ময়মনসিংহে মাদ্রাসায় ‘পিটুনিতে’ শিশুর মৃত্যু
![](https://old.loklokantor.com/wp-content/uploads/2018/03/image-71832-1.jpg)
লোক লোকান্তরঃ ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকের পিটুনিতে পা ও পাজরের হাড় ভেঙে যাওয়ার পর ১০ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক পালিয়ে গেলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের মাদ্রাসা থেকে নিয়ে যাচ্ছেন। আর শিক্ষকরা আত্মগোপনে গেছেন।
ভুক্তভোগী শিশুটির নাম তাওহিদুল ইসলাম। সে ভালুকার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের পাঁচগাও গ্রামে জামিরদিয়া মাদ্রাসায়ে ওমর (রা.) হাফিজিয়া অ্যান্ড ইসলামি কিন্ডার গার্টেনে পড়ত।
তাওহিদের বাবা কয়েশ মিয়া জানান, তার ছেলে হেফজে পড়াশোনা করত। পড়া না শেখায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে তার ছেলেকে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক আমিনুল ইসলাম লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বুকের পাঁজরের হাড় ও একটি পা ভেঙে ফেলেন। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করতে আমিনুল।
খবর পেয়ে ছেলেকে নিয়ে আসেন বাবা কয়েশ মিয়া। অবস্থা খারাপ হতে থাকলে তাওহিদকে ভালুকা পরে চুরখাই কমিউনিটি বেইজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে ৪ মার্চ শিশুটিকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। মধ্যরাতে তাওহিদ ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে মারা যায়।
এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক আমিনুল ইসলাম পালিয়ে যান। তার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চরনিখলা গ্রামে।
তাওহিদের বাবা জানান, ওই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক এনামুল হককে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
তাওহিদের মা হাসনা হেনা জানান, প্রায় চার বছর আগে ছেলেকে তারা ওই মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। সে কোরআন শরিফের ৩০ পারার ১৮ পারা মুখস্থ করেছিল।
হাসনা হেনা বলেন, ছেলের লাশ এভাবে বাড়িতে আসবে কখনও ভাবিনি। এটা হত্যাকাণ্ড। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
সরজমিন ওই মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, ছেলেরা দৌড়াদৌড়ি করছে, কিন্তু কোনো শিক্ষককে নেই। আর অভিভাবকরা তাদের শিশুদের নিয়ে যাচ্ছেন।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল হামিদ বলেন, বিষয়টি আমি আজ সকালে মাদ্রাসায় এসে জানতে পেরেছি। ঘটনার পর হতে আবাসিক ছাত্রদের মাদ্রাসায় ফেলে সকল শিক্ষকরা গা ঢাকা দিয়েছেন। আর অভিভাবকরা যে যার মত ছাত্রদের নিয়ে যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে ভালুকা মডেল থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন অর রশীদ বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা ব্যবস্থা নেব।
বেশ কয়েক বছর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদেরকে শারীরিক নির্যাতন করা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। কিন্তু মাদ্রাসায় শিক্ষকদেরকে শিশুদের শাসনে ব্যাপকভাবে শারীরিক নির্যাতনের প্রবণতা আছে। আর স্কুলে সরকার যেভাবে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ করে, মাদ্রাসায় তেমন কোনো নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণ নেই।