শেরপুরের ভিক্ষুক বিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন: প্রধানমন্ত্রী
লোক লোকান্তরঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শেরপুরের সেই ভিক্ষুক সারাবিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’ মূলত ভিক্ষার জমানো টাকা দিয়ে করোনা তহবিলে সহায়তা করে আলোচনায় আসা শেরপুরের ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের প্রশংসা করেছেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ সোমবার করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও সংকট মোকাবিলার কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। সারাদেশে পর্যায়ক্রমে এ মতবিনিময়ের এবারের ধাপে রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।
ভিডিও কনফারেন্স শুরু হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে কৃষিখাতে উৎপাদন বৃদ্ধির প্রসঙ্গে কথা বলেন। এসময় করোনাভাইরাসের কারণে অনেক খামারি তাদের গরুর বিক্রি করতে পারছেন না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি, যেহেতু হোটেল, দোকান-পাট বন্ধ, তাই দুধ বিক্রি হচ্ছে না। আপনারা অল্প দামে সেগুলো সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করে দেন, সবাই খেতে থাকুক। অথবা আপনারা দুধ দিয়ে ঘি কিংবা অন্যান্য যা উৎপাদন করা যায় করতে পারেন; যা অনেকদিন থাকবে। ফেলে না দিয়ে সেগুলো কাজে লাগাতে পারেন। সেগুলো বিলিয়ে দিলেও কাজে লাগে, অনেকে দিচ্ছেন সেজন্য তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই।’
এসময় তিনি ওই ভিক্ষুকের দৃষ্টান্তের কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন সাধারণ মানুষ, একসময় কৃষি কাজ করতো। পরে কোন কারণে তার পা ভেঙ্গে যায়, পরে তিনি ভিক্ষা করে জীবন নির্বাহ করতেন। ভিক্ষা করে করে সে মাত্র ১০ হাজার টাকা জমিয়েছিলো। তার ঘরটা ঠিক করার জন্য। তার পরনে একটা মাত্র ছেঁড়া জামা। তার খাবারও ঘরে ঠিক মতো নেই। কিন্তু তারপরও সে মানুষটা তার জমানো দশটি হাজার টাকা করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার জন্য তিনি তুলে দিয়েছেন। আমি মনে করি, সারাবিশ্বে একটা মহৎ দৃষ্টান্ত তিনি সৃষ্টি করেছেন।
তিনি ওই ভিক্ষুকের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘এত বড় মানবিক গুণ আমাদের অনেক বিত্তশালীদের মাঝেও দেখা যায় না। একজন নিঃস মানুষ, যার কাছে ওই টাকাটা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই টাকা দিয়ে তিনি আরো দুটা জামা কিনতে পারতেন, ঘরে আরো খাবার কিনতে পারতেন কিংবা করোনাভাইরাসের কারণে যে অসুবিধা তার জন্যও অনেক কিছু করতে পারতেন। কিন্তু এসব চিন্তা করেননি, এ অবস্থা তার ভিক্ষাও বন্ধ, তারপরও তিনি তার শেষ সম্বলটুকু দান করে গেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী ভিক্ষুকের এ উদ্যোগকে ‘মহৎ মানবিকতা’ উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এখনো মানবিকতা বোধ আছে। কিন্তু সেটা আমরা পাই অসহাদের কাছে। অনেক সময় দেখি, আমাদের অনেক বিত্তশালী হায়-হুতাশ করে বেড়ান। অনেক সময় তাদের নাই নাই অভ্যাসটা যায় না। তাদের ওই চাই-চাই ভাবটাও থেকে যায়। শেরপুরের নাজিম উদ্দিন যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ এপ্রিল শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রামের নাজিম উদ্দিন নামের এক ভিক্ষুক ইউএনওর মাধ্যমে তার দুই বছরের জমানো ১০ হাজার টাকা ত্রাণ তহবিলে জমা দেন। নিজের ভাঙা বসতঘর মেরামত করার জন্য ভিক্ষা করে ওই টাকা তিনি জমিয়েছিলেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হয়। সেদিন রাতেই মহৎপ্রাণ ওই ব্যক্তিকে পাকা বাড়ি করে দেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাকে সংবর্ধনা দিয়ে একটি দোকান করে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।