| সকাল ৯:১৩ - শুক্রবার - ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৪ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

২০১৮-তে দৃশ্যমান হবে মিরসরাই ইকনোমিক জোন

লোক লোকান্তরঃ  বন্দরনগরী চট্টগ্রামের উপকূলীয় মিরসরাইয়ে সাগরের বুক থেকে জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ চরজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ ইকনোমিক জোন বা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরই দৃশ্যমান হচ্ছে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল।

 

এরই মধ্যে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৮৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে দেশী-বিদেশী শিল্প প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পিএইচপি, কেএসআরএম, বিএসআরএম, বসুন্ধরা, ঝেজিয়াং, কুনমিং উল্লেখ্যযোগ্য।

 

বেজা আশা করছে, সবকিছু পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে গেলে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে মিরসরাই পরিণত হবে দেশের বৃহত্তম পরিকল্পিত আধুনিক শিল্পশহরে।

 

মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক আহসান উল্ল্যাহ বলেন, আশা করি চলতি বছর দৃশ্যমান হবে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্রস্তাব করেছে পিএইচপি গ্রুপ। পিএইচপি স্টিল ওয়ার্কস বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে স্টিল মিল স্থাপন করবে। এই গ্রুপ ৫৬৪ একর জমিতে স্টিল মিলসহ বিভিন্ন খাতে দুই ধাপে ৩২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া বসুন্ধরা বরাদ্দ পেয়েছে ৫০০ একর জমি, চীনের ঝেজিয়াং জিনদুন হোল্ডিং গ্রুপ ৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে।

 

চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান কুনমিং স্টিল ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে স্টিল মিল করতে চায়। কেএসআরএম গ্রুপ মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং বস্ত্র, বিদ্যুৎ ও স্টিল মিলে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এ গ্রুপ প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।

 

এ ছাড়া তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) জন্য ২০০ একর জমিতে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে ওমেরা পেট্রোলিয়াম। এরই মধ্যে বেজার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। বিএসআরএম গ্রুপ মোট তিনটি বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে। এতে যৌথ বিনিয়োগে এ গ্রুপ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও স্টিল মিল করতে চায়। এ গ্রুপের মোট বিনিয়োগ প্রস্তাব তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

 

এ ছাড়া সামিট চিটাগং পাওয়ার এক হাজার ৭৬০ কোটি, সিরাজ সাইকেল ইন্ডাস্ট্রি প্রায় ২০০ কোটি, বিপিডিবি আরপিসিএল পাওয়ার জেনারেশন এক হাজার কোটি, আরব-বাংলাদেশ ফুড ১০০ কোটি, গ্যাস-১ লিমিটেড প্রায় ২০০ কোটি, ফন ইন্টারন্যাশনাল ২০০ কোটি, ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল সাড়ে ৫০০ কোটি, আরমান হক ডেনিমস ১০০ কোটি এবং অর্কিড এনার্জি ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে।

 

সব মিলিয়ে প্রায় ৮৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মিরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য এক হাজার একর জমি রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ইজেড তৈরিতে প্রায় এক হাজার ২০০ একর জমির উন্নয়ন কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া দেশের রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের জন্য ৫০০ একর জমি দেওয়ার কথা রয়েছে।

 

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের আয়তন হবে প্রায় ৩০ হাজার একর। এখানে উন্নয়নের ফলে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ মিরসরাইয়ে তারা ১০ হাজার একর জমি বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত করতে চান। মিরসরাই শিল্পশহর পরিকল্পনায় ৩০ হাজার একরের মধ্যে ১৬ হাজার একরের বেশি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে এখানে শিল্প কারখানায় উৎপাদন শুরু হবে। ২০৩০ সালে পূর্ণাঙ্গভাবে শিল্পশহর চালু হবে।

 

এই জোনে প্লট পেতে ইতিমধ্যে অন্তত ৫০টি আবেদন জমা পড়েছে। তবে তৈরি পোশাকের চেয়ে প্রযুক্তিনির্ভর এবং ভারী শিল্পকেই বিনিয়োগে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে বেজা সূত্র নিশ্চিত করেছে।

 

জানা গেছে, মিরসরাই ইকোনমিক জোনে ২৫টি আলাদা জোন হবে। ৩০ হাজার একর জমিতে এই ইকোনমিক জোন স্থাপন হচ্ছে। বেজা চরের জমির মধ্যে ১৯ কিলোমিটার পাকা সড়ক তৈরি করেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে মিরসরাই ইজেড পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হচ্ছে। চারলেনের এ সড়কের নামকরণ করা হয়েছে শেখ হাসিনা সরণি। একই সঙ্গে মেরিন ড্রাইভ সড়ক যেটা কক্সবাজার পর্যন্ত যাচ্ছে, সেটি এই জোনের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ১২:৪৭ অপরাহ্ণ | ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৮