| সকাল ৯:৪২ - শুক্রবার - ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৪ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

অনুমোদন ছাড়াই চলছে ময়মনসিংহের ৩০০ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান

লোক লোকান্তরঃ  ময়মনসিংহ নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কিন্তু এসব স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেই। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এসব প্রতিষ্ঠান অবাধে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

 

ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট হাসপাতালের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। কিন্তু এদের মধ্যে নিবন্ধন আছে মাত্র ২০০ প্রতিষ্ঠানের। এদের মধ্যেও অনেকগুলোরই মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। সূত্র আরো জানায়, সিভিল সার্জন অফিসের অনুমোদন নিতে হলে তার আগে কয়েকটি সংস্থার অনুমোদন ও লাইসেন্স নিতে হয়। আলাদা করে নিতে হয় ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। নিতে হয় জনবল, সরকারি পরিদর্শন এবং ট্যাক্স ও পৌরসভার লাইসেন্স।

 

মঙ্গলবার দৈনিক বনিক বার্তায় ‘ময়মনসিংহে অনুমোদন ছাড়াই চলছে ৩০০ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

 

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ময়মনসিংহ নগরীতে যেসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে, তার অর্ধেকই অবৈধ। আর নগরীর বাইরে উপজেলা শহরগুলোয় রয়েছে দুই শতাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল। অনুমোদিত ও দক্ষ জনবল না থাকায় এগুলোর সেবার মান অত্যন্ত নিম্ন পর্যায়ের। শুধু উপজেলা সদরই নয়, এখন বিভিন্ন আঞ্চলিক বাজারেও গড়ে উঠেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার; যেগুলোর অনুমোদন তো দূরের কথা, কোনো রেজিস্টার্ড টেকনিশিয়ানও নেই।

 

ময়মনসিংহের শিল্পাঞ্চলখ্যাত ভালুকায় প্রায় ৩০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। কিন্তু এগুলোর অধিকাংশই লাইসেন্সবিহীন। এগুলোয় পর্যাপ্ত জনবল নেই। নেই আধুনিক যন্ত্রপাতি। ফলে পুরনো ও অকেজো যন্ত্র দিয়েই চলছে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল। এসব বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশন করাতে গিয়ে একাধিক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ত্রিশাল উপজেলায় ২৫টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকলেও অনুমোদন আছে মাত্র দুটির। জেলার ১৩টি উপজেলার স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রেরই একই চিত্র।

 

মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যাক্টে (১৯৮৩) যেসব শর্ত রয়েছে, তার অধিকাংশই মানে না এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ফলে এসব অননুমোদিত প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে হাইকোর্ট ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে র্যাব ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়। গত দুই মাসে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

 

এসব অভিযানে মেয়াদোত্তীর্ণ রাসায়নিক ব্যবহারসহ বিভিন্ন দায়ে নগরীর কয়েকটি নামিদামি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিককে সাড়ে ২১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানে বেরিয়ে আসে, এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত টেকনিশিয়ানরাও স্বীকৃত কোনো ডিপ্লোমাধারী নন। অনেক ডায়াগনস্টিক ল্যাবে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশেই চলছে রোগ নির্ণয়ের কাজ। নেই বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থাও। এক্স-রে কক্ষে নেই সিসাযুক্ত দেয়াল। যে রেফ্রিজারেটরে রি-এজেন্ট বা রাসায়নিক দ্রব্য রাখা হয়, সেখানেই রাখা হয় দূষিত রক্তও। আর রোগ নির্ণয়ে অনেক সময় টেকনিশিয়ানরাই রিপোর্ট করেন। প্যাথলজিক্যাল বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের স্বাক্ষর থাকে না এসব রিপোর্টে।

 

এ অবস্থায় এসব অবৈধ অনুমোদনহীন স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র বন্ধ না হওয়ায় একশ্রেণীর অসত্ চিকিত্সক ও ব্যবসায়ীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক ও নার্সিং হোমের বিরুদ্ধে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

 

ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গেট এলাকার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালগুলোর এক হাজারেরও বেশি দালাল রয়েছে। এসব দালালই রোগীদের ভাগিয়ে নিয়ে আসে। পেশাদার এসব দালালের অনেকেই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অংশীদার। আবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনেক চিকিত্সকও জড়িত আছেন বলে জানা যায়।

 

বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাড়াও সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ ও রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রামের অসংখ্য মানুষ চিকিত্সা নিতে ময়মনসিংহে আসে। কিন্তু এসব অবৈধ স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের দৌরাত্ম্যে তারা ভুল চিকিত্সার পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

 

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগের লেকচারার ডা. আবু এএইচএম সুফিয়ান সাগর বলেন, ‘অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ টেকনিশিয়ানদের কারণে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল রিপোর্ট হতেই পারে। প্রতিনিয়ত অনেক রোগী প্রতারিত হয়ে আমাদের কাছে আসছেন। আমরা রোগীদের সবসময় সরকারি হাসপাতালে চিকিত্সা ও পরীক্ষা করাতে বলি। রোগীরাই প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যেতে আগ্রহী হয়ে থাকেন।’

 

এ বিষয়ে কথা হলে ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন ডা. খলিলুর রহমান বলেন, ‘অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে মানসম্পন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালগুলোকে লাইসেন্স দেয়ার ব্যাপারেও আমরা সবসময় আন্তরিক।’

 

ছবিঃ ময়মনসিংহ নগরী // লোক লোকান্তর

সর্বশেষ আপডেটঃ ১০:০০ পূর্বাহ্ণ | ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