| দুপুর ১২:২৩ - বৃহস্পতিবার - ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ঈদে নিস্তব্ধ ময়মনসিংহের বিনোদন কেন্দ্রগুলো (ভিডিও)

ফাহিম মোঃ শাকিলঃ  মুসলমানদের প্রধান দুটি উৎসবের একটি হলো ঈদুল ফিতর। ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। আর প্রতি বছর এই বিশেষ দিনগুলো পরিবার নিয়ে সবাই কমবেশি ঘুরতে যান। পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে পর্যটন স্পটগুলো। তবে এবার মহামারি করোনার কারণে ম্লাণ ঈদ উৎসব। তাই পর্যটকদের উপস্থিতি না থাকায় খালি পড়ে আছে ময়মনসিংহের পর্যটন স্পটগুলো।

 

নতুন পোশাকের পাশাপাশি প্রিয়জনদের কাছে ঈদে বাড়ি ফেরা অন্যতম বিষয়। ঈদে ঘর ফেরা মানুষের উপচে পড়া ভিড় থাকতো ময়মনসিংহ রেলওয়ে ষ্টেশনে। কিন্তু এবার করোনাকালের জন্য অনেকেই ময়মনসিংহে প্রিয়জনের কাছে ফিরতে পারছেন না। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ঈদে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয় সরক পথে।

 

 

অন্যান্য সময় ঈদে বাড়ি যাওয়ার জন্য রেলস্টেশনগুলোতে টিকিটের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ বাধে। রাতভর লাইনে দাঁড়িয়ে সকালে টিকিট মিললে সব কষ্ট ভুলে যান যাত্রীরা। ঈদের পর অগ্রিম টিকিট পাওয়ার জন্য চলে যুদ্ধ। কিন্তু এবার এর কিছুই নেই।

 

অন্যান্য বছর এই ঈদকে ঘিরে ভ্রমণ পিপাসু ও বিনোদনপ্রেমীদের ঢল নামলেও এবারের চিত্র একেবারে ভিন্ন। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নেই উপচেপড়া ভিড়। নেই প্রেয়সির হাতে হাত রেখে ছুটে চলা, নেই সন্তান কিংবা বাবা-মা পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়াতে যাওয়া।

 

 

প্রতিবছর ঈদকে ঘিরে ময়মনসিংহে নানা আয়োজন, নানা পরিকল্পনা থাকলেও করোনার প্রভাবে সব কিছু যেন থমকে গেছে। চলমান করোনা সংকট মোকাবিলায় সচেতনতার অংশ হিসেবে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী জনসমাগমে বিধি নিষেধ থাকায় বিনোদনপ্রেমীরা ঘরে বসেই পরিবার নিয়ে এবারের ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছে।

 

বিশেষ করে শহরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্ক ও সংগ্রহশালা, শশী লজ, বিপিন পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, সিলভার ক্যাসেল, ইস্টার্ন হেরিটেজ রিসোর্টসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নেই মানুষের ভিড়।

 

সরেজমিনে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা যায়, ঈদের দিন মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে থাকা প্রতিটি বিনোদনকেন্দ্রে এখন সুনসান নিরবতা বইছে। প্রবেশদ্বারের প্রধান ফটকগুলোতে তালা ঝুলে আছে। খালি পড়ে আছে সৌন্দর্য পিপাসুদের জন্য নির্ধারিত স্থানগুলো।

 

 

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্ক

ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ময়মনসিংহ শহরবাসীর অন্যতম বিনোদনের জায়গা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্ক। সকাল থেকে রাত অবধি এই পার্কে থাকে সব বয়সী মানুষের আনাগোনা। তবে এবার মহামারি করোনার কারণে পর্যটকদের উপস্থিতি না থাকায় খালি পড়ে আছে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিনোদনের এই স্পটটি।

 

নদের উপর সোনালী রোদ। বাতাসে মহুয়ার ঝিম। নদের মাঝে পালতোলা নৌকা। স্বচ্ছ পানি। এছাড়া ছোট চিড়িয়াখানা, শরীরচর্চা, শিশু বিনোদন কেন্দ্র ইত্যাদি রয়েছে এই পার্কে।

 

চিড়িয়াখানার

মানুষ নিরিবিলিতে ছুটি কাটাতে পার্কের অবস্থানরত মিনি চিড়িয়াখানার জুড়ি নেই। চিড়িয়াখানায় আছে, উট পাখি, হরিণ, কালো ভাল্লুক, কুমির, সজারু, বানর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, বন মোরগ, কালেম পাখি, ময়না, টিয়া, কাকাতুয়া, ঈগল, চিল, মুনিয়া, সারস, কানিবক প্রভৃতি। তবে করোনার কারণে একজন পর্যটকের পদার্পণ পরেনি এই ঈদে।

 

 

সরেজমিনে যেয়ে জানা যায়, করোনা মহামারির আগে থেকে অসুস্থ থাকা একটি হরিণ মারা গিয়েছে। অসুস্থ আছে একটি বানরও। তবে মহামারিতে এই বন্য প্রাণীগুলর খাবারের কোন রকমের অসুবিধা হচ্ছে না বলে জানান উপস্থিত কর্তব্যরত দুই জন স্টাফ।

 

বোটানিক্যাল গার্ডেন

ব্রহ্মপুত্রের তীরে অবস্থিত বোটানিক্যাল গার্ডেনের মধ্যে ঢুকেই প্রাণ জুড়িয়ে যাবে সারি সারি অচেনা সব গাছ দেখে। সুন্দর বাঁধানো রাস্তা আর তার দুই পাশের সুশোভিত বৃক্ষরাজি ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করবে না। এ গার্ডেনে ৫৫৮ প্রজাতি কয়েক হাজার গাছ রয়েছে।

 

এর মধ্য রয়েছে ফুল, ফল, ঔষধি, লতাপাতাসহ নানা জাতের গাছ। প্রজাতি সংখ্যার দিক থেকে এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ বাগান। আপনার প্রিয়জনকে নিয়ে পুরো একটা দিন এখানেই কাটাতে পারেন।

 

ঈদ ছুটিতে গুরুত্বপূর্ণ এই স্পটটি থাকে জনারণ্য। হাজার হাজার মানুষের ভিড়। কিন্তু এবারের চিত্র একেবারে ভিন্ন। বিনোদন কেন্দ্রটিতে নেই ভিড়।

 

জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা

মহামারি করোনার কারণে তালা ঝুলছে ব্রহ্মপুত্রের তীরে অবস্থিত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার প্রধান ফটকে। এখানে শিল্পাচার্যের ৭০টি চিত্রকর্ম ছিল কিন্তু কিছু ছবি চুরি হয়ে যাওয়ায় এখন মোট ৬৩টি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। এসব ছবির মধ্যে আছে শম্ভুগঞ্জ ঘাট, শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ, স্কেচ, বাস্তুহারা, প্রতিকৃতি এবং অন্যান্য অনেক ছবি। এসব ছবি ছাড়াও রয়েছে তাঁর ব্যবহৃত জিনিস এবং তাঁর কিছু স্থিরচিত্র।

 

 

বিপিন পার্ক

ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র নদ তীরে প্রতিষ্ঠিত বিপিন পার্ক। বর্তমানে ময়মনসিংহ শহরে আনন্দ বিনোদনের প্রান কেন্দ্র, ঐতিয্যবাহী বিপিন পার্ক। অনবদ্য সৃষ্টি প্রকৃতি আর প্রযুক্তির অপুর্ব মেলাবন্ধন এই বিপিন পার্ক এখন বিনোদন প্রেমিকদের পছন্দের তালিকায়। সব বয়সীদের জন্য কিছু না কিছু প্রাপ্তির জায়গাটি করোনার কারনে বন্ধ রয়েছে।

 

এছাড়া অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্র গুলো ঘুরে দেখা গেছে, বিনোদন কেন্দ্রেগুলোতে এখন সুনসান নিরবতা বিরাজ করছে। বেশ কয়েকটি প্রবেশদ্বারের তালা ঝুলে আছে। খালি পড়ে আছে ময়মনসিংহের সৌন্দর্য পিপাসুদের জন্য নির্ধারিত স্থানগুলো।

 

ভিডিও –

 

সর্বশেষ আপডেটঃ ৫:৪৯ অপরাহ্ণ | মে ২৬, ২০২০