| ভোর ৫:২৩ - রবিবার - ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ৪ঠা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ময়মনসিংহ বিভাগে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা

লোক লোকান্তরঃ   ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলায় ৩১টি পর্যটন এলাকার মধ্যে সরকারিভাবে পরিচালিত হচ্ছে মাত্র ৪টি। এগুলো থেকে সরকার বছরে রাজস্ব পায় প্রায় অর্ধ কোটি টাকার বেশি। অন্য পর্যটন এলাকাগুলোর অবকাঠামো নির্মাণ ও সরকারিভাবে পরিচালিত হলে শুধু এ বিভাগ থেকেই বছরে কয়েক কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

 

ময়মনসিংহ জেলার ১৯টি পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র একটি সরকারিভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সেটি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা। ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে এ সংগ্রহশালা দেখতে আসেন ৩৫ হাজার ২২৭ জন পর্যটক-দর্শনার্থী। তাদের মধ্যে বিদেশিই ছিলেন ১০২ জন। এতে মোট ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯৮৯ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। জামালপুর জেলার একটি মাত্র সরকারি পর্যটন কেন্দ্র হলো লাউচাপড়া গারো পাহাড়। এ থেকে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের রাজস্ব আয় হয় মাত্র ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। শেরপুর জেলায় সরকারিভাবে পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে গজনি অবকাশ ও মধুটিলা ইকোপার্ক। আর বেসরকারিভাবে পরিচালিত হচ্ছে তারানি পানিহাতা পর্যটনকেন্দ্র। গজনি অবকাশ থেকে গত অর্থবছরে আয় হয় ২২ লাখ টাকার মতো। আর মধুটিলা ইকোপার্ক থেকে একই সময়ে আয় হয় প্রায় ২৫ লাখ টাকা। নেত্রকোনা জেলায় ৯টি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এর কোনোটিই সরকারি নয়। ফলে সরকার পাচ্ছে না কোনো রাজস্বও।

 

সুষ্ঠু রক্ষাণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে রাজা-জমিদারদের স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহ জেলার পর্যটন স্পটগুলো পর্যটক আকৃষ্ট করতে পারছে না। তবে বর্তমান সরকার ঐতিহ্যবাহী ও দর্শনীয় স্থানগুলোর সুষ্ঠু সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে পর্যটন স্পটগুলো গড়ে তুলতে পারলে বাড়বে পর্যটক, আসবে রাজস্বও। জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার পর্যাপ্ত প্রচার হলে দর্শনার্থী আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানান এ সংগ্রহশালার উপ-কিপার ড. বিজয় কৃষ্ণ বণিক।

 

জেলার অন্য পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন উদ্যান ও তৎসংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদ, মহারাজ সূর্যকান্তের বাড়ি, শশী লজ (মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ), আলেকজান্ডার ক্যাসেল (টিচার্স ট্রেনিং কলেজ পুরুষ), রাজ রাজেশ্বরী ওয়াটার ওয়ার্কস, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বোটানিক্যাল গার্ডেন, কৃষি মিউজিয়াম, মৎস্য জাদুঘর ও উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জার্মপ্লাজম সেন্টার। ত্রিশালে রয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, কবির স্মৃতিবিজড়িত বিদ্যাপিঠ দরিরামপুর নজরুল একাডেমি, গফরগাঁও উপজেলার জব্বার নগর (পাঁচুয়া) গ্রামে শহীদ আব্দুল জব্বার জাদুঘর। এছাড়া ফুলবাড়িয়ার এনায়েতপুরে রয়েছে অর্কিড বাগান, আলাদিনস্ পার্ক ও সন্তোষপুর রাবার বাগান।

 

উপমহাদেশে সুপরিচিত মুক্তাগাছা জমিদারবাড়ি (রাজবাড়ি) সংস্কার হওয়ায় পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

 

ময়মনসিংহ পৌর মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, ময়মনসিংহ শহরের শিল্পাচার্য সংগ্রশালার উল্টোদিকে ব্রহ্মপুত্র নদে বিশাল চর রয়েছে। এই চরের দুপাশে বেড়িবাঁধ দিয়ে আন্তর্জাতিকমানের একটি পার্ক নির্মাণ করলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করা সম্ভব।

 

 

জামালপুরঃ মনোমগ্ধকর ছোটবড় অসংখ্য সবুজ পাহাড়ে ঘেরা জেলার বকশীগঞ্জের গারো পাহাড়। প্রকৃতির উজাড় করা সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত ভারতের মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা এ জনপদে গেলে জুড়িয়ে যায় প্রকৃতি প্রেমিকদের মন। জামালপুর জেলা পরিষদ ১৯৯৬ সালে ২৬ একর জায়গাজুড়ে গারো পাহাড়ের চূড়ায় নির্মাণ করেছে ণিকা নামের পিকনিক স্পট।

