হাতে কলমে কৃষির শিক্ষা
আবুল বাশার মিরাজ, বাকৃবি: পানির অপর নাম জীবন। উদ্ভিদ ও প্রাণীর উভয়ের বেঁচে থাকার জন্য দরকার পানি। বলা হয়ে থাকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধও হয়ত হবে পানির কারণেই। এদিকে বর্তমানে কৃষি উৎপাদনে পানি তথা সেচের গুরুত্বও অনেক। পুরনো সেচ ব্যবস্থাপনায় ফসলের পানির প্রকৃত চাহিদার তুলনায় দুই থেকে তিন গুণের বেশি পানি জমিতে প্রয়োগ করা হয়।
যা পানি সম্পদের একটি ঢালাও অপচয়। সেচের পানি ক্রমেই দুস্পাপ্য হয়ে উঠলেও এদেশের প্রধান শস্য ধান উৎপাদন একটি সেচ নির্ভর চাষ পদ্ধতি। ফসলভেদে পানির চাহিদা সঠিকভাবে নিরূপন, সেচ কার্যে পানির পরিবহন ও বিতরণের সঠিক পদ্ধতি নির্ধারণ করে সেচের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত অবস্থার উন্নয়নের জন্য সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা জরুরী।
আর কৃষি প্রধান দেশে এসব সমস্যা থেকে কিভাবে উত্তোরণ করা যেতে পারে, মূলত তা নিয়েই শিক্ষা ও গবেষণা কার্য চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরী অনুষদের সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ। সম্প্রতি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা এ বিভাগের ব্যবস্থাপনায় তত্ত্বীয় জ্ঞানের পাশাপাশি হাতে কলমে সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানার জন্য দিনব্যাপী একটি শিক্ষাসফরের আয়োজন করে।
এ সফর থেকে তাঁরা সেচ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বাস্তবসম্মত জ্ঞান লাভ করেন। একইসাথে কিভাবে এ ব্যবস্থাপনাকে আরো যুগোপযোগি করা যায় তারও দিকনির্দেশনা পান ।
এ সফরে তাঁদের নেতৃত্ব দেন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মেসবাউদ্দিন আহমেদ, মো. তৌহিদুল ইসলাম ও বিভাগীয় কর্মকতাবৃন্দ। অধ্যাপক ড. মেসবাউদ্দিন আহমেদ জানান, বাংলাদেশের মোট সেচযোগ্য জমির শতকারা ৭৭ ভাগ ভূগর্ভস্থ ও মাত্র ২৩ ভাগ ভূ-উপরস্থ পানি দ্বারা সেচ দেয়া হয়।
বাংলাদেশের উপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত ভারত হতে ৫৪টি নদী এবং মায়ানমার হতে ৩টি নদী পানি উজানের দেশ কর্তৃক প্রায়শ অনিয়ন্ত্রিত ও অসম উত্তোলনের ফলে বাংলাদেশে ভূ-উপরস্থ পানি স্বল্পতায় পরিবেশ বিপর্যয় এবং ভূ-গভস্থ পানির স্তর উন্নয়নে কিছুটা রিচার্জ হলেও অ্যাকুইফার কখনো তার পূর্বাবস্থা ফিরে পাচ্ছে না।
তথাপি ভূ-উপরস্থ পানিরও ক্রমে গুনগত অবনতি হচ্ছে। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশের বোরো মৌসুমটা পুরোটাই সেচ নির্ভর। এতে একদিকে যেমন উৎপাদন ব্যবস্থায় বাড়তি খরচ হচ্ছে, তেমনি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি ক্ষেত্রেও ক্ষরা, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া ইত্যাদির প্রভাবে উৎপাদন বিঘিœত হচ্ছে। বিভাগটির তত্ত্বাবধানে আমরা শিক্ষার্থীদের কৃষিতে কিভাবে পানির অপচয় রোধ করা যায়, কম সেচে ফসল ব্যবস্থাপনা কার্য করা সম্ভব সে বিষয়গুলো শেখানোর চেষ্টা করছি। এছাড়াও প্রতিনিয়ত বিভাগটিতে এটি নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যত কর্মজীবনে দেশের কৃষি ও কৃষকের কল্যাণে কাজে লাগতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশের মোট সেচযোগ্য জমির প্রায় ৬১ ভাগ শ্যালো টিউবওয়েল, ১৬ ভাগ ডিপটিউবওয়েল, ২০ ভাগ লো-লিফট পাম্প এবং ৩ ভাগ অন্যান্য উপায়ে সেচ দেয়া হয়। মাত্রাতিরিক্ত পানি উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে।
কিন্তু ব্যবহারযোগ্য পানির পরিমান বাড়ানো যতটা ব্যয়বহুল তার তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী। যেসব ফসল উৎপাদনে পানি কম লাগে সেসব ফসল উৎপাদনের দিকে মনোযোগী হওয়া।
বরেন্দ্র অঞ্চল, চরাঞ্চল ও যেসব এলাকায় বেলে মাটির উপস্থিতি আছে সেখানে ধান চাষ নিরোৎসাহিত করে গম, ডাল জাতীয় ফসল ও সবজী চাষের উদ্দোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
তাছাড়া সেচের পানি সাশ্রয়ের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে এলাকা ভিত্তিক ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ নির্দেশনা প্রদানে নীতি নির্ধারক মহলের আরো বিশেষ ভূমিকা রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।