| সকাল ৯:৪০ - সোমবার - ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ময়মনসিংহে ‘কবি আবদুল হাই মাশরেকী’র জন্মশতবার্ষিকীতে লোকজ মেলা ও কবি সম্মেলন

আজহারুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ থেকে ফিরেঃ  ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ‘কবি আবদুল হাই মাশরেকী’র জন্মশতবার্ষিকীতে লোকজ মেলা ও কবি সম্মেলন-২০১৮ শুরু হয়েছে। ২১ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন তিন পর্বে এ আয়োজন চলবে।

 

‘ আল্লা মেঘ দে পানি দে ছায়া দেরে তুই ‘ ‘ থাকতে পারঘাটাতে তুমি পারের নাইয়া ” আমায় এতো রাতে কেনে ডাক দিলি ” আমার কাঙ্খের কলসী জলে গিয়াছে ভাসী ” তুমি দাও দেখা দরদী ” আমার হার কালা করলাম রে ” মাঝি বাইয়া যাও রে ‘ কিংবা রূপবান সিনেমা/যাত্রার সেই সাড়া জাগানো গান,’ সাগর কুলের নাইয়া রে অপর বেলা ‘-;–ইত্যাদি বহু গান ও উল্লেখযোগ্য কবিতার মধ্যে-‘ এই বীভৎস হানাহানি আর-/ এই মৃত্যুকে স্বীকার করিনি কভূ/ মানুষেরপথ’,/ তবু তো রক্তে ভিজে গেল রাজপথ’, হে আমার দেশ হৃদয়ের প্রেম দিয়ে তোমাকে তো ভালবাসি হে আমার দেশ’, এই তো পেয়েছি মাকে/ বাড়ির সামনে তার নতুন কবর/ ’বধ্যভূমি ঘুরে ঘুরে –।

 

গান ,কবিতা ছাড়াও দুখু মিয়ার জারি, হযরত আবু বকর (রাঃ) পুঁথি সাহিত্যেরও লেখক ছিলেন এ কবি। এদেশের খেটে খাওয়া মানুষের জীবন জাগরণের রূপকার, মাটি ও মানুষের কবি আবদুল হাই মাশরেকীর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে মাশরেকী লোকজ মেলা ও কবি সম্মেলন-২০১৮এই তিন দিনের আয়োজনের সমাপ্তি ঘটবে সোমবার রাতে।

 

শনিবার( ২১ এপিল) সকালে ২১,২২ ও ২৩ এপ্রিল ৩ দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমন। পরে অনুষ্ঠানের উদ্বোধক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে শোভাযাত্রার মাধ্যমে উপজেলা সদর দত্তপাড়ায় কবির সমাধি জিয়ারত করে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

 

এ সময় কবি পুত্র নোমান মাশরেকী,নাঈম মাশরেকী,শামিম মাশরেকী, মামুন মাশরেকীসহ কবি পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে আবার শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা পরিষদ ডাক বাংলোতে গিয়ে শেষ হয়।

 

১৯১৯ সালের ১ এপ্রিল কবি আবদুল হাই মাশরেকী ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জে মাতুতালয়ে কাঁকন হাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৮ সালে ৪ ডিসেম্বর কবি নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। কর্ম জীবনের শুরুতে স্থানীয় চরনিখলা স্কুলে শিক্ষকতা,কলকাতার এইচএমবি’তে গান রচনার চাকরি,১৯৪৬ সালে কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময়ে পূর্ববঙ্গে চলে এসে ঢাকার এইচএমবি’তে গান রচনার চাকরি নেন। এরপর সহ-সম্পাদক হিসেবে দৈনিক আজাদ,দৈনিক সংবাদ,দৈনিক বাংলা, পরবর্তীতে কৃষি মন্ত্রনালয়ের ‘কৃষিকথা’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৭৬ সালে অবসরে যান।

 

মাটি ও মানুষের এ কবি’র জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে ‘কবি আবদুল হাই মাশরেকী জন্মশতবার্ষিকী উৎযাপন কমিটির উদ্যোগে শনিবার ২১ এপ্রিল থেকে সোমবার ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঈশ্বরগঞ্জে তাঁর জীবন জীবন-দর্শন সাহিত্য কর্ম নিয়ে আলোচনা করবেন দেশের কবি -সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীগণ। তিনদিনব্যাপী ‘মাশরেকী লোকজ মেলা’য় অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হবে কবির রচিত কবিতা আবৃত্তি, কাব্যনৃত্য, পালানৃত্য, আধুনিক ও পল্লীগীতি, ও ‘স্বাধীনতার জারী’।কবির লেখা নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ ‘মাশরেকী লোকজ মেলা ও কবি সম্মেলন’ করবে উদ্যাপন কমিটি। এ ছাড়াও কবি আবদুল হাই মাশরেকী জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনকে ঘিরে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে, কবির কাব্যগ্রন্থ, গল্পগ্রন্থ, সঙ্গীতগ্রন্থ ও সিডি।

 

শনিবার( ২১ এপিল) দুপুরে কবি সোহরাব পাশার সভাপতিত্বে স্থানীয় ডাকবাংলা চত্বরের এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক ড.সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এলিশ শরমিন, পৌর সভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছাত্তার, উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বুলবুল বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কবি আলম মাহবুব , ওসি বদরুল আলম খান, মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হলুদ প্রমুখ।

 

শনিবার বিকেলে দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠানের কবি সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, বিশেষ অতিথি কবি নাসির আহম্মেদ পরিচালক (বার্তা বাংলাদেশ টেলিভিশন), জাতীয় কবিতা পরিষদের সহ-সভাপতি কবি আসলাম সানী ছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদের সভাপতি ছড়াকার এম আর মনজু , বাংলা একাডেমির সদস্য কবি ইয়াদী মাহমুদ, সম্প্রীতি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ আবুল হোসেন , কন্ঠ শিল্পী ও সাংবাদিক (এটিনবাংলা) আতাউর রহমান,কবি কবির সোহেল, সুরকার ও গীতিকার মিতু মোর্শেদ। অনুষ্ঠানটির সঞ্চলনায় ছিলেন আউলাদ হোসেন জসীম।

 

তৃতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত শিল্পী মিন্টু দেবনাথের সভাপতিত্বে ঢাকা,নারায়নগঞ্জ,ও স্থানীয় শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করে দর্শক শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন।

 

৩ দিনব্যাপী উৎসবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উদীয়মান কবি, সাহিত্যিক ও সুধী সমাবেশ ও স্বরচিত কবিতা পাঠ, মাশরেকীর সাহিত্যকর্ম নিয়ে সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন রয়েছে। সোমবার রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উৎসব সমাপ্ত হবে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ | এপ্রিল ২২, ২০১৮