| সকাল ৭:১৪ - রবিবার - ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ৪ঠা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

এসএমই পণ্যমেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মির্জা আজম

জামালপুর থেকে দারিদ্রতা বিতাড়িত করা হবে – মির্জা আজম

জামালপুর প্রতিনিধি:   বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি বলেছেন, জামালপুর থেকে দারিদ্রতাকে বিতাড়িত করা হবে। অতিদারিদ্রের তালিকায় জামালপুর ও কুড়িগ্রাম জেলা রয়েছে। এটা অত্যন্ত লজ্জার ব্যাপার। আমরা গত আট বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছি জামালপুরকে এই তালিকা থেকে বাদ দিয়ে মধ্যম সারির জেলাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। জামালপুরের দারিদ্রতা দূর করার লক্ষ্যে জামালপুরের সকল পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে ঢাকায় একটি সভা আয়োজনেরও প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

 

বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম শুক্রবার বিকেলে জামালপুর বৈশাখী মেলা মাঠে আয়োজিত সাতদিনব্যাপী আঞ্চলিক এসএমই পণ্যমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন এবং মেলার শুভ উদ্বোধন করেন। এর আগে তিনি অন্যান্য অতিথিদের সাথে নিয়ে মেলার উদ্বোধনী ফিতা কাটেন এবং স্মারক বেলুন উড়িয়ে মেলার শুভ সূচনা করেন।

ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, জামালপুর জেলা একটি নদীভাঙন কবলিত এলাকা এবং ভারি শিল্প কলকারখানা না থাকার কারণে এখানে বেকারত্বের সংখ্যা বেশি। তাই এখান থেকে দারিদ্রতাকে বিতাড়িত করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছি। প্রতিদিন নতুন নতুন প্রকল্প নিচ্ছি। তিনি উল্লেখ করেন, জামালপুরে ইকোনোমিক জোন স্থাপনের কাজ হাতে নিয়েছি। ইতিমধ্যে এর জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। শিগগির এখানে কাজ শুরু হবে। এখানে তিনশ’র বেশি ভারি শিল্প কারখানা স্থাপিত হবে। এতে করে এখানে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

 

তিনি বলেন, জামালপুর হবে একটি ভিক্ষুকমুক্ত জেলা। সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় এই জেলার দরিদ্র ও অতিদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক অনেক কাজ ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, দশটাকা কেজি দরে চাল বিতরণ, ভিজিডি কার্ড সহায়তা, বৃদ্ধদের জন্য ভাতা এবং গ্রামীণ জনপদে ৪০ দিনের কর্মসূচির কাজে বহু দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।

 

মির্জা আজম প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি বিশেষ উদ্যোগ ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে বলেন, এই কর্মসূচির আওতায় জামালপুরের বেকারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করা হবে। প্রশিক্ষণকালেও তারা মাসিক ভাতা পাবে। প্রশিক্ষণ শেষেও তাদেরকে সুদবিহীন এককালীন ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে। নানাভাবে জামালপুর থেকে বেকারত্ব দূর করা হবে।

 

হস্তশিল্পের নকশীকাঁথা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, জামালপুরের নারীদের প্রচেষ্টার ফসল এই হস্তশিল্প আজ বিশাল আয়ত্বে চলে এসেছে। এর মধ্যে নকশীকাঁথাকে জামালপুরের ব্র্যান্ডপণ্য হিসেবে ঘোষণা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। খুব শিগগির এটা হবে। এই হস্তশিল্পের উন্নয়ন, প্রচার, প্রসার ও বিপণনে আরও নতুন নতুন উদ্যোগ হাতে নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে হস্তশিল্পের একটি প্রদর্শনী সেন্টার করা হচ্ছে। সেখানে জামালপুরের পণ্যের ব্যাপক প্রসারের ব্যবস্থা থাকবে। সেখান থেকেই বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থাও করা হবে।

 

যেখানে আলো আসে সেখানে ভূত থাকে না উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, জামালপুর শহর এক সময় ভূতুরে শহর ছিল। সারা জেলায় আজকের মতো বিদ্যুৎ ছিল না। জামালপুরে ১০০ মেগাওয়াট একটি পাওয়ার প্লান্ট হয়েছে। আগামী ১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্লান্টটির শুভ উদ্বোধন করবেন। জামালপুরে আরও একটি পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্পের কাজ খুব শিগগির শুরু হতে যাচ্ছে। মাদারগঞ্জে একটি সোলার পাওয়ার প্লান্ট বসানো হচ্ছে। তিনি কথা দেন, ২০১৭ সালের মধ্যে জামালপুর সদর ও মেলান্দহ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় চলে আসবে। ২০১৮ সালের মধ্যে মাদারগঞ্জ উপজেলাকেও শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনা হবে। এইভাবে জেলার প্রতিটি উপজেলায় বিদ্যুতের সমস্যা দূর করা হবে। তিনি বলেন, এখন আর আতুর ঘরে চুন্নি ঢুকে না। যেখানে আলো আসে সেখানে ভূত থাকে না।

 

জামালপুরে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জামালপুরের যানজট দূর করতে ইতিমধ্যে দুটি বাইপাস রাস্তা করা হচ্ছে। ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক বাকাতেরা সোজা করে ৩৬ ফুটের রাস্তায় পরিণত করার কাজ শুরু হয়েছে। জামালপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ডাবল লাইনের রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। ৫০০ শয্যার একটি জামালপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানেরও ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে।

 

এই অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিক্রয় ও বাজার সম্প্রসারণ তথা এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন এ মেলার আয়োজন করেছে। মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় রয়েছে জামালপুর জেলা প্রশাসন, জামালপুর বিসিক ও নাসিব, জামালপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও বাংলাদেশ ব্যাংক। মেলামঞ্চে প্রতিদিন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

 

ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ শাহাবুদ্দিন খান। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামালপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম হীরা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী, এসএমই ফাউন্ডেশনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, জামালপুর পৌরসভার মেয়র মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনি, জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ আতিকুর রহমান ছানা প্রমুখ।

 

এর আগে আঞ্চলিক এসএমই মেলা উপলক্ষে জামালপুর অফিসার্স ক্লাব প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক। মেলার উদ্বোধনী আলোচনা সভা শেষে জামালপুর শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। অপরাজেয় বাংলাদেশের শিশুরা পরিবেশন করে মনোজ্ঞ নৃত্যানুষ্ঠান।

 

সাতদিনব্যাপী এ মেলায় পাটজাতপণ্য, চামড়াজাত সামগ্রী, পোশাক, ডিজাইন ও ফ্যাশনওয়্যার, হ্যান্ডিক্র্যাফটস, কৃষি পক্রিয়াজাতপণ্য, গৃহস্থালী পণ্য, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য এবং অন্যান্য সেক্টরের স্বদেশী পণ্য সামগ্রীর ৫০টি স্টল স্থান পেয়েছে। মেলায় রাজশাহী, নাটোর, শেরপুর, থেকেও কয়েকটি এমএমই পণ্যের স্টল বসেছে। এর মধ্যে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা থেকে জামদানি শাড়ি ও টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির স্টলও রয়েছে। জেলার ঐতিহ্যবাহী ইসলামপুরের কাঁসাশিল্পও এ মেলায় স্থান পেয়েছে। মেলা উদ্বোধনী দিনে বিভিন্ন বয়সের বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। অনেক দর্শনার্থীদের হস্তশিল্পের পণ্যসামগ্রী কিনতে দেখা যায়।

 

ছবিঃ এসএমই পণ্যমেলা উদ্বোধন করছেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। লোক লোকান্তর

সর্বশেষ আপডেটঃ ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ | ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৭