বিসিএস ক্যাডার হতে চাইলে যা করবেন
লোক লোকান্তরঃ আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার সপ্ন বেশীর ভাগ শিক্ষার্থীই। প্রতিটি মানুষ স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন মানুষকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। কেউ স্বপ্ন দেখে বড় রাজনীতিবিদ হওয়ার, আবার কেউ দেখে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কেউবা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখে।
তবে সবচেয়ে বেশি ছাত্র-ছাত্রীরা চায় সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হতে। অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের স্বপ্ন থাকে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে। আজ আমরা বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করব। যারা নতুন বিসিএস দেবেন আশা করি তাদের কাজে লাগবে।
ফরম পূরণ:
টেকনিক্যাল ক্যাডার ও বোথ ক্যাডার। যারা শুধুমাত্র টেকনিক্যাল ক্যাডার দিবেন, তাদের চয়েস একটাই। যেমন: বিসিএস(স্বাস্থ্য), রসায়ন, গণিত ইত্যাদি। আর যারা বোথ ক্যাডার দিবেন তারা প্রথমে প্রশাসন, ফরেইন, পুলিশ, ট্যাক্স ইত্যাদি দিবেন, এরপর স্বাস্থ্য/নিজের সাবজেক্ট।
ফরম পূরণের সময় স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা একই দিলে ভাল। না হয় দুই জায়গায় ভেরিফিকেশন হবে। তবে স্থায়ী ঠিকানায় বাড়ি বা জমি থাকতে হবে। স্থায়ী ঠিকানা পরে পরিবর্তনের সুযোগ নাই।
নাম, বাবার নাম, জন্মতারিখ ইত্যাদি এসএসসি সার্টিফিকেট অনুযায়ী দিতে হবে। স্নাতক লিখিত পরীক্ষা শেষ হলেই সার্টিফিকেট দিয়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যায়।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা:
প্রিলি একটি বাছাই পরীক্ষা। এই নাম্বার পরবর্তীতে যোগ হবে না। তবে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। তাই ১ম হয়ে প্রিলি পাস করা আর ১০,০০০ তম হয়ে প্রিলি পাস করা একই কথা। প্রিলিতে সবার জন্য পাস মার্ক/কাট মার্ক একই। অর্থাৎ প্রায় ২,৫০০০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে যে ১০-১২ হাজার প্রিলিতে টিকবে আপনাকে এর মধ্যে একজন হতে হবে। এখানে কোন ধরনের কোটা/আলাদা কাট মার্ক এপ্লাই করা হয় না, তাই সেই লেভেলের প্রস্তুতি নিতে হবে।
রিটেন পরীক্ষা:
যারা বোথ ক্যাডারে দিবেন তাদের জন্য পরীক্ষা ১১০০ নম্বরের। আর যারা শুধুমাত্র ট্যাকনিকাল, জেনারেল ক্যাডার তাদের ৯০০ নম্বরের পরীক্ষা। ট্যাকনিকালদের বাংলা ২য় পত্র ও বিজ্ঞান পরীক্ষার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট ট্যাকনিক্যাল বিষয়ে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে।
লিখিত পরীক্ষা পাস নম্বর গড়ে ৫০%। সবাইকে অবশ্যই ৫০% মার্কস পেতে হবে ভাইবা দেয়ার জন্য। আপনার ক্যাডারে যত সিটই থাকুক আপনি যদি রিটেনে ৫০% মার্কস না পান,তাহলে আপনি রিটেনে ফেল।
রিটেন পরীক্ষায়ও কোন ধরনের কোটা/আলাদা কাট মার্ক এপ্লাই করা হয় না। কোন পরীক্ষায় ৩০% এর কম পেলে ওই সাবজেক্টের নাম্বার যোগ হবে না।