 

জামালপুর জেলা থেকে ৫৫ কিলোমিটার এবং বকশীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তরে ভারতের তুরা পাহাড়ের পাদদেশে সরকারিভাবে প্রায় ১০ হাজার একর জায়গাজুড়ে গারো পাহাড়। বকশীগঞ্জের কামালপুর মিদ্যাপাড়া মোড় থেকে লাউচাপড়া পর্যটন কেন্দ্র পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার পাহাড়ি সড়ক শেরপুর জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন। এক যুগ আগে রাস্তাটি নির্মাণ হলেও ছোট দুটি ব্রিজ ও সড়কটি পুনর্নির্মাণ না করায় ৩৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে লাউচাপড়া পর্যটন কেন্দ্রে যেতে হয়।

 

জামালপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে লাউচাপড়া উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৬৬ লাখ ৭ হাজার টাকার ৪টি প্যাকেজ হাতে নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় কারণে এ খাত থেকে রাজস্ব কম আসছে। আশা করছি অতি শিগগির বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে।

 

 

শেরপুরঃ সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকায় ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন এবং বনবিভাগের উদ্যোগে মনোমুগ্ধকর ‘অবকাশ’ ও ‘মধুটিলা ইকোপার্ক’ নামে দুটি পর্যটন স্পট গড়ে উঠেছে। এছাড়া জেলায় রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান, যা পরিচর্যায় রূপান্তরিত হতে পারে পর্যটন এলাকায়।

 

১৯৯৫ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা সদর থেকে ২৮ এবং ঝিনাইগাতি উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার উত্তরে কাংশা ইউনিয়নে গজনি পাহাড়ের প্রায় ৯০ একর পাহাড়ি টিলায় ‘গজনি অবকাশ কেন্দ্র’ গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে এ স্পট লাভজনক বলে জেলা প্রশাসন সূত্র নিশ্চিত করে। থাকার জন্য ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য ৬ কবিশিষ্ট রেস্ট হাউস (শুধু দিনের বেলা ব্যবহারের জন্য)। ভিআইপিদের জন্য ২টি কসহ ৪ কবিশিষ্ট ‘অবকাশ ভবন’ এবং লেকের ওপর ২ কবিশিষ্ট ব্যক্তিগত ‘জিহান রেস্ট হাউস’ রয়েছে।

 

১৯৯৯ সালে নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তরে এবং জেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকায় ৩৮০ একর পাহাড়ি টিলার ওপর মধুটিলা ইকো পার্ক গড়ে তোলা হয়। এ এলাকায় বলতে গেছে সারা বছরই হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসুর পদচারণায় মুখর থাকে। পার্কের উঁচু টিলার ওপর তিন কামরাবিশিষ্ট সুদৃশ্য বাংলো বা ‘মহুয়া রেস্ট হাউস’ ব্যবহার করতে হলে ময়মনসিংহ অথবা শেরপুর বনবিভাগ অফিস থেকে ভাড়া নিতে হবে। বর্তমানে এ স্পটটি লাভজনক পর্যায়ে আছে বলে ময়মনসিংহ বনবিভাগের মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জের রেঞ্জার মো. জিল্লুর রহমান নিশ্চিত করেন।

 

 

নেত্রকানাঃ  পর্যটন এলাকা ঘোষণার মতো নদী ও পাহাড়ে সমন্বয়ে আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্থান রয়েছে নেত্রকোনায়। এর মধ্যে অন্যতম গারো পাহাড়ের আদিবাসী বসতি ও তাদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি। দুর্গাপুর-কলমাকান্দা উপজেলায় দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ কমলা রানির দিঘি, গারো পাহাড়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি, সোমেশ্বরী নদী, সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি, টংক আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ, সাধু যোসেফের ধর্মপল্লি, রাশিমণি স্মৃতিসৌধ, বিজয়পুর সাদামাটির পাহাড় ও নীল পানির লেক ইত্যাদি।

 

নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক ড. তরুণ কান্তি শিকদার জানান, দুর্গাপুর ও কলমাকান্দার পর্যটন এলাকা হওয়ার উপযোগী আকর্ষণীয় স্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ সব এলাকায় সরকারিভাবে কিছু স্থানে স্থাপনা নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে।

 

সূত্রঃ আমাদের সময়

ছবিঃ মেহেদী হাসান আবদুল্লাহ

সর্বশেষ আপডেটঃ ৫:৫৮ অপরাহ্ণ | ডিসেম্বর ৩০, ২০১৬