| সকাল ৬:৫১ - রবিবার - ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি, এলার্জি হলে যা করবেন

লোক লোকান্তর : বিভিন্ন ধরণের এলার্জেন যেমন-ধূলা-বালি-ধোঁয়া, ফুলের রেণু, কলকারখানার নির্গত বিষাক্ত গ্যাস, গাড়ীর ধোঁয়া, বিশেষ কিছু খাবার, ওষুধ ইত্যাদি এলার্জি ও এজমার সৃষ্টি করে। যে কোন সুস্থ্য ব্যক্তিরও এলার্জি হতে পারে।

 

সামান্য উপসর্গ হতে শুরু করে মারাত্মক উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে, এমনকি হঠাৎ তীব্র আকারে আক্রমণ করতে পারে। মোট কথা, বর্ষার ধূলাবালি, ধোঁয়া, গাড়ীর বিষাক্ত গ্যাস, কলকারখানার সৃৃষ্ট পদার্থ, শীতের কুয়াশা, ফুলের রেণু, বিশেষ কয়েকটি খাবার যেমন-চিংড়ি, ইলিশ, বোয়াল, গজার, গরুর মাংস, হাঁসের ডিম, পাকা কলা, আনারস, নারিকেল, কসমেটিকস ও অগণিত জানা-অজানা জিনিস আমাদের শরীরে কাশি, শ্বাকষ্ট এলার্জি ও এজমার সৃষ্টি করতে পারে। হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার সময় শ্বাসনালীতে নিন্মোক্ত পরিবর্তনগুলো দেখা যায়-

 

১. শ্বাসনালী লাল ও পুলে যাওয়ার ফলে সরু হয়

২. শ্বাসনালীর চারপাশের মাংসপেশী-সমূহ সংকুচিত হয়ে শ্বাসনালীকে আরো সরু করে দেয়

৩. শ্বাসনালীতে অধিক পরিমাণ শ্লেষা তৈরি হয়ে শ্বাসনালীতে বায়ুপ্রবাহ আংশিকভাবে বন্ধ করে দেয়।

 

চিকিৎসা

হাঁপানি একটি দীর্ঘ মেয়াদী রোগ। সঠিক চিকিৎসা এবং ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে হাঁপানি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যে সব উত্তেজকের (ট্রিগার) কারণে হাঁপানির তীব্রতা বেড়ে যায়, রোগীকে সেগুলো সণাক্ত করতে হবে এবং পরিহার করতে হবে। এছাড়াও সব হাঁপানি রোগীকে নিন্মোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখতে হবে-

১. ধূমপান এবং তামাকের ধোঁয়ার সংস্পর্শ পরিহার করতে হবে

২. ঠান্ডা বাতাস হাঁপানির তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। এই সময় ওষুধের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে হবে

৩. ব্যায়াম এবং শারীরিক পরিশ্রম নিরুৎসাহিত করা উচিত নয়। ব্যায়াম শরীর ভাল রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য জটিল রোগ বালাই থেকে শরীরকে রক্ষা করে।সঠিক ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমেব্যায়ামের সময় বা পরে হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা পরিহার করা সম্ভব

৪. বাড়ীর পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং বাড়ীতে অবাধ বিশুদ্ধ বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে

 

হাঁপানি প্রতিরোধক

যেসব ওষুধের ব্যবহার হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হওয়া প্রতিরোধ করে তাদেরকে হাঁপানি প্রতিরোধক বলা হয়।

 

১. এন্টি ইনফ্লামেটরী ওষুধসমূহ; এইসব ওষুধ শ্বাসনালীর প্রদাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হাঁপানি প্রতিরোধ করে। এই শ্রেণির বহুল ব্যবহূত বুসোনাইড, ক্লোমিথাসেন এবং ফ্লুটিকাসোন ইত্যাদি

২. ব্রঙ্কোডাইলেটর বা শ্বাসনালী প্রসারক; এইসব ওষুধসমূহ দ্রুত শ্বাসনালীকে প্রসারিত করে হাঁপানির তীব্রতা প্রতিরোধ করে

 

হাঁপানি উপশম কারক:ব্রঙ্কোডাইলেটর সমূহ উপশম কারক হিসেবে কাজ করে। ব্রঙ্কোডাইলেটর সমূহ শ্বাসনালীকে দ্রুত প্রসারিত করে ফলে ফুসফুসে সহজে বায়ু চলাচল করতে পারে এবং এর মাধ্যমে হাঁপানি আক্রান্ত রোগীর উপসর্গসমূহ দ্রুত উপশম হয়। দুই ধরণের ব্রঙ্কোডাইলেটর বা শ্বাসনালী প্রসারক আছে, যেমন;

 

১. ক্ষণস্থায়ী ব্রঙ্কোডাইলেটর যেমন- সালবিউটামল। এইসব ওষুধ দিনে ৩-৪ বার ব্যবহার করতে হয়।

২. দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কোডাইলেটর যেমন-ব্যামবিউটামল। এইসব ওষুধ দিনে একবার ব্যবহার করতে হয়। মৃদু বা মাঝারী হাঁপানিতে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষণস্থায়ী ব্রঙ্কোডাইলেটর ব্যবহার করলে কোন ধরণের ক্লিনিক্যাল সুবিধা পাওয়া যায় না। তাই এইসব ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কোডাইলেটর ব্যবহার করতে হবে। রাত্রিকালীন হাঁপানিতে মোডিফাইড রিলিজড থিওফাইলিনের বিকল্প হিসাবে ব্যামবিউটামল ব্যবহার করে ভাল সুফল পাওয়া যায়।

 

হাঁপানির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

 

১. অনেক রোগীই হাঁপানি চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা বলে কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত হাঁপানি ভয়াবহ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে

২. সঠিক চিকিৎসা ও ওষুধের ব্যবহারের মাধ্যমে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ না করলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং অকেজো হবে।

৩. শিশুদের হাঁপানির ঠিকমত চিকিৎসা না করালে বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং মায়েদের বেলায় গর্ভস্থ ভ্রণের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৭:০৭ অপরাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