| ভোর ৫:২১ - রবিবার - ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ৪ঠা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ময়মনসিংহে আমন ধান বীজের কৃত্রিম সংকটে কৃষকদের মাথায় হাত

লোক লোকান্তর :ময়মনসিংহে আমন ধান বীজ সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যে বিক্রি না করে কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে দিগুন দামে বিক্রি ও নানা অনিয়ম- দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নান্দাইলে কৃষকরা দিনের পর দিন বিএডিসির বীজ বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে ধর্ণা দিয়েও বীজ পাচ্ছেন না।

 

বীজধানের সংকট রয়েছে এমন কথা কর্তৃপক্ষ বললেও ওই কেন্দ্রের পাশের দোকানেই ৬ থেকে ৭ শ’ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে বিএডিসির বীজ ধান। বীজ বিতরণ কর্তৃপক্ষ বিএডিসি ও ডিলারদের কারসাজির কারণে খেসারত গুণতে হচ্ছে কৃষকদের। বিপাকে পড়ে কৃষকরা চাহিদা অনুযায়ী বীজ না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেক এলাকায় ধানের বীজ না পেয়ে বিএডিসি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ, মানববন্ধন করেছেন তারা।
ময়মনসিংহের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুল মাজেদ জানান, ময়মনসিংহ জেলায় এবছর ২ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমন বীজের চাহিদা ৫ হাজার ৫ শত মেট্রিক টন। তন্মধ্যে বিএডিসি থেকে এবছর প্রাপ্ত মোট বীজের পরিমাণ ১৪০২ মেট্রিক টন। যা মোট চাহিদার ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া বেসরকারি ও কৃষক পর্যায়ে বীজের চাহিদাপূরণ করা হয়।
এদিকে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা পরিষদ চত্বরে গত রোববার বীজের দাবিতে কৃষকেরা মানববন্ধন করেছেন । বিষয়টি জেনে এ ব্যাপারে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, বীজ সংকটের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পরে প্রশাসনের শক্ত হস্তক্ষেপে অতিমূল্যে বিক্রয়কারী খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৪৭০ বস্তা আমন ধানবীজ উদ্ধার করে গতকাল সোমবার প্রকৃত কৃষকদের কাছে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয় করা হয়েছে।
নান্দাইলের বিক্ষোব্ধ কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা বিএডিসির বিক্রয়কেন্দ্রে কোনো জাতের বীজই পাচ্ছেন না। অথচ উপজেলার বিভিন্ন ডিলারের কাছে ঠিকই এসব বীজ পাওয়া যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে চড়া দাম দিতে হচ্ছে,গুনতে হচ্ছে দ্বিগুন দাম।
এদিকে বিএডিসি (বীজ) উপ-পরিচালক আইয়ুব উল্লাহ জানান, নান্দাইলের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত মূল্যে বীজধান বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে স্থানীয় কৃষকরা ডিলাদের দোকান ঘেরাও করে রাখে।
বিএডিসি (বীজ) যুগ্ম-পরিচালক মোঃ রুহুল আমীন সোমবার সরেজমিনে গফরগাঁও উপজেলার বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। এসময় কর্মকর্তারা ডিলারদের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হয়ে সরকার নির্ধারিত ন্যায্য মূল্যে বীজ বিক্রির পরামর্শ দেন। কেউ অতি মুনাফা করে বীজ বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে বিএডিসি (বীজ) আইয়ুব উল্লাহ জানান।
অপরদিকে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে আসাধু খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গত দুই দিনে ৪৭০ বস্তা আমন বীজের বস্তা উদ্ধার করে সোমবার প্রকৃত কৃষকদের কাছে সরকার নির্ধারিত ন্যয্যমূল্যে বিক্রি করা হয়েছে।
নান্দাইল উপজেলা সদরের নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজ বিক্রয়কেন্দ্র্রে রোববার বেলা ১১টার দিকে গিয়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের আগেও বীজধান কিনতে এসেছিলেন অনেকে। কিন্তু তখন ঈদের পরে বীজধান দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে আর দেয়া হয়নি।
নান্দাইল উপজেলা বিএডিসি বীজ বিক্রয়কেন্দ্রের কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবীর দাবি করেন, বি-আর ৪৯ ছাড়া অন্য কোনো বীজধানের সংকট নেই। কৃষকদের মধ্যে এ জাতের বীজ ধানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জেলা থেকে অতিরিক্ত বরাদ্দ পেলে তা কৃষকদের সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
আশপাশের দোকানে চড়া মূল্যে বিএডিসির বীজধান বিক্রির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেউ কেউ অন্য জায়গা থেকে ওই বীজ সংগ্রহ করে এনে বিক্রি করতে থাকতে পারেন।
নান্দাইল উপজেলা কৃষি বিভাগের মনিটরিং (তদারকি) কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম কাছে ‘অনুমোদিত ডিলার ছাড়া অন্য দোকানে চড়া মূল্যে বিএডিসির বীজধান বিক্রির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বীজ উৎপাদন ও বিক্রির দায়িত্ব বিএডিসির। বিষয়টি তারাই দেখভাল করে। তবে আমরা বিষয়টি মনিটরিং করছি। কিছু দোকানকে জরিমানা করা হচ্ছে আরও কোথাও অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৯:০৫ অপরাহ্ণ | জুলাই ০৪, ২০১৭