ময়মনসিংহ পৌরসভার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত এবং মেয়র ইকরামুল হকের জনপ্রতিনিধি হওয়ার লক্ষ্য
লোক লোকান্তরঃ ময়মনসিংহ জেলার প্রাণকেন্দ্র সদর উপজেলা। সদর পৌরসভার প্রথম মেয়র নির্বাচনে আরো একটি ইতিহাস যুক্ত হয়েছে, আরো কিছু সমৃদ্ধির সূচনা ঘটেছে ময়মনসিংহ জেলার ইতিহাসে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১০-১১ সালের পৌরসভা নির্বাচনে ২১.৭৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই পৌরএলাকার নির্বাচিত মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু। জেলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডস্ট্রিজের সম্মানিত প্রেসিডেন্টও তিনি। আধুনিকায়ন আর উন্নয়নের বিবেচনায় ভিশন ২০২১ -এর আলোকে ময়মনসিংহকে একটি সুন্দর ও তিলোত্তমা শহরে রূপান্তরিত করাই তাঁর একমাত্র স্বপ্ন।
পৌরসভার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত এবং মেয়র ইকরামুল হকের জনপ্রতিনিধি হওয়ার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে প্রিয়.কম রবিবার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ময়মনসিংহ সদর পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে আপনার অভিব্যাক্তি জানতে চাচ্ছি?
ইকরামুল হক টিটু : বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শহর ময়মনসিংহ। পৌরসভার মেয়র নির্বাচন হওয়ার আগে অনেকটা সময় উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ছিল এই এলাকার জনগণ। এই পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে অনেক কিছুই আমার মাধ্যমে প্রথম হচ্ছে। পৌরএলাকাবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী আমি আমার সাধ্য ও সামর্থের সবটুকু দিয়ে কাজ করছি। আমার বিশ্বাস- পৌর নাগরিকদের সহযোগিতা এবং আমার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সম্মিলন ঘটিয়ে অনেক কিছুই করা সম্ভব হবে।
আপনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত হওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য কাজের বিবরণ দিন ?
ইকরামুল হক টিটু : আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এই পৌর এলাকায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। জলাবদ্ধতা নগরীর দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা ছিল। এই সমস্যা নিরসনের জন্য আমিই সর্বপ্রথম ময়মনসিংহের পৌরএলাকায় ফুটপাতসহ এ পর্যন্ত মোট ৩৫ কিলোমিটার নতুন আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করেছি। যার ফলে এলাকার ড্রেইনেজ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। সাথে সাথে বিভিন্ন রাস্তার প্রয়োজন মাফিক সংস্কার ও মেরামত করেছি। এখন আমাদের এই নগরীতে উল্লেখযোগ্য কোনো জলাবদ্ধতা নেই। সম্পূর্ণভাবে এই সমস্যার সমাধানের জন্য আগামীতে আরো নতুন নতুন ড্রেন নির্মাণ করা হবে। সুপেয় পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ ছিল না এখানে। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য দুটি ওভারহেড পানির ট্যাংক, নতুন নতুন পাইপলাইন সংযোগ স্থাপন এবং ১২টি নতুন পাম্প বসানো হয়েছে। নগরবাসীর চিত্ত বিনোদনের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ঐতিহ্যবাহী বিপিন পার্কের সংস্কারসহ কিছু বিনোদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং নগরীর টাউন হল অডিটরিয়ামের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শহরকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আধুনিক নতুন ৬টি আর্বজনাবাহী ট্রাক সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ১টি অত্যাধুনিক রোড সাপ্লায়িং মেশিন আনা হয়েছে। সারা বাংলাদেশে কেবল আমাদের এই পৌরসভায়ই একটি মাত্র অত্যাধুনিক রোড সাপ্লায়িং মেশিন রয়েছে। অন্য কোন পৌরসভায় এই মেশিন নেই। বর্জ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শহরের যানজট সমস্যা সমাধানে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ চরপাড়া মোড়ে বক্স কালভার্ট নির্মাণ ও মোড় প্রশস্থ করা হয়েছে। বিদ্যাময়ী স্কুলের পেছনের রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে অতি গুরুত্বপূর্ণ গাঙ্গিনারপাড় মোড়ের ওপার চাপ কমবে। ভাটিকাশর রেলগেইট থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ গেইট পর্যন্ত প্যারালাল রাস্তা নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়াও ময়মনসিংহ ঈদগাহ মাঠের উন্নয়ন পৌর প্রাথমিক ভবন নির্মাণ, গোরস্থান ও শশ্মানঘাটের উন্নয়ন কাজও বাস্তবায়িত হয়েছে।
একটু ব্যক্তিগত আলাপে আসি; জনপ্রতিনিধি হলেন কেন ?
ইকরামুল হক টিটু : একজন মানুষ ইচ্ছা করলে চাকরি করতে পারে, ব্যবসা করতে পারে। নিজের পছন্দ মতো যে কোন পেশায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারে নিজেকে। কিন্তু জনপ্রতিনিধি হওয়া এমন একটি ক্যারিয়ার, একক ইচ্ছায় যেটা হওয়া সম্ভব না। জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তার মনোনয়নের সাথে জনগণের মনোনয়নের প্রয়োজন থাকে। জনসাধারণের মনোনয়ন ছাড়া জনপ্রতিনিধি হওয়া যায় না। আমি মনে করি. ময়মনসিংহ পৌরএলাকার জনগণ তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাকে দায়িত্ব প্রদান করার ইচ্ছা পোষণ করেছে, আল্লাহর ইচ্ছায় আমি তাই জনপ্রতিনিধি হতে পেরেছি।
জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে কতটুকু সফল মনে করেন ?
