| সকাল ৬:০৩ - রবিবার - ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ৩রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

আন্ত:প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা

ময়মনসিংহে পঞ্চম শ্রেণীর গণিত প্রশ্নে ১০৭টি ভুল !

সাজ্জাতুল ইসলাম সাজ্জাত, গৌরীপুর থেকে:   ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উদাসিনতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় শুধু পঞ্চম শ্রেণীর গণিত প্রশ্নেই ১০৭টি ভুল ধরা পড়েছে।

 

এ নিয়ে শিক্ষক-অভিবাবক ও কর্মকর্তাদের মাঝে তোলপাড় শুরু হলে গতকাল রোববার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোফাজ্জল হোসেন এর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি তদন্ত টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন।

 

উক্ত তদন্ত টিম দিনভর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে প্রশ্নের সমস্যা নিয়ে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে মিটিং করেন। শুধু গণিতে নয়, সকল বিষয়ের প্রশ্নেই ভুলে ভরা ছিল । এমন ভুল প্রশ্নেই ৬ আগষ্ট থেকে শুরু হয়ে ১৪ আগষ্ট শেষ হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা।

 

জানা গেছে, উপজেলার ১৭৭টি সরকারি ও ৪টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত প্রায় ৪২ হাজার ছাত্রছাত্রী আন্ত:প্রাথমিকের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে। ১০০ নাম্বারের পঞ্চম শ্রেণীর গণিত বিষয়ের প্রশ্নে ১নং ক্রমিক থেকে ১১নং ক্রমিকে এই ১০৭টি ভুল ধরা পড়ে।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবরা জানান, পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক গণিত বিষয়ের প্রশ্নপত্রে ১নং প্রশ্নের ‘ড’ ক্রমিকে প্রশ্ন করা হয়েছে ‘১৫ মিনিট সমান কত সে.মি?’ কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের কাছে এটি একটি আজব প্রশ্ন; যার উত্তর কারও জানা নেই। সব প্রশ্নের মানবণ্টন নেই। খ ক্রমিক প্রশ্ন অসম্পূর্ণ বাক্য। ১নং এর ঘ, ঢ, থ, ৪নং এর ক, ৫নং এর খ, ৬ এর ক, অথবা’র ক, ৮ এর গ, ১০নং ও ১০নং এর ক, অথবা’র ক, ১১নং এর খ ও গ ক্রমিকে ‘দাঁড়ি’ এর স্থলে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে। জ্যামিতির ৬নং ক্রমিকে ১২ সেন্টিমিটারের চেয়ে ১০ সেন্টিমিটারের বাহু অঙ্কন করা হয়েছে দীর্ঘ। অঙ্কন সঠিক হয়নি, তথ্যও অস্পষ্ট। র’র আধিক্য বেশি। ভুল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে শ্রেণি, গনিত, ব্যবহৃার, শত্যব্দী, চাকুরী জীবী, মিটারে, ডে.সি এ, ডে.সি মি, তেমার, রূপান্তার, টায়ং, আধিবর্ষ, জম্ম, মিটির, ফেব্রুয়ারী, পৌছে, ম্যচের, সামান্তরীক।

 

১১নং সারণিতে চিত্রাঙ্কন আঁকাবাঁকা, সারণি শিক্ষার্থী ও ওজনের অংশে তথ্যবিভ্রাট রয়েছে। বানান ভুলে বদলে গেছে বাক্যে শব্দের অর্থও। যেমন আয়তের স্থলে আয়েতের, তাদের স্থলে তাদেরও, গাড়িটির স্থলে গাড়ি টি, টাকার স্থলে টাকায়, উচ্চতা এর স্থলে উচ্চতার, হতে এর স্থলে হাত, সংখ্যা এর স্থলে সংখ্যা, বোর্ড এর স্থলে বোর্ডেও, ব্যাসার্ধ এর স্থলে ব্যাসার্ধেও, সকাল এর স্থলে সকলে। পঞ্চম শ্রেণি ও তৃতীয় শ্রেণির ইংরেজি প্রশ্নেও ভুলের ছড়াছড়ি।

 

এ প্রসঙ্গে লেখক প্রাবন্ধিক রণজিৎ কর বলেন, ছাত্রছাত্রীদের মান যাচাইয়ের আগে প্রশ্ন প্রণয়নে জড়িতদের মান যাচাই আবশ্যক।

 

এমন ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা গ্রহণ প্রসঙ্গে গাঁওগৌরীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আরফান আলী জানান, সব প্রশ্নে ছোটবড় অনেক ভুল আছে, সেগুলো কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

জাগরণী পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শঙ্কর চন্দ্র চাকী বলেন, ভুল ছিল। যেগুলো সম্ভব তাৎক্ষণিক সংশোধন করে দিয়েছি। যেসব প্রশ্নে বাক্য অসম্পূর্ণ ছিল বা প্রশ্ন হয়নি, সে ক্ষেত্রে নতুন প্রশ্ন দেয়া হয়েছে।

 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রশ্ন কমিটির সভাপতি মো: শফিকুল ইসলাম খান বলেন, প্রশ্নপত্র প্রয়ণের একটি কমিটি আছে। তারাই প্রশ্নপত্র প্রনয়ণ করেছেন। তবে ভুল হয়েছে এ কথা কেউ বলেনি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেব।

 

এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোফাজ্জাল হোসেন প্রশ্নে ভুলের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে আপাদত তিনি কিছু বলতে নারাজ।

 

ছবিঃ লোক লোকান্তর

সর্বশেষ আপডেটঃ ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ | আগস্ট ২০, ২০১৮