ভিক্ষ চিত্রমালা, সংগ্রাম, সাঁওতাল রমণী, ঝড়, গুণটানা, বিদ্রোহী ষাড়, মনপুরা, বীর মুক্তিযোদ্ধা খুবই বিখ্যাত।

আজ ২৯ ডিসেম্বর, ময়মনসিংহের কৃতিসন্তান শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের ১০৬ তম জন্মবার্ষিকী।

 

নিপীড়িত-নির্যাতিত বাঙালি বারবার এসেছে জয়নুলের তুলিতে। ১৯৪৩ সালে বাংলার দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের করুণ অবস্থার চিত্র এঁকে বিশ্ববাসীর বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন শিল্পী জয়নুল আবেদিন। সে সময় তিনি মূলত দুটি চরিত্রকে উপজীব্য করে সৃষ্টি করেন কালজয়ী চিত্রকর্ম ‘দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালা’। বিষয়বস্তু মা ও শিশু। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের ছবি চিত্রমালার জন্য তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন।

 

এর বাইরে তার চিত্রকর্মের মধ্যে অন্যতম- ১৯৫৭-এ নৌকা, ১৯৫৯-এ সংগ্রাম, ১৯৭১-এ বীর মুক্তিযোদ্ধা, ম্যাডোনা। তার দীর্ঘ দুটি স্ক্রল ১৯৬৯-এ অঙ্কিত ‘নবান্ন’ এবং ১৯৭৪-এ অঙ্কিত ‘মনপুরা-৭০’ জননন্দিত দুটি শিল্পকর্ম। এছাড়াও তার বিখ্যাত চিত্রকর্মের মধ্যে রয়েছে সাঁওতাল রমণী, ঝড়, কাক ইত্যাদি। অনুমান করা হয় তার চিত্রকর্মের সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি।

 

 

চিত্রশিল্পবিষয়ক শিক্ষা প্রসারের জন্য তিনি ‘শিল্পাচার্য’ উপাধি লাভ করেন ১৯৬৮ সালে ঢাকা আর্ট কলেজের ছাত্রদের তরফ থেকে। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের সবচেয়ে বড় খেতাব হেলাল-ই-ইমতিয়াজ এবং ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে জাতীয় অধ্যাপকের সম্মান লাভ করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি নিখিল ভারত স্বর্ণপদক লাভ করেন।

 

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে একটি চিত্রকলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুভূত হয়। জয়নুল আবেদিনের উদ্যোগে ১৯৪৮ সালে পুরান ঢাকার জনসন রোডের ন্যাশনাল মেডিকেল স্কুলের একটি জীর্ণ কক্ষে গভর্নমেন্ট আর্ট ইন্সটিটিউট স্থাপিত হয়। প্রথমে এর ছাত্র সংখ্যা ছিল মাত্র ১৮। জয়নুল আবেদিন ছিলেন এ প্রতিষ্ঠানের প্রথম শিক্ষক। ১৯৫১ সালে এই আর্ট ইন্সটিটিউট সেগুনবাগিচার একটি বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৫৬ সালে আর্ট ইন্সটিটিউটটি শাহবাগে স্থানান্তরিত হয়।

 

১৯৬৩ সালে এটি একটি প্রথম শ্রেণির সরকারি কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং এর নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়। স্বাধীনতার পর এ প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

জয়নুল আবেদিনের আগ্রহ ও পরিকল্পনায় সরকার ১৯৭৫ সালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে লোকশিল্প জাদুঘর এবং ময়মনসিংহে জয়নুল সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করেন।

 

পুলিশ কর্মকর্তা তমিজউদ্দিন আহমদ এবং জয়নাবুন্নেছার নয় সন্তানের প্রথম জয়নুল আবেদিন। ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। দীর্ঘ ছয় মাস ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগে ১৯৭৬ সালের ২৮ মে ৬১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন জয়নুল আবেদিন।

 

সর্বশেষ আপডেটঃ ১:১৮ অপরাহ্ণ | ডিসেম্বর ২৯, ২০২০