ইকরামুল হক টিটু : একজন জনপ্রতিনিধির সফলতা ও ব্যর্থতার বিচার জনগণের হাতেই ন্যাস্ত। আমি কেবল আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছি এবং এক্ষেত্রে আমি আমার পৌরবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতাও পাচ্ছি। আমি কেবল এতটুকু বলতে পারি যে, স্বাধীনতা উত্তর আমার মেয়াদে বৃহত্তর ময়মনসিংহ পৌরসভায় সর্বোচ্চ পরিমাণ কাজ হচ্ছে। আর্থিক ও অন্যান্য সীমাবদ্ধতার কারণে পৌরবাসীর চাহিদা অনুযায়ী শতভাগ কাজ হয়তোবা আমি করতে পারছি না, এক্ষেত্রে আমার আন্তরিকতায় কোনো কমতি নেই। মেয়াদ শেষে জনগণই আমার কাজের প্রকৃত মূল্যায়ন করবে বলেই আমার বিশ্বাস।
ময়মনসিংহ পৌর এলাকার বিগত আমলের প্রতিনিধিদের তুলনায় নিজের অবস্থানকে একটু ব্যাখ্যা করুন ?
ইকরামুল হক টিটু : প্রতিনিয়তই মানুষের চাহিদার পরিবর্তন ঘটছে, পরিবর্তন ঘটছে মানুষের কর্মের এবং কর্মপরিধির। পরিবর্তনশীল চাহিদা সম্পন্ন মানুষের এই চক্রে বসবাস আমাদের। বর্তমান সময়ের চাহিদা ও অবস্থা অনুযায়ী আমি কাজ করে যাচ্ছি, আমার এলাকার জনগণের সেবা করে যাচ্ছি। আগের প্রতিনিধিরাও তাদের সময়কালের বিবেচনায় কাজ করেছেন।
আপনার এই রাজনৈতিক জীবনের আদর্শ ও প্রেরণা কে কে ?
ইকরামুল হক টিটু : আমি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী। তিনিই আমার রাজনৈতিক জীবনের আদর্শ। স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ধন্য আমি এবং স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করাকে আমার জীবনের অনেক বড় প্রাপ্তি হিসেবে মূল্যায়ন করি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও আদর্শ বুকে নিয়ে আমিও কাজ করে যাচ্ছি। আর প্রেরণার ব্যাপারে একটি কথাই বলবো আমি- ময়মনসিংহ পৌরবাসীই আমার জীবনের প্রেরণা। এলাকাবাসীর স্নেহ, ভালোবাসা আর দিকনির্দেশনা ও দোয়া নিয়েই আমি আজকের অবস্থানে এসেছি। সুতরাং আমি আমার পৌরবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ, তারাই আমার প্রেরণার মূল উৎস।
আগামীতে আপনি মেয়র হবেন কি না ?
ইকরামুল হক টিটু : মেয়র যেহেতু একজন জনপ্রতিনিধি, জনগণের ইচ্ছা ও রায়েই নির্বাচিত হতে হয় তাকে। আমি আমার সাধ্য ও সামর্থের সবটুকু দিয়ে জনসাধারণের সেবা করার চেষ্টা করছি। জনগণের পাশে আছি, জনগণও আমাকে তাদের পাশে রাখবেন বলে আমার বিশ্বাস। এক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি হলো- আমি যেভাবে এবং যে গতি ও মানের সঙ্গে এলাকার উন্নয়নে কাজ করছি, আগামীতে যদি আমি আবার প্রার্থী হই জনগণ আমাকে নিরাশ করবেন না বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে।
একটি আদর্শ নগরী গড়ে তোলার জন্য আপনার দৃষ্টিতে উন্নয়নের বাঁধা কি কি এবং সেসব বাঁধা উত্তরনের উপায় কি ?
ইকরামুল হক টিটু : প্রতিটি কাজেই কিছু না কিছু বাঁধা থাকে। বাঁধা থাকে বলেই কাজে গতি আসে। পৌরসভা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অন্যতম কাঠামো। রাষ্ট্রের এই কাঠামো ব্যবস্থার আওতায় দেশের অন্যান্য পৌরসভার মতো ময়মনসিংহ পৌরসভাও পরিচালিত হচ্ছে। আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে একটি কথা বলি- পৌরসভাগুলোর উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরো স্বাধীন ও উন্নত করা প্রয়োজন। মূল কথা হলো- নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে এলাকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাধ্য মতো আন্তরিক হতে হবে এবং নিজের সাধ্য মতো উন্নয়নের কথা ভাবতে হবে। জনপ্রতিনিধির আন্তরিক ইচ্ছা এবং জনসাধারণের সহযোগিতা থাকলে যেকোন সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে এলাকা উন্নয়ন করা সম্ভব।
ছবিঃ সংগৃহীত