| বিকাল ৪:৫৪ - শনিবার - ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২৪শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

আজ ঐতিহাসিক তেলিখালী যুদ্ধ দিবস

আনছারুল হক রাসেল, হালুয়াঘাট:   আজ ৩ নভেম্বর ঐতিহাসিক তেলিখালী যুদ্ধ দিবস। ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের পাদদেশে ছায়াঘেরা সবুজ শ্যামলিমায় একটি উপজেলা হালুয়াঘাট। ঐতিহ্যবাহী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই “তেলিখালী” গ্রামটি অবস্থিত। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের এক ঐতিহাসিক রণাঙ্গণ।

 

আজ থেকে প্রায় ৪৩ বছর পূর্বে এই দিনে তেলিখালী রণাঙ্গণ হয়ে উঠেছিল রক্তাক্ত প্রান্তর। মরণপণ স্বসস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে তেলিখালী জয় করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। পতন হয়েছিল হানাদার বাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটির। মুক্তিযুদ্ধের এই বিজয়ের মাধ্যমে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের পথে অগ্রযাত্রার এক পদক্ষেপ সূচিত হয়েছিল।

 

আর এই অগ্রযাত্রায় বুকের তাজা রক্ত ঝড়িয়ে দিয়ে আত্মত্যাগ করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর ২৮ জন গর্বিত সন্তান । বিনিময়ে ২ প্লাটুন পাক বাহিনী ধ্বংস হয়েছিল। ৭১ এর ৩ নভেম্বর তেলিখালীতে সেইদিন হানাদার বাহিনীর শক্তিশালী ক্যাম্পের শত্রুসেনাদের লাশের পাহাড়ে পরিনত হয়েছিল। উড়েছিল স্বাধীনতার পতাকা। আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয়েছিল “জয়বাংলা”।

 

সীমান্ত এলাকায় হানাদার বাহিনীর শক্তিশালী দূর্গ সেদিন ভয়ংকর মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছিল। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা সাব-সেক্টরের বিপরীতে তেলিখালীর তদানীন্তন ই পি আর ক্যাম্পে পাক বাহিনীর ৩৩ পাঞ্জাব রেজিঃ মেন্টের ২ প্লাটুন সেনা, ভারী অস্ত্রসস্ত্র ও ১ প্লাটুন রাজাকার বাহিনী মোতায়েন করে শক্তিশালী করা হয়েছিল। মুক্তি বাহিনীর অগ্রাভিযানের সামনে এটিই ছিল এই অঞ্চলের বড় বাঁধা।

 

সিদ্ধান্ত হয় পাক হানাদার বাহিনীর তেলিখালী ক্যাম্প দখল করার। বিভিন্ন মহড়া ও প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তিযোদ্ধা গেরিলার দল, মারাঠা ব্যাটালিয়নের এক ব্যাটালিয়নের মিত্র বাহিনী সন্মুখ যুদ্ধে তেলিখালী আক্রমন। তেলিখালী যুদ্ধ ছিল নীরব আক্রমণের একটি যুদ্ধ। মুল পরিকল্পনায় সিদ্ধান্ত ছিল ২ নভেম্বর শত্রু শিবিরে হানা দেওয়া হবে।

 

তখন মাসটি ছিল রমজান মাস। সেহরীর পর বিভিন্ন ফরমেশানে অতর্কিত আক্রমণ করে ক্যাম্প দখল করার শপথ নিয়ে মিত্র বাহিনীর সহায়তায় মুক্তি সেনারা সীমান্ত আক্রমণ করে তেলিখালী এলাকা ঘেরাও করে।

 

শেওয়াল নদীর অববাহিকায় আচকিপাড়া, ধোপাজুড়ি, জামগড়া সহ আশপাশের গ্রামে অবস্থান নেয় মুক্তি সেনারা। সূর্যদয়ের পূর্বেই ঘেরাও পর্ব সম্পন্ন হয়। দিনের আলো ষ্পষ্ট হয়ে উঠার আগেই নির্দেশ আসে শত্রুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার। সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে গিয়ে মুক্তি সেনারা নিশ্চিহ্ন করে দেয় ২ প্লাটুন হানাদার বাহিনীকে। ওদের মাত্র ১ জন সেনা জীবিত ছিল। তেলিখালী রণাঙ্গণে শহীদ হয়েছিলেন ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা।

 

এরা হলেন সরিষাবাড়ীর শওকত আলী, হালুয়াঘাটের মোঃ আক্তার হোসেন, ফুলপুরের মোঃ হযরত আলী, ময়মনসিংহ সদরের মোঃ আলা উদ্দিন, মোঃ শাহ্ জাহান, শ্রী রঞ্জিত গুপ্ত, নোয়াখালীর মোঃ ওয়াজী উল্লাহ। ঐতিহাসিক তেলিখালী যুদ্ধে পাক বাহিনীর নিহত ক্ষত বিক্ষত গলিত লাশ কবরস্থ করা হয়।

 

তেলিখালী রণাঙ্গণে শহীদদের স্মরণে ঐতিহাসিক যুদ্ধকে বুকে ধারণ করার জন্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রকৃত ইতিহাস ধরে রাখার লক্ষ্যে হিতৈষী মুক্তিযোদ্ধা নেতৃত্বদানকারী মুক্তিযোদ্ধা জনতার একান্ত পৃষ্ঠপোষকতায় একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ | নভেম্বর ০৩, ২০১৮