| বিকাল ৩:২৫ - রবিবার - ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২৫শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

স্বপ্ন পূরনে এক ধাপ এগিয়ে গেল ওরা

হামাগুড়ি দিয়ে এসএসসি দেয়া ময়মনসিংহের সেই হেলেনা ও রায়হানের ভাল ফলাফল

আজহারুল হক, ময়মনসিংহঃ   জন্মগতভাবে দুই পা অচল। তবু দমে যায়নি হেলেনা খাতুনের স্বপ্ন। বুকভরা দম নিয়ে দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে নেমে পড়ে মাঠে। কখনো হামাগুড়ি দিয়ে আবার কখনো মায়ের সহযোগিতায় হুইল চেয়ারে চড়ে নিয়মিত স্কুলের ক্লাস করেছে।

 

সে সুফলও সে পেয়েছে। এ বছর গফরগাঁও উপজেলার ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে মাড়িয়ে হেলেনা খাতুন জিপিএ-৪.৮৯ পেয়েছে।

 

অপর দিকে জীবনে ঝড়ঝাপটা, চরম দারিদ্রতা, আর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি রায়হানের সামনে। পড়াশোনায় প্রডন্ড ঝোক আর অদম্য ইচ্ছা শক্তির জোরে সকল প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ঠেলে এবার এসএসসির ফলাফলে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে।

 

জন্ম থেকে বাম পা হাটুর নিচ থেকে না থাকা এ শিক্ষার্থী এবার আঠারদানা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২.৮৯ পেয়েছে। তার বন্ধুরা যখন ফলাফলের জন্য বিদ্যালয়ে অপেক্ষা করছিল তখনো সে রিকসা চালাচ্ছিল।

সে জানায় বৃদ্ধ বাবা-মায়ের চিকিৎসা ও সংসারের খরচ জোগাতে সে সকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত ব্যাটারী চালিত অটো রিকসা চালিয়েছে। সে কারনে খুব ভাল ফলাফল করতে পারেনি। প্রতিবনন্ধী রায়হান আঠারদানা গ্রামের বেলাল উদ্দিনের ছেলে।

 

হেলেনা তার বাড়ি গফরাগাঁও উপজেলার ঘাগড়া গ্রামে। আর দশটা শিশুর মতো সে হাঁটতে পারে না। হেলেনার মনে কষ্টের পাহাড়। সে সহপাঠীদের সঙ্গে একসঙ্গে হেঁটে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে পারেনি। দৌড়াতে পারে না। খেলতে পারে না। তার অন্য সব সহপাঠীরা যখন স্কুল মাঠে খেলা করে, সে তখন চেয়ে চেয়ে দেখে। তার চোখের কোণে তখন বিন্দু বিন্দু নোনাপানি এসে জমা হয়। তবু সে দমেনি।

 

হেলেনা জানায়, ছোট বেলায় থেকেই তার পা দুটি অচল। বড় হওয়ার পরও শক্তি ফিরে আসেনি পায়ে। স্কুলের যাওয়ার তীব্র ইচ্ছা ছিল ছোট বেলা থেকেই। শারীরিক অক্ষামতার জন্য পরিবার-স্বজন ও প্রতিবেশিরা তার পড়াশোনা নিয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করলেও হেলেনার কখনো মনে হয়নি সে পারবেনা।

 

বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে স্কুল। শুরুর দিকে মাফজিলা খাতুন কোলে কওে নিয়ে যেতেন। একটু বড় হওয়ার পর হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেয় পরিবার। হুইল চেয়াওে কওে একা একা স্কুলে যাওয়ার বায়না করলেও মা কখনো একা ছাড়েনি। হুইল চেয়ারের হাতলে সব সময় থাকতো মায়ের হাত।

হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হলেও দ্রুততার সঙ্গেই সকল কাজ করতে পারে সে। অনেকেই তাকিয়ে দেখে অদম্য হেলেনার মনের জোর। সদা হাস্য উজ্জ্বল মুখ হেলেনার। নিজের জীবনের স্বপ্ন কি জানতে চাইলে অনেক মুখেটিপে হেসে হেসে বলে, ভবষ্যতে উচ্চ শিক্ষা নিতে চাই।

 

আর হেলেনার মা ফজিলা খাতুনের স্বপ্ন তার মেয়ে একদনি ডাক্তার হবে। আবার মায়ের শঙ্কাও হয়। প্রায় দুই বছর আগে মারা গেছেন হেলেনার বাবা। ছয় ভাই-বোনের সংসারে হেলেনার স্বপ্নপূরণের পথে কোন বাধা আসে কিনা- এই শঙ্কা মায়ের মনে।

 

হেলেনার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন বলেন, জেএসসি সে জিপিএ ৪. ৮৫ পেয়েছিল। এসএসসিতে ৪.৮৯ পেয়েছে। আমার বিশ্বাস হেলেনা একদিন শিক্ষক ও তার মায়ের স্বপ্ন পূরনে সক্ষম হবে।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. শামীম রহমান বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন অদম্য মেধাবী হেলেনাকে দেখে মনে হয়েছে উচ্চ শিক্ষায় প্রতিবন্ধীকতা দেয়াল হয়ে দাড়াতে পারবেনা। প্রতিবন্ধীকতাকে জয় করে সে ভাল ফলাফল করছে।

 

অপরদিকে নিত্য অভাবের মধ্যেও জীবন সংগ্রামী অদম্য রায়হানের ফলাফল অবশ্যই প্রসংশনীয়। যা অন্য সকল শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকরনীয়। উচ্চ শিক্ষায় এদের যেন কোন সমস্যা না হয় সে জন্য সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

 

ছবিঃ লোক লোকান্তর

সর্বশেষ আপডেটঃ ৮:৩৪ অপরাহ্ণ | মে ০৬, ২০১৮