| সকাল ৬:১৪ - রবিবার - ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ৪ঠা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

মজিবুর রহমান খান ফুলপুরী’র সংক্ষিপ্ত জীবনী

মাসুদ রানা, ময়মনসিংহঃ   ময়মনসিংহ ফুলপুর উপজেলার রুপসই ইউনিয়নের পাগলা গ্রামের সাফায়েত হোসেন খান (সরল খা) এর ছেলে ছিলেন মজিবুর রহমান খান ফুলপুরী। ততকালীন মজিবুর রহমান খান ফুলপুরী ভারতবর্ষে ময়মনসিংহ সাহিত্য সংস্কৃতি সংবাদিক ও কৃষক প্রথা আন্দোলনের পুরোধা ব্যাক্তি ছিলেন মজিবুর রহমান ফুলপুরী। কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে এই উজ্জল নক্ষত্রের কথা। যেমন চলমান সংস্কৃতিও পথ হারায়। তীর ঘেষে নদীর স্রোত বহমান থাকলেও চরের জন্ম নেয়, তেমনি অতীত হারায় তার বাস্তবতাকে।প্রকৃতির এই সহজাত প্রবৃত্তি আমল পরিবর্তন ঘটায়। বর্তমান ও ভবিষ্যতকে মানুষ বেশি প্রাধান্য দিতে দিতে অতীত  ঐতিহ্য, বংশমর্যাদার ভাটা পড়ে।

 

জন্ম নেয় তৃক্ত ঘৃনা আর অহংচিন্তা, আর এভাবে হারিয়ে যায় শিল্প সংস্কৃতিও ইতিহাস। শিল্প সংস্কৃতিও ইতিহাস হারিয়ে গেলে দেশ ও জাতি হয় দেওলিয়া ও পরনির্ভরশীল। এভাবে কোন জাতি  ভবিষ্যতে টিকে থাকতে পারেনা। তাই পৃথিবীতে জন্ম নেয় মনী, ঋষি, পন্ডিত, পীর আউলিয়া, দরবেশ। তাদের কিছু প্রেরিত দূত সৎ নির্ভীক, আত্মশুদ্ধ, জ্ঞানী মানুষের মাঝে ক্রিয়াশীল, শুধু তারাই এ  পৃথিবীতে চির ভাস্কর হয়ে থাকেন। তাদেরই এক উত্তরসুরী ছিলেন প্রাজ্ঞ মজিবুর রহমান খান ফুলপুরী।

 

মজিবুর রহমান খান  ফুলপুরী  ময়মনসিংহ ফুলপুর উপজেলার রুপসই ইউনিয়নের পাগলা গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন তিনি। তার পিতার নাম সাফায়েত হোসেন খান (সরল খা), মাতা হাজেরা বিবি। মজিবুর রহমান খান ফুলপুরী, উপজেলার রুপসী ভাটা প্রাথমিক স্কুল থেকে পঞ্চম পাস করেন। পরে তিনি একই উপজেলার যতীন্দ্র হাই স্কুল থেকে নিম্ন মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ঐ সময়ে মজিবুর রহমান খান ফুলপুরী নিজেকে জড়িয়ে নেন, তৎকালীন স্বদেশী আন্দোলনের পাশাপশি শেরে বাংলা এ কে এম ফজলুল হক সাহেবের কৃষক প্রজা পার্টির সাথে সক্রিয় হয়ে উঠেন । এসময় কংগ্রেস নেতা সুর্য সোমের অনুপ্রেনায় কংগ্রেসে যোগদেন।

 

তিনি ছাত্রাবস্থায় স্বদেশী স্বেচ্ছাসেবক দলে এবং পরবর্তীতে প্রসিদ্ধ কংগ্রেসের বৃহত্তর ময়মনসিংহের ব্যাক্তিত সম্পুর্ন লোক ছিলেন। সৎ নির্ভীক সদালাপী স্পষ্ট বক্তা ভারত বর্ষের চিরভাস্কর মজিবুর রহমান খান ফুলপুরী। শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন একজন উচু মানের সু-সাহিত্যিক সাংবাদিক, রাজনৈতিক , কৃষকদের প্রাণ, কৃষক প্রজা আন্দোলনের বলিষ্ঠ কর্ণধার। কৃষকদেও ভাগ্যেও উন্মেষ ঘটানোর জন্য তিনি ১৯৩৬ সালে ২৬ জুন সাপ্তাহিক চাষী পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন এ পত্রিকার আজীবন সম্পাদক ও প্রকাশক। তার পত্রিকায় ছাপা হতো কৃষকদের জীবনকