| ভোর ৫:০০ - বৃহস্পতিবার - ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

মেয়র টিটু ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে টেস্ট কেস

ফাহিম মোঃ শাকিলঃ  একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে টেস্ট কেস হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আর এই টেস্টে জয় লাভের জন্য নিজ এলাকায় জনসংযোগ বাড়িয়েছেন ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু।

 

নতুন বিভাগ হলেও ময়মনসিংহ জেলার ইতিহাস বহু পুরনো। পুরান হলেও এই আধুনিক তিলোত্তমা নগরী হিসেবে বিউটিফিকেশনের যুগে প্রবেশ করে সংস্কৃতির নগরী ময়মনসিংহকে গড়তে পৌরসভার মেয়র নির্বাচনে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের সমর্থনে ব্যালট বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে পৌর পিতার পদে আসীন হয় মেয়র টিটু। এর আগে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়র ছিলেন তিন বছর।

 

ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ একটি সুত্র জানিয়েছে সাত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাত জন মেয়র প্রার্থী হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ করেছেন। এর মাঝে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের প্রার্থী হিসাবে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র আওয়ামীলীগ নেতা মো: ইকরামুল হক টিটু রয়েছেন।

 

ময়মনসিংহ জেলার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৭৬ সালের ০১ আগস্ট জন্ম গ্রহণ করেন মো. ইকরামুল হক টিটু। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনের সূচনা হয় ময়মনসিংহ জেলা শহরের প্রি-ক্যাডেট হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে। এরপর তিনি পড়াশুনা করেন ময়মনসিংহ জিলা স্কুল এবং মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়। এরপর ভর্তি হন ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে। এই কলেজ থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক সনদ লাভ করেন এবং ১৯৯৭ সালে সম্মান-স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন।

 

পড়াশুনা জীবনের প্রতিষ্ঠানিক স্তর সমাপ্ত করার পর পরই শুরু হয় ইকরামুলের কর্মজীবন। ব্যবসাকেন্দ্রিক একের পর এক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা করেন এবং সফলতার সিঁড়ি বেয়ে প্রতিষ্ঠা অর্জন করতে থাকেন ইকরামুল হক টিটু। শামীম এন্টারপ্রাইজ (প্রা.) লিমিটেডের পরিচালক পদ থেকে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন এবং সেই শুরু থেকেই সফল, সফল থেকে সফলতম একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বর্তমান সময়ের মেয়র টিটু। ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তিনি।

(স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্র অবদান)
চিকিৎসাসেবা প্রদান করার জন্য সরকারি এবং বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটু। ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠানিকভাবে অসংখ্য-অগণিত মানুষকে সহযোগিতা করেছেন চিকিৎসাকেন্দ্রিক সেবা-সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে। দরিদ্র-দুস্থ ও গরীর রোগীদেরকে স্বল্প ব্যয়ে এবং ক্ষেত্র বিশেষ ফ্রি চিকিৎসা প্রদানের জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে এবং কখনো ব্যক্তিগত উদোগ্যে অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্পের মাধ্যমে গ্রাম্য মানুষদের স্বাস্থসেবা করেছেন তিনি।

 

ময়মনসিংহের জনমানুষের চিকিৎসাকেন্দ্রিক সহযোগিতার কথা চিন্তা করেই যুক্ত রয়েছেন ময়মনসিংহ সেবা নিকেতনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সাথে।

 

(বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিমার্ণ ও সহযোগিতা প্রদানকেন্দ্রিক অবদান)
শিক্ষার সহলভ্যতা এবং অধিকতার কথা বিবেচনায় রেখে ইকরামুল হক টিটু ময়মনসিংহ পৌরএলাকার প্রায় সব স্কুল, কলেজ, মাদরাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রমগুলোকে অগ্রাধিকার প্রদান করেছেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহে সর্বপ্রথম তাঁরই উদ্যোগে মেয়মনসিংহ পৌরসভার পক্ষ থেকে ২০১২ সালের এস. এস. সি. এবং এইচ. এস. সি. পরীক্ষায় জিপিএ ৫ প্রাপ্ত প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।

 

ধারাবাহিকভাবে ২০১৩ থেকে পর্যায়ক্রমে আরো বেশি পরিমাণ শিক্ষার্থীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এই কার্যক্রম থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

 

তিনি ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামীলীগের অন্যতম শীর্ষ নেতা। আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা তাকে ব্যক্তি ও দলের ঊর্ধ্বে দিয়েছে বিশেষ স্থান। সাধারণের সঙ্গে মিশে যাওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা তাকে করে তুলেছে তুমুল জনপ্রিয়।
বাসার ড্রয়িং রুম থেকে পৌরসভার কক্ষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের অবাধ যাতায়াত। কোনরকম বাধা নেই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতে। সমস্যা হলে মুহূর্তেই ছুটে যান। সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানও দেন।

নগরীকে পরিকল্পিতভাবে সাজানোর চেষ্টাও চালাচ্ছেন। ভোটারদের প্রতি তার কথা অনুযায়ী তিনি বলেন, আধুনিক নগরায়নের জন্য দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছি। জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। এজন্যই শুধু খুশি থাকলেই হবে না। তাদের জন্যও সব সময় কাজ করার চেষ্টা করেছি।

 

উন্নয়নের উদাহরণ মেয়র টিটু ময়মনসিংহ নগরবাসীকে প্রায় ২৬০ কোটি টাকার মতো দুই শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প উপহার দিয়েছেন। তার হাত ধরেই নতুন আদল পেয়েছে নগরীর ব্রক্ষপুত্র নদঘেষা জয়নুল উদ্যান। বিপিন পার্কও আধুনিকায়ন সৌন্দর্য্য বর্ধনের দৃষ্টান্ত।

 

জয়নুল উদ্যানে রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা, শরীরচর্চা ও শিশু বিনোদন কেন্দ্র, দুটি মঞ্চ, মহিলাদের নামাজের স্থান, পাঠাগার, পাবলিক টয়লেট, ফোয়ারা, বাগান, হাঁটার পথসহ হরেক রকমের গাছগাছালি।

 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন প্রয়াত অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম। কীর্তিমান এ রাজনীতিকের স্মরণে নগরীর টাউন হল মোড় এলাকায় প্রথম নির্মিত হয় শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্কয়ার। এ স্কয়ার নির্মাণের মধ্যে দিয়ে বিউটিফিকেশনের যুগে প্রবেশ করে ময়মনসিংহ নগরী। মেয়র টিটু তখন ছিলেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র।

এরপর নির্বাচনে ব্যালট বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে পৌর পিতার পদে আসীন হয়ে মেয়র টিটু পাটগুদাম র্যাালীর মোড়কে নামকরণ করেন বিজয় ৭১। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ মুক্ত দিবসে মুক্তিযোদ্ধা জনতার বিজয় র্যাীলির সূচনা হয়েছিল এ মোড় হয়েই। এখানেই মেয়র টিটু গড়েছেন অনুপম স্থাপত্য ভাস্কর্য। এখানে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ৪ বীর শ্রেষ্ঠের ম্যুরাল। অপরূপ টেরাকাটায় এ নান্দনিকতা মুগ্ধ করেছে স্থানীয়দের।

 

এ ভাস্কর্যের দৌলতেই কথা বলে ইতিহাস। এর মাধ্যমেই মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের বার্তা নতুন প্রজন্মে মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন এ পৌর পিতা।

ময়মনসিংহের প্রথম শহীদ মিনার স্থাপিত হয়েছিল ময়মনসিংহ পৌরসভা মোড়ে। কালের কপোলতলে এ ইতিকথা হারিয়ে যেতে বসেছিল। নান্দনিক রূপ দিয়ে তা ফিরিয়ে এনে নির্মাণ করা হচ্ছে প্রথম শহীদ মিনার স্মারক। এর নামকরণ করা হয়েছে স্মৃতি অম্লান।

 

নগরীর প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত গাঙ্গিনারপাড় মোড়। এ মোড়ের নামকরণ করা হয়েছে শাপলা স্কয়ার। গাঙ্গিনারপাড় মোড়ে প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী পানির ট্যাংকের নিচে নুড়ি পাথরের সামনে বসানো হয়েছে ঝিনুক। দুপাশে দুটি সাদা বক। নান্দনিকতার ছোঁয়ায় এ মোড়কেও বদলে দিয়েছেন মেয়র টিটু।

 

নগরীর নতুন বাজার এখন পায়রা চত্বর। এ মোড়ে বসানো হয়েছে শান্তির প্রতীক পায়রা চত্ত্বর ভাস্কর্য। নান্দনিকতার আদলে গড়া এ পায়রা চত্বরকে মেয়র টিটু উৎসর্গ করেছেন ময়মনসিংহের প্রয়াত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোতাহার হোসেন বাচ্চুকে।

 

ঐতিহ্যবাহী ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে নগরীর পুরাতন ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শিক্ষার শেকড় এবং চরপাড়া মোড় এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে টাইম স্কয়ার। রাতের চরপাড়া মোড় এ টাইমস স্কয়ারের বর্ণিল আলোচ্ছটায় হয়ে উঠছে অপরূপা।

 

ময়মনসিংহ পৌরসভার দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মেয়র টিটুর সময়ে গত ৮ বছরে ৪ হাজার বেকার পুরুষ ও মহিলাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই এর সুফল লাভ করেছে হাজার হাজার পরিবার। এ সময়টাতেই তিনি সাড়ে ১০ হাজার অসহায় ও দরিদ্র পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। শুন্য হাতে তার কাছ থেকে ফিরে আসার কোন নজির নেই এ সময়ে।

পরিচ্ছন্ন সবুজ নগরী গড়তে মেয়র গুরুত্বারোপ করেন। অপরিচ্ছন্ন শহরের বদনাম থেকে শহরটিকে বের করে আনার উদ্যোগ ফলপ্রসু হয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এ নগরীকে দেশের মডেল নগরে পরিণত করেছেন। তার হাত ধরেই ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নেও মডেল এখন সংস্কৃতির এ নগরী।

 

নগরীর প্রধান সড়কের দুই পাশের ড্রেনগুলোর উন্নয়নসহ সড়কের নিচে ১৫ টি বৃহৎ পাইপ ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া সড়কের নিচে ৬৫ কিলোমিটার পাইপ ড্রেন ও আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। এর সুফল ভোগ করছেন লাখ লাখ বাসিন্দা। যার বর্ধিত কাজ এখনও চলছে……। একই সঙ্গে নাগরিক সেবাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

 

দৃষ্টিনন্দন ও পরিকল্পিত উন্নয়নের মধ্যে দিয়ে শহর গড়ে তুলতে নিয়েছেন একের পর এক প্রয়াস। তার এসব প্রয়াস স্থানীয় জনসাধারণের মাঝেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

 

এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, শিল্পকলার বিভিন্ন উপস্থাপনার মধ্যে দিয়ে ময়মনসিংহ নগরীকে আধুনিকায়নের দিকে এগিয়ে নেয়াই আমার ভিশন। এ ভিশন বাস্তবায়নে পৌরবাসীকে আমাকে আকুন্ঠ সমর্থন যুগিয়েছেন।

 

আমি চেষ্টা করেছি বিদ্যমান নানা সঙ্কট এবং সমস্যার বেড়াজাল থেকে নগরীকে পরিকল্পিত ও আধুনিক রূপে উপহার দিতে।

 

টাইমস স্কয়ার
শহরের নান্দনিক সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়ে কাজ করেযাচ্ছে ময়মনসিংহ পৌরসভা ও মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে শহরের চরপাড়া মোড়ে পৌরসভার মেয়র ইকরামূল হক টিটুর পরিকল্পনায় ও পৌরসভার সহযোগিতায় এবং আর. এন. টি এ্যাড ফার্ম এর নির্মানে উদ্বোধন করা হয় টাইমস স্কয়ারের।

 

স্মৃতি অম্লান
ময়মনসিংহ পৌরসভা সংলগ্ন জাদুঘরের সামনে করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন স্মৃতি অম্লান চত্বর। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা নিয়ে শিল্পী হাসান মাহদী শিল্পকর্ম এই স্মৃতি অম্লান। এরই মধ্যে শহরবাসীর নজর কেড়েছে। মার্বেল পাথর আর টাইলসে মোড়ানো স্মৃতি অম্লানের ফাঁকে ফাঁকে বসানো হয়েছে শৈল্পিক টেরাকুটা।

 

শিল্পীর নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় টেরাকুটায় ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ সময়কার পটভূমির ছবি আঁকা হয়েছে নিখুঁতভাবে। এছাড়া সাত বীরশ্রেষ্ঠের প্রতিকৃতি, রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন, শৃঙ্খলিত আন্দোলনকারীর ছবি রয়েছে টেরাকুটায়। আছে বর্ণমালা আর লতাপাতাসহ প্রকৃতির ছবি। কালো রঙের দামী মার্বেল পাথরে করা সাতটি ফলকের সামনে বসানো হয়েছে তিনস্তরের ঝর্ণাধারার ফোয়ারা। রাতের এই স্মৃতি অম্লানকে আলো ঝলমলে রাখতে করা হয়েছে বর্ণাঢ্য লাইটিংয়ের ব্যবস্থা।

 

বিজয় মোড়
শহরের পাটগুদাম র্যারলি মোড়ে করা হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মারক বিজয় মোড়। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের এই স্মারকে বীর বাঙালীর বিজয়কে ফুটিয়ে তুলেছেন ভাস্কর শ্যামল সুষেন। ত্রিকোণাকৃতির ফ্রেমের ভেতর প্লাস্টার অব প্যারিস ব্যবহার করে একটি স্তম্ভের ওপর ভাস্কর্যে শৃঙ্খলিত বীর বাঙালীর অস্ত্রের মাথায় বিজয়ের লাল পতাকা মেলে ধরা হয়েছে। পাটাতনের চারপাশে রয়েছে সাত বীরশ্রেষ্ঠের ম্যুরাল। এর নিচে রয়েছে রাতের বেলায় রঙিন আলোর বিচ্ছুরণ করার ব্যবস্থা। রাতের বেলায় আলো-আঁধারির এই বিজয় মোড় পথচারীদের আকৃষ্ট করছে।

 

পায়রা চত্বর
শহরের নতুনবাজার মোড়ে ত্রিকোণাকৃতির ফ্রেমের ভেতর পাটাতন করে তাতে বসানো হয়েছে শান্তির প্রতীক পায়রা। নারীর হাতের ওপর একদল দুরন্ত পায়রার ছোটাছুটির ছবি মেলে ধরেছেন শিল্পী অনুপম সরকার। নাম দেয়া হয়েছে পায়রা চত্বর। চত্বরের ভেতরে মৃদু আলোর ব্যবস্থাপনা পুরো চত্বরকে রাতে আরও মোহনীয় করে তুলছে।

 

শিক্ষার শেকড়
শিক্ষানগরী বলে পরিচিত ময়মনসিংহ শহরের জিলাস্কুল মোড়ে করা হয়েছে শিক্ষার শেকড়। বৃত্তাকার বেষ্টনীর ভেতর ক্রংক্রিটের তৈরি কাঠের প্রাচীন মূল ও শেকড়ের ওপর বসানো হয়েছে জ্ঞানের প্রতীক মোটা বই, সঙ্গে মোমবাতি আর কালির দোয়াতের ওপর পাখির পালক।


