| দুপুর ১২:২৯ - বৃহস্পতিবার - ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বেগুনী রংয়ের ‘দুলালী সুন্দরী’ ধানক্ষেত

লোক লোকান্তরঃ  গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে একটি জমির বোরো ধান গাছের রং বেগুনী রংয়ের হওয়ায় এলাকায় চমক ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন এ ক্ষেত দেখতে দুর- দুরান্তের অসংখ্য লোক ভীর জমাচ্ছেন।

 

এই ক্ষেতের চাষী মিসেস দুলালী বেগম। তিনি রামজীবন আইপিএম কৃষি ক্লাবের কোষাধ্যক্ষক ও ভবানীপুর গ্রামের মৃত সুরুজ্জামানের স্ত্রী। তিনি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে প্রায় ১৮ শতাংশ জমিতে এই ধান চাষ করেছেন।

 

ধানের বীজ কোথায় পেলেন এই প্রশ্নের উত্তরে মিসেস দুলালী বলেন কোন চাওয়া-পাওয়া ছাড়াই গত বছর বোরো ২৮ ধানের ক্ষেতে বেগুনী রংয়ের ১৫/ ২০ টি গোঁছা আবাদ হয়েছিল। সেই গোছাগুলি তিনি আলাদা ভাবে কেটে সংরক্ষণ করেন এবং ধানের ভিন্নতা দেখে কৌতুহলবশত এ বছর আবাদ করেছেন।

 

সুন্দরগঞ্জে এই প্রথম বেগুনী রংয়ের ধান চাষ এবং চাষীর নাম দুলালী হওয়ায় এ ধানের নাম দেয়া হয়েছে ‘দুলালী সুন্দরী’।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, ধানের শীষ সাধারন উফশী ধানের মতই। পার্শবতী উফশী ধানের গোঁছায় ২০/২১ টি করে কুশি হলেও বেগুনী রংয়ের ধান ক্ষেতে গড়ে ২৫/২৬ টি করে কুশি প্রতি গোঁছায় রয়েছে। তাই বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

 

ধানগাছ গুলো পুরোপুরি বেগুনী রংয়ের। তবে নীল রংয়ের আভাও আছে। বেগুনী রংয়ের দুলালী সুন্দরী ধান চাষের খবর পেয়ে প্রতিদিন দুর-দুরান্তের অসংখ্য লোক দেখার জন্য ভীর জমাচ্ছেন। এরইমধ্যে প্রচার হয়েছে বেগুনী রংয়ের ধানগাছের পাতা খেলে ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ ভালো হয়।

তাই অনেক দর্শক গোপনে দুলালী সুন্দরীর পাতা ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। পার্শবতী সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা গ্রামের গৃহবধু রহিমা বেগম বলেন লোক মুখে শুনে তিনি ধান ক্ষেত দেখতে এসেছেন। পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর গ্রামের কৃষক হয়রত আলী জানালেন জন্মের পর শুনিনি বেগুনী রংয়ের ধান গাছ হয়, তাই দেখতে এসেছি। অনেক দর্শক অন্যকে দেখানোর জন্যও পাতা ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাই ধান ক্ষেতটি পাহারা দিয়ে রক্ষা করা দরকার।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাশেদুল ইসলাম জানান, এ ধানের জীবনকাল অন্যান্য উফশী ধানের মতই হতে পারে। এজন্য চাষী দুলালীকে সব ধরণের পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে এবং সবটুকু ধান বীজ হিসেবে সংগ্রহে রাখার জন্য পাত্র প্রদান করা হয়েছে।

 

রাশেদুল ইসলাম আরো জানান, আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত মাত্রার এন্থোসায়ানিন ও এন্টিঅক্সিডেন্টের কারণে ধানের রং বেগুনী হয়। ব্লুবেরির চেয়েও এই ধানে এন্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশী। বার্ধক্য প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর।

 

এ ধানে প্রচুর ফাইবার ও ভিটামিন ই রয়েছে। নিয়মিত এ ধানের ভাত খেলে ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুকি হ্রাস পায়। তাছাড়া ডায়াবেটিস ও অ্যালজাইমার রোগের ঝুকি কমাতেও এটি কার্যকর। এ ধান বাংলাদেশে চাষাবাদের তেমন নজির না থাকায় এ বিষয়ে গবেষণা করা দরকার।

 

তাই ধান ও চাল গবেষণা কেন্দ্রে পাঠানো হবে। গবেষণার ফলাফলে আমাদের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে বেগুনী রংয়ের দুলালী সুন্দরী ধান।

সর্বশেষ আপডেটঃ ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ | এপ্রিল ২০, ২০১৮