| সকাল ১০:৪৭ - বৃহস্পতিবার - ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

করোনা রোগী সুস্থতায় তৃতীয় ময়মনসিংহ, করোনা পরীক্ষাকারী ৪৩টি প্রতিষ্ঠান

লোক লোকান্তরঃ  করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও সুস্থতা দুই দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা বিভাগ। আক্রান্তদের মধ্য থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যায় রয়েছে চট্টগ্রামে। আর চট্টগ্রামের পরই ময়মনসিংহ বিভাগের অবস্থান।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত মঙ্গলবার (১৯ মে) পর্যন্ত রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগে কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩৫২ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে আক্রান্ত ২ হাজার ৬৫ জনের মধ্যে বিভাগটিতে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩৬৩ জন। চট্টগ্রামের পরই ময়মনসিংহ বিভাগের অবস্থান। তৃতীয় অবস্থানে থাকা বিভাগটিতে আক্রান্ত ৬৬৯ জনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২৪৩ জন। আর সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যায় সবার নিচে অবস্থান করছে রাজশাহী বিভাগ।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন হাসপাতাল সংখ্যা, চিকিৎসার পরিবেশ, চিকিৎসকদের প্রস্তুতি, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং রোগীর সাড়া প্রদানের ওপরই নির্ভর করছে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ওঠার বিষয়টি।

 

কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার দিক থেকে ময়মনসিংহের পরের অবস্থানে রয়েছে রংপুর বিভাগ। আক্রান্ত ৫৬৪ জনের মধ্যে বিভাগটিতে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৩৬ জন। খুলনা বিভাগে আক্রান্ত ৩৯৩ জনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৩১ জন। এর পরই সিলেটের অবস্থান, বিভাগটিতে আক্রান্ত ২৪৫ জনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১১৭ জন। সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যার দিক থেকে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে বরিশাল। বিভাগটিতে আক্রান্ত ১৬২ জনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১১৩ জন। কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ হয়ে ওঠার দিক থেকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে রাজশাহী। বিভাগটিতে আক্রান্ত ৩৪০ জনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন মাত্র ৭৩ জন।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ হয়ে ওঠা। এর মধ্যে রয়েছে বিভাগগুলোর করোনা চিকিৎসায় নির্ধারিত হাসপাতালের সংখ্যা, চিকিৎসার পরিবেশ, চিকিৎসকদের প্রস্তুতি, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং রোগীর সাড়া প্রদানের বিষয়টি। এ বিষয়গুলোই যেসব বিভাগ এগিয়ে থাকবে, তারাই কভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যায় এগিয়ে থাকবে।

 

স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, কভিড-১৯ রোগ থেকে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব। তবে এজন্য বিভাগগুলোতেই পর্যাপ্ত নির্ধারিত হাসপাতাল থাকতে হবে, যাতে রোগীরা সহজেই চিকিৎসা পেতে পারেন। এরপর চিকিৎসার পরিবেশ রোগীবান্ধব হতে হবে। তা না হলে মানসিক চাপ থেকেই রোগীর সেরে ওঠার সম্ভাবনা কমে যাবে। পাশাপাশি কভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়ার চিকিৎসকদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতিও থাকতে হবে।

 

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও এ রোগ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আক্রান্ত হওয়ার রোগী কত দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন, তার ওপরই নির্ভর করবে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা। এখন আক্রান্ত হওয়ার পর সংকটাপূর্ণ অবস্থায় হাসপাতালে গেলে তো আর হবে না।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, দেশের সবচেয়ে বেশি আইসোলেশন বেড রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। বিভাগটিতে বর্তমানে ১ হাজার ৩১৩টি আইসোলেশন বেড রয়েছে। আইসোলেশনে বেডের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। বিভাগটিতে ১ হাজার ২৪৩টি আইসোলেশন বেড রয়েছে। এর বাইরে সিলেটে ৯৭৯, খুলনায় ৯৩৮, রাজশাহীতে ৮১৫, বরিশালে ৬৩৮, রংপুরে ৬০৩ ও ময়মনসিংহে ৫২৭টি আইসোলেশন বেড রয়েছে।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও যে বিভাগগুলোর কভিড চিকিৎসায় ভালো প্রস্তুতি রয়েছে, সেখানে রোগীদের সুস্থ হওয়ার সংখ্যাও বেশি। তার পরও আক্রান্ত রোগীদের বয়স একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ খুব বেশি বয়স্ক যারা, তাদের কভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে বেশ সময় লেগে যায়। আবার যারা ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস বা কিডনিজনিত সমস্যায় আগে থেকেই আক্রান্ত, তাদের জন্য সুস্থ হয়ে ওঠা বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যার ধারাবাহিকতায় এরই মধ্যে আমরা টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছি।

 

কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হলে পরীক্ষা বাড়ানোর বিষয়েও তাগিদ দেন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। তিনি বলেন, মহামারী আকার ধারণ করা এ সংক্রমণ মোকাবেলা করতে হলে প্রথমে প্রয়োজন টেস্টের সুযোগ বৃদ্ধি করা। আমরা জানপ্রাণ দিয়ে সেটাই চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে আমরা সাড়ে ৮ হাজার, ৯ হাজার করে পরীক্ষা করতে শুরু করেছি। কয়েক দিনের মধ্যে পরীক্ষা ১০ হাজারে উন্নীত হবে বলে আশা করছি।

 

করোনা পরীক্ষাকারী ৪৩টি প্রতিষ্ঠানের নাম

 

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে নভেল করোনাভাইরাস পরীক্ষা হচ্ছে ৪৩টি প্রতিষ্ঠানে। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ২২টি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো – আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজি ও সিএমএইচ, বিএসএমএমইউ, চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, আইসিডিডিআরবি, আইদেশী, এনপিএমএল-আইপিএইচ, আইইডিসিআর, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার, মুগদা মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, এভারকেয়ার হাসপাতাল, স্কয়ার হাসপাতাল, প্রাভা হেলথ বাংলাদেশ লিমিটেড, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেড।

 

ঢাকার বাইরে কভিড-১৯ পরীক্ষা করা হচ্ছে ২১টি প্রতিষ্ঠানে। এগুলো হলো বিআইটিআইডি, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ। নোয়াখালীতে আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এর বাইরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, জামালপুরে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুরে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ, সিলেটে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, খুলনা মেডিকেল কলেজ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ, শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ, নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল এবং রূপগঞ্জে গাজী কভিড-১৯ পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে

সর্বশেষ আপডেটঃ ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ | মে ২২, ২০২০