শাপলা চত্বর
এসবের বাইরে শহরের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা গাঙিনাপাড় প্রেসক্লাব মোড়ে করা হয়েছে শাপলা চত্বর। ঐতিহ্যবাহী রাজ রাজেশ্বরী জলাধারের সামনে কৃত্রিম পানির ফোয়ারায় বক আর কচ্ছপের জলকেলি রয়েছে এই চত্বরে। রাতে এই শাপলা চত্বরে আলোর প্রতিফলন ফেলে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে। একটি বেসরকারী ব্যাংকের অর্থ সহায়তায় প্রাচীন হেরিটেজ রাজরাজেশ্বরী জলাধারকে নতুন করে রং করা হয়েছে।

 

মুক্তিযুদ্ধের স্মারক
শহরের ছোটবাজারের মুক্তমঞ্চের পাশে করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক। প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর শহরের ছোট বাজারের মুক্তমঞ্চের সভায় এই স্মারক নির্মাণের দাবি উঠেছিল।

 

সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্কয়ার
শহরের টাউনহল মোড়ে করা হয়েছে শহীদ রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্কয়ার। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহে তার স্মৃতিকে নতুন প্রজন্মের সামনে মেলে ধরতেই এই উদ্যোগ। এসবকিছুই করা হয়েছে প্রাচীন জেলা শহর ময়মনসিংহের সৌন্দর্য বর্ধনে।

 

একই সঙ্গে শহরের ঐতিহাসিক বিপিন পার্ক আধুনিকায়ন, টাউনহল নির্মাণ, পাশে ভাষাসৈনিক এম শামছুল হক মঞ্চ ও ব্রহ্মপুত্র পারের শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান ও বৈশাখী মঞ্চ করা হয়েছে শহরবাসীর বিনোদনের জন্য।

 

ময়মনসিংহ পৌরসভা কর্তৃপক্ষের দাবি এতে করে একদিকে যেমন প্রাচীন জেলা শহরটির সৌন্দর্য বেড়েছে, অন্যদিকে নতুন ও ভবিষ্যত প্রজন্ম এসব সৌন্দর্য থেকে ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ ময়মনসিংহের ইতিহাস ও আপন ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুন করে পরিচিত হতে পারবে।

 

এবিষয়ে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু বলেন, প্রত্যেকটি শহরের ঐতিহ্যের সাথে মিলিয়ে নিজস্ব ভাস্কর্য কিংবা দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা দেখে ওই শহরকে খুব সহজেই চিনে নেয় যায় তেমনি ময়মনসিংহ শহরকে আমরা আধুনিক মাত্রায় প্রবেশ করিয়েছি যেমন গাঙ্গিনার পাড় মোড়ের শাপলা স্কয়ার, নতুন বাজার মোড়ের পায়রা চত্ত্বর, টাউন হল মোড়ের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্কয়ার, পাটগুদাম র্যা লির মোড়ের বিজয় ৭১, পৌরসভা সংলগ্ন প্রথম শহীদ মিনারের স্থলে আধুনিক ভাস্কর্য, পুরাতন ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শিক্ষার শেকড় স্থাপন করা হয়েছে। বর্ণমালা চওর, জয়নুল আবেদিন সংগ্রহসালায় ব্রহ্মপুত্র নদের উপকন্ঠে ময়মনসিংহ শহরে বিনোদন পার্ক করা হয়েছে।

প্রাচীন জেলা শহর ময়মনসিংহকে আধুনিকায়ন এবং এর সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে এসব চত্বর ও ভাস্কর্য করা হয়েছে। আর তাতে মেলে ধরা হয়েছে ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ময়মনসিংহের ইতিহাস ও আপন ঐতিহ্যকে।

 

গত ২০১১ সাল থেকে শুরু করা এই সৌন্দর্য বর্ধনের প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে ২০১৪ সালের প্রথম দিকে। এসব কাজে ব্যয় হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র পারের জয়নুল আবেদীন উদ্যানেই ব্যয় হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা।

 

ময়মনসিংহ পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়ন ছাড়াও স্পনসরদের অর্থ সহায়তায় এসব সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

 

ময়মনসিংহ গেটসহ আরও বেশ কিছু সৌন্দর্য বর্ধনমূলক নির্মাণকাজ করার পরিকল্পনার কথা জানান পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটু। তিনি জানান, জনসংখ্যা অধ্যুষ্যিত ময়মনসিংহ পৌরসভাকে আধুনিকায়নসহ এর সৌন্দর্য বর্ধন করে শহরবাসীর কাছে তিলোত্তমা শহর উপহার দিতে সবধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে।

 

এসব উন্নয়ন কাজের মাধ্যমে শিক্ষানগরী ও জমিদারদের শহর বলে পরিচিত ময়মনসিংহকে পর্যটনের মতো আকর্ষণীয় করে তুলতে চান বলে জানান পৌর মেয়র।

 

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৬৯ সালে পৌরসভাটি স্থাপিত হয়। তখন এর নাম ছিল নাসিরাবাদ টাউন কমিটি। পাঁচটি গ্রাম যথা নাসিরাবাদ, কৃষ্ণপুর, সেহড়া, চরপাড়া এবং কাশর নিয়ে পৌরসভার বিস্তৃতি ছিল। যার আয়তন ছিল ২.১৫ বর্গ কিলোমিটার।

 

১৯৭৭ সালে এটি মিউনিসিপ্যাল কমিটিতে উন্নীত হয়। ১৯০৫ সালে নাসিরাবাদের পরিবর্তে ময়মনসিংহ নাম ধারণ করে এবং ১৯৩৬ সালে কৃষ্ণপুর ছাড়া বাকি চারটি গ্রাম মিলে ময়মনসিংহ শহর মৌজা গঠিত হয়। ১৯৭২ সালের ময়মনসিংহ পৌরসভা নামকরণ করা হয়। ১৯৭৮ সালে ৮.৩৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা বর্ধিত করা হয়। বর্তমানে পৌরসভার আয়তন ২১.৭৩ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা পাঁচ লক্ষাধিক।

শহরটি রাজধানী ঢাকা থেকে ১২১ কি.মি. উত্তরে প্রায় সমতল ভূমির ওপর অবস্থিত। ময়মনসিংহ শহরের উত্তর পূর্ব প্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদ।

 

মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, পৌরসভার মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হবার পর দ্রুত বর্তমান অবস্থা যাচাই ও ভবিষ্যত করণীয় সমন্ধে বিশিষ্ট নাগরিক, কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনমত বিবেচনাপূর্বক বিগত একবছরে পৌরবাসীদের উন্নততর পৌরসেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করা হয়।

 

দ্রুত জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদান, সিটিজেন চার্টার প্রকাশ ও প্রদর্শন, অভিযোগ বক্স স্থাপন, সিসিটিভি স্থাপন, ওয়েবসাইট চালুকরণ, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, অভ্যর্থনা কেন্দ্রের সেবা, পৌরসভায় ব্যাংকের বুথ স্থাপন, তথ্যসেবা কেন্দ্র চালুকরণ, অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য সেল গঠন ইত্যাদি।

 

সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের এই শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও নান্দনিক শহর হিসেবে গড়ে উঠতে সক্ষম হবে বলে আশা করেন মেয়র।

 

ময়মনসিংহ পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মেয়রের উদ্যোগ

‘ময়লা থাকবে চোখের আড়াল, দেখবো সবাই পরিস্কার সকাল’- এই স্ল্লোগান সামনে নিয়ে ময়মনসিংহ পৌরসভা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় চিরায়িত পদ্ধতি বদলে ১লা জানুয়ারি ২০১৮ রাত থেকে শুরু করেছে ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ ও অপসারণের কাজ। ঐদিন রাত ১১ টায় নতুন বাজার ও গাঙ্গিনারপাড় এলাকায় এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন পৌর মেয়র ইকরামুল হক টিটু। এ সময় পৌর কাউন্সিলর ও পৌসভার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনকালে মেয়র টিটু বলেন, পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে নতুন বছর থেকে রাত্রিকালীন ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ ও অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিদিন সকাল বেলা পৌরবাসী পরিচ্ছন্ন শহর দেখতে পারবেন এই লক্ষ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এই পরির্বতন আনা হয়েছে। তিনি পৌরবাসী সহযোগিতা কামনা করেছেন।

 

তিনি আরো বলেন, এখন থেকে যারা দিনের বেলায় শহরের রাস্তা সহ যেখানে- সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলবে তাদেরকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে।

 

প্রায় ৫ লক্ষাধিক জনসংখ্যার এই বিভাগীয় শহরে বর্তমানে ১৫০ টন এর অধিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। দিনের বেলা এসব ময়লা- আবর্জনা অপসারণ করলে দুর্গন্ধ পরিবেশ ও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে ময়লা অপসারণ বাধাগ্রস্ত হয়। বাসা বাড়ি, অফিস, বাজার ও দোকানপাটের প্রতিদিনের সৃষ্ট আবর্জনা সন্ধ্যার পর থেকে রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত আবর্জনা সংগ্রহকারীর কাছে বা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

 

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন
দেশের ১২ তম সিটি করপোরেশন হলো ময়মনসিংহ। প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার) ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে।

 

২ এপ্রিল, ২০১৮ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে (নিকার) বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সিদ্ধান্তে, ময়মনসিংহের সদর উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের মধ্যে দুটি ইউনিয়ন (বয়ড়া ও আকুয়া) সম্পূর্ণ ও ছয়টি ইউনিয়নকে (খাগদহর, চরঈশ্বরদিয়া, দাপুনিয়া, ভাবখালী, সিরতা ও চরনিলক্ষীয়ার আংশিক পল্লী এলাকা) পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত করে সিটি করপোরেশনের এরিয়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

নতুন সিটি করপোরেশনের পরিধি ৯১ দশমিক৩১৫৫ বর্গকিলোমিটার। প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৫ হাজার ১৬৭ জন। মোট জনসংখ্যা ৪ লাখ ৭১ হাজার ৮৫৮ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব, আয়ের উৎস, শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাসহ সিটি করপোরেশন হতে যে আটটি শর্ত লাগে এর সবগুলোই ময়মনসিংহে রয়েছে।

সিটি করপোরেশন ঘোষণায় আনন্দ-উল্লাস

সিটি করপোরেশন করায় ময়মনসিংহজুড়ে চলে আনন্দউল্লাস। সিটি করপোরেশন হওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রচারের পরপরই ময়মনসিংহের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষকে যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখে যায়।

 

সিটি করপোরেশন অনুমোদনের খবরটি জানার পরই ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হকের নেতৃত্বে একটি বিশাল আনন্দ মিছিল বের হয়। মিছিলে ময়মনসিংহ পৌরসভার বর্তমান কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ যোগ দেয়। মিছিল থেকে ময়মনসিংহ পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানানো হয়।

 

ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক বলেন, ময়মনসিংহবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বিভাগ করার। সেটি পূরণ হয়েছে দুই বছরে আগে। নতুন করে সিটি করপোরেশন অনুমোদন পাওয়ায় ময়মনসিংহবাসী উচ্ছ্বসিত। সিটি করপোরেশনের ফলে মানুষের নাগরিক সুবিধা বাড়বে বলে আমি আশাবাদী।

সর্বশেষ আপডেটঃ ১১:০১ অপরাহ্ণ | এপ্রিল ১১, ২০১৮