| রাত ৪:২৫ - রবিবার - ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২৫শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

দেশে ফিরে সৌদি আরবের নির্যাতনের কথা জানলো ময়মনসিংহের মাজেদা

লোক লোকান্তরঃ  দেশে পৌঁছেছেন ভাগ্য ফেরাতে সৌদি আরবে গিয়ে নির্যাতনের শিকার ৫ নারী শ্রমিক। ফিরে আসা পাঁচ নারী শ্রমিকের একজন ময়মনসিংহের ফুলপুরের মাজেদা। অন্যরা হলেন ঢাকার লালবাগের সুমাইয়া কাজল, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর পিংকি, ভোলার রিনা ও নওগাঁর সুখী।

 

শুক্রবার (১৮ মে) রাত ১১টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তারা।

 

সৌদি আরবে গিয়ে নির্যাতনের শিকার মাজেদাসহ অন্যরা জানান তাদের উপর হয়ে যাওয়া নির্যাতনের কথা। গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরব যাওয়া ওই নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের দাম্মামের খোবার এলাকার একটি ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়।

 

সৌদি আরব যাওয়ার পর জানতো না কোথায় সে কাজ করছে। বাসার মালিকের নামও জানা ছিল না তাদের। প্রতিদিন বাসা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করতে হতো তাদের। প্রতিটি তলার ১০টি বড় বড় রুম ছিল। এমনকি ছাদও পরিষ্কার করতে হতো প্রতিদিন।

 

তারা জানান, ‘সকালে উঠে থালা-বাসন পরিষ্কার করতাম। এরপর সারাদিন পানি দিয়ে ঘর-বাড়ি পরিষ্কার করতে করতে পুরো শরীর ভিজে যেতো। শুকনা কাপড় পরারও সময় পেতাম না। রাতে ভেজা কাপড়েই ঘুমিয়ে পড়তাম, টের পেতাম না।

 

সকালে ওঠার পর বুঝতাম গায়ের কাপড় ভেজা ছিল। পরের দিন আবার একই কাজ। এত কাজের বিনিময়ে সকালে একটা আর রাতে একটা রুটি খেতে দিতো। হাতে-পায়ে ধরে ভাত চাইলেও দিত না। ওরা অনেক ভালো-মন্দ খাবার খেতো, আমাদের দিতো একটা রুটি। আমাদের মতো কেউ যেনও আর সৌদি আরব না যায়।’

 

পিংকি বলেন, ‘কয়েকদিন কাজ করার পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি ক্যাম্প। নোংরা আর প্রচণ্ড গরমে থাকতে হয়েছে সেখানে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম রোজার দিন (বৃহস্পতিবার) রাতে একটা রুটি দিয়েছিল খেতে। আমরা ৯ জন মেয়ে মিলে তাদের ভাত দেওয়ার অনুরোধ করার পর সেহরিতে ভাত দেয়। আলু আর পেঁয়াজের পাতার ভাজি দিয়ে ভাত খেয়েছি। ইফতার করেছি এক গ্লাস পানি দিয়ে। দুই ঘণ্টার পর ভাত দিয়েছে আলু আর পেঁয়াজ পাতার ভাজি দিয়ে।’

 

বিমানবন্দরে মেয়েকে নিতে আসা পিংকির বাবা বাবুল সাজি বলেন,  ‘আমার মেয়ের নাম শিউলী আক্তার পিংকি। ওর বয়স এখন ১৮ বছর। কিন্তু ২৬ বছর দেখিয়ে ওর পাসপোর্ট করা হয়েছে। এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র হয়নি আমার মেয়ের।

 

পিংকি চেয়েছিল, বেশি টাকা আয় হলে ছোট ভাইবোন দু’টির লেখাপড়া করবে। কিন্তু তাকেই হারানোর অবস্থা হয়েছিল। তাকে ফিরে পেয়েছি। আপনার দোয়া করবেন আমার মেয়ের জন্য।’

 

বাবুল সাজি জানান, প্রতিবেশী বাতেনের মাধ্যমে আল মনসুর ওভারসিস অ্যান্ড ট্রাভেলসকে ৪৫ হাজার টাকা দিয়েছি। মেয়ের আয় থেকে বাকি ৫৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে।

 

ছবিঃ প্রতীকী

সর্বশেষ আপডেটঃ ৭:৪০ অপরাহ্ণ | মে ১৯, ২০১৮