মনে রাখবেন, বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল লিখিত পরীক্ষা। এখানে যে যত বেশি নম্বর পাবে, তার ক্যাডার পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি।
ভাইভা:
ভাইভার উপর ক্যাডার প্রাপ্তি নির্ভর করে না। কারণ ভাইভাতে বেশির ভাগই পাস করে এবং এভারেজ একটা নম্বর পায়। অল্প কিছু পরীক্ষার্থী খুব ভাল ভাইভা মার্কস পান। ভাইভা পরীক্ষা ২০০ নম্বরের। আর পাস মার্ক ১০০।
ভেরিফিকেশন:
পুলিশ, এনএস আই, ইউ এন ও, স্পেশাল ব্রাঞ্চ ইত্যাদি সংস্থা ভেরিফিকেশন করে। এখানে দেখা হয় কোন মামলা আছে কিনা, রাজনৈতিক পরিচয় নিজের এবং আত্মীয়স্বজনের, স্থায়ী ঠিকানা ঠিক আছে কিনা, স্কুল কলেজ ও মেডিকেল কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় এ ও ভেরিফিকেশন করা হয়।
জয়েনিং:
গেজেট দেয়ার ১৫-৩০ দিনের মধ্যে নিজ মন্ত্রণালয়ে জয়েন করা লাগে। মন্ত্রণালয়ে জয়েনিং এরপর কর্মস্থলে জয়েনিং এর জন্য আলাদা গেজেট প্রকাশিত হয়। এটা মন্ত্রণালয়ে জয়েনিং এর ৭ দিনের মধ্যে সাধারণত হয়। এসব প্রসিডিউর সফলভাবে শেষ করতে পারলে তবেই আপনি বিসিএস ক্যাডার।
প্রস্তুতি কীভাবে নেবেন:
যারা সিভিল সার্ভিসে আসতে চান তাদের নিজেকে ধীরে ধীরে তৈরি করা উচিত। এ জন্য যা করবেন।
১. আপনার নিজ বিভাগের পড়াশোনার ওপর নির্ভর করবে কতটুকু সময় বিসিএসকে দেবেন। তবে নিজ বিভাগকেও অবহেলা করবেন না। পর্যাপ্ত সময় সেখানেও দেবেন। সময় নষ্ট না করলে আশা করি ভালো সময়ই পাবেন।
২. জাতীয়, পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তেমন বৈষম্য হয় না। কারণ, কর্তৃপক্ষ আপনাকে বিচার করবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে নয়। তাই হতাশ বা বেশি খুশি হওয়ার প্রয়োজন নেই।
৩. প্রথম বর্ষে থাকতেই বিসিএসের প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভার সিলেবাসটা ভালো করে পড়ে নেবেন। দৈনিক পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করুন।
৪. বিগত বিসিএসের প্রশ্নগুলো বিশেষ করে প্রিলির প্রশ্ন ব্যাখ্যাসহ পড়বেন। লিখিত প্রশ্নগুলো দেখবেন।
৫. নিজের বিভাগের ফাঁকে ফাঁকে বেসিক বই পড়বেন। যেমন ক্লাস সিক্স টু টেন বোর্ডের বই। অবশ্যই ধীরে ধীরে ও বুঝে বুঝে পড়বেন।
৬. তৃতীয় বর্ষে এসে কিছু মৌলিক বই পড়ে নিন। যেমন অসমাপ্ত আত্মজীবনী (শেখ মুজিবুর রহমান), বাংলাদেশের ইতিহাস (১৯০৫-১৯৭১) (ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন), লাল নীল দীপাবলি (ড. হুমায়ুন আজাদ) ইত্যাদি।
৭. চতুর্থ বর্ষের প্রথম থেকে প্রিলির জন্য বিষয় ধরে গাইড পড়া শুরু করুন। সাধারণ জ্ঞানের বিষয়গুলো একটু পরে পড়া উত্তম। কারণ, তা অনেক পরিবর্তিত হয়।
মনে রাখবেন, বিসিএস একটি ধৈর্যের পরীক্ষা। সার্কুলার থেকে প্রিলি, রিটেন, ভাইভা, নিয়োগ পর্যন্ত। এই দীর্ঘ সময়ে অনেক টেনশন, হতাশা আসবে। কিন্তু ধৈর্য ধরতে হবে। স্বপ্নকে ছুয়ে দেখতে প্রতিজ্ঞা করতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে। বিশ্বাস করতে হবে নিজেকে। আপনিও পারবেন।