| দুপুর ১২:২৮ - বৃহস্পতিবার - ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ময়মনসিংহের ঐতিহ্য আছে, মাঠে যেন দালান না হয় : প্রধানমন্ত্রী

‘ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সড়ক উন্নয়ন ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্কসহ নাগরিক সেবা উন্নতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা।

 

মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) একনেক সভায় অনুমোদিত এ প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (এমসিসি) বাস্তবায়ন করবে। এতে খরচ হবে ১ হাজার ৫৭৫ কোটি ৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

 

‘প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ময়মনসিংহ শহরের একটি বড় গাছও যেন কাটা না পড়ে এবং মাঠে যেন দালান না হয়,’ এমন নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

একনেক সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার কথা তুলে ধরেন পরিকল্পনা বিভাগের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম।

 

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে শামসুল আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শহরটাকে (ময়মনসিংহ) ভালো করে চেনেন। একসময় প্রত্যেকটা রাস্তার পাশে বড় বড় ড্রেন ছিল। এ প্রকল্পে যা টাকা চেয়েছে, তা তিনি দিয়েছেন। এমনকি এই প্রকল্পে ১০ শতাংশ টাকা ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের দেয়ার কথা ছিল, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এই টাকাও তাদের দিতে হবে না। কাজটা ভালো করে করেন। একটাই শর্ত, কাজ যতটা মানসম্মত হওয়া দরকার, ততটাই যেন হয়।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘ময়মনসিংহের ঐতিহ্য আছে। ভালো ভালো মাঠ ছিল। বড় বড় গাছ-গাছলা ছিল। একটি বড় গাছও যেন কাটা না পড়ে। মাঠগুলোয় যেন বিল্ডিং না ওঠে। এটি তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন।’

 

একনেক সভায় উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের (এমসিসি) মেয়র ইকরামুল হক টিটু। তাকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য তুলে ধরে শামসুল আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তো সব চেনেন। তিনি বলেন, আপনি (এমসিসি মেয়র) একজন বিখ্যাত ঠিকাদার পরিবারের লোক। আপনি তো কোয়ালিটি বুঝতেই পারেন। প্রধানমন্ত্রী ওখানকার রাস্তাঘাটের ওপর জোর দিয়েছেন। যাতে মানসম্পন্ন হয়। আর এ প্রকল্পও যেন যথাসময়ে শেষ হয়। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, বর্জ্য ব্যবস্থা রাখতে হবে। আজকাল বর্জ্য আগের মতো জমিয়ে রাখা যাবে না। এগুলো প্রক্রিয়াকরণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’

 

সিটি কর্পোরেশন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত নগরী গড়ে তোলা, সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণের মাধ্যমে যানজট নিরসনসহ উন্নততর যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, সড়ক ও নর্দমা উন্নয়ন, সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাকে দক্ষ ও কার্যকরকরণ এবং মান নিয়ন্ত্রণসহ যান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাসকরণ এবং প্রকল্প এলাকার জনগণের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করা এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

 

এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ৪৭৪ দশমিক ৮২ কিলোমিটার সড়ক, ৩৪৫ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ, ১৬ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার ফুটপাত, ৩৭ দশমিক ৫৯ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল ও আরসিসি প্যালাসাইডিং, ১ দশমিক ১০ কিলোমিটার রোড ডিভাইডার নির্মাণ, ৩টি (দশমিক ১৩৮ কিলোমিটার) ব্রিজ নির্মাণ, ১৩টি (দশমিক ২৪২ কিলোমিটার) কালভার্ট নির্মাণ, ৬টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, ৪ থেকে ৫ টনের একটি ভাইব্রেটরি রোড রোলার, ১০ টনের একটি স্ট্যাটিক রোড রোলার, ৯ দশমিক ৫০ টনের একটি টায়ার রোড রোলার, একটি মিনি রোড রোলার, ১০ থেকে ১২ টনের একটি ভাইব্রেটরি সয়েল কম্প্যাক্টর, দুইটি ওয়াটার ব্রাউজার, একটি পেভার ফিনিশার মেশিন, ২ হাজার লিটারের দুটি অ্যাসফাল্ট/বিটুমিন ডিস্ট্রিবিউটর, ১৫ টন ক্যাপাসিটির মটর গ্রেডার, ২০ টনের একটি এস্কেভেটর, দুইটি মিনি এস্কেভেটর (কমপ্যাক্ট), ২০ টনের একটি পে-লোডার, একটি অটোমেটিক পটহোলস রিপেয়ার মেশিন, একটি এয়ার কম্প্রেশার উইথ টেইলার, একটি অটোমেটিক রোড মার্কিং মেশিন, একটি চেইন ডোজার, একটি হুইল ডোজার, একটি মোবাইল কংক্রিট মিক্সিং প্ল্যান্ট (ঘণ্টায় ১৫ ঘন মিটার, দুটি রেডি মিক্স কংক্রিট ক্যারিয়ার (৪-৬ কিউবিক মিটার), দুটি ৩ টনের ডাম্প ট্রাক, দুটি ৫ টনের ডাম্প ট্রাক, একটি লংবুম/লংরিচ এস্কেভেটর (২৫-৩০ টন), একটি অটোমেটিক ভেহিকল ওয়াশ মেশিন, দুটি ফিল্ড সুপারভিশন পিকআপ এবং একটি মনিটরিং জিপ কেনা ও নির্মাণ করা হবে।

 

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত হচ্ছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন, সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণের মাধ্যমে যানজট নিরসনসহ উন্নততর যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এছাড়া সড়ক ও নর্দমা উন্নয়ন, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাকে দক্ষ ও কার্যকরকরণ এবং মান নিয়ন্ত্রণসহ যান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত নগরী গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ১:২১ অপরাহ্ণ | ডিসেম্বর ০৯, ২০২০