ঈদের আনন্দে অ্যালকোহল পানে ১২ জনের মৃত্যু
লোক লোকান্তরঃ ঈদের আনন্দে অ্যালকোহল পানে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৫ মে) ও মঙ্গলবার (২৬ মে) এ ঘটনা ঘটে। অ্যালকোহল পানে রংপুরে ৯ জন ও দিনাজপুরের ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার রংপুরের যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে তারা হলেন- বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নুর ইসলাম (৩০), রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের সরোয়ার হোসেন (৩১) ও মোস্তফা কামাল (৩০)। তিনজনেই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ ঘটনায় অসুস্থ আরও চারজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একটি সংঘবদ্ধ দল প্রায়ই শ্যামপুর বাজার এলাকায় মদ ও বিষাক্ত স্পিরিট পানের আসর বসায়। বিশেষ করে ঈদকে ঘিরে তাদের আসর আরও জমজমাট হয়ে ওঠে। ঈদের আনন্দে গত সোমবার (২৫ মে) শ্যামপুর বাজার এলাকায় নেশাজাতীয় নিষিদ্ধ স্পিরিট পান করেন কয়েকজন। একপর্যায়ে তারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের সদস্যরা তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান।
সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে সরোয়ার হোসেন ও মোস্তফা কামাল এবং বুধবার সকালে নুর ইসলাম মারা যান। মঙ্গলবার বিকেলে মোস্তফা ও সরোয়ারের মরদেহ তড়িঘড়ি করে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, নিহত দুইজনের বাড়ি চন্দনপাট ইউনিয়নের খইল্লাপাড়া ও পুটিমারী এলাকায় এবং একজনের বাড়ি বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নে।
রংপুর সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, নুর ইসলামের মৃত্যুর পর বিষয়টি জানাজানি হয়। নেশা জাতীয় স্পিরিট পান করে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নেশার উৎস এবং সরবরাহকারীকে খুঁজে বের করতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।
এর আগে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার শানেরহাটে বিষাক্ত মদ পানে সোমবার ও মঙ্গলবার দুইদিনে ৬ জনের মৃত্যু হয়। সোমবার (২৫ মে) মদপান করে ঈদ উদযাপন করতে গিয়ে পীরগঞ্জ উপজেলার শানেরহাট ইউনিয়নের শানেরহাট বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলেন- ওই ইউনিয়নের খোলাহাটি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক (৪৫), রায়তি সাদুল্যাপুর গ্রামের দুলা মিয়া (৫০), বড় পাহাড়পুর গ্রামের জায়দুল হক (৩৫), হরিরাম সাহাপুর গ্রামের লুলু মিয়া (৩০), বড় পাহাড়পুর গ্রামের সেলিম মিয়া (৫০) এবং মিঠাপুকুর উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের চন্দন কুমার (৩০)।
এর মধ্যে মঙ্গলবার সকালে খোলাহাটি গ্রামের (তিনদিন আগের জেলফেরত) আব্দুর রাজ্জাক, বিকেলে পাহাড়পুরের জায়দুল হক ও মিঠাপুকুরের বাজিতপুরের চন্দন কুমার, সোমবার সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বড় পাহাড়পুরের সেলিম মিয়া, রাতে নিজ বাড়িতে রায়তি সাদুল্লাপুরের দুলা মিয়া এবং হরিরাম সাহাপুরের সেরাজুল মিস্ত্রির মৃত্যু হয়।
এছাড়া ধল্লাকান্দির খালেক (৫০), আকবর (৪৫) ও মিলন মাস্টার (৫২), কাজীর পাড়ার খোড়া শাহিন (৪২) ও খোলাহাটির ডিস মতিনসহ (৩৬) সাতজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাড়ি ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মৃত্যুর পর তড়িঘড়ি করে তাদের দাফন করেন স্বজনরা।
শানেরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মন্টু বলেন, এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি আমরা। মৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিনের।
রংপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, মদের উৎস এবং মদ সরবরাহকারীকে খুঁজে বের করতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে পুলিশ। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
দিনাজপুরে অ্যালকোহল পানে ৩ জনের মৃত্যু
দিনাজপুরের বিরামপুরে অ্যালকোহল পানে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় অসুস্থ আরও চারজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ মে) গভীর রাতে বিরামপুর পৌর শহরের ৬ নং ওয়ার্ডের মাহমুদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- মাহমুদপুর গ্রামের আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে আব্দুল মতিন (২৭), তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে আজিজুল ইসলাম (৩৩) ও সুলতান মাহমুদের ছেলে মহসিন আলী (৩৮)। অসুস্থদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসী জানায়, রাতে তারা হোমিওপ্যাথি ওষুধের দোকান থেকে অ্যালকোহল কিনে সেবন করেন। পরে মধ্য রাতে নিজ নিজ বাসায় তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশ আব্দুল মান্নান (৪০) নামে এক হোমিও চিকিৎসককে আটক করেছে।
বিরামপুর থানা পুলিশের ভারপাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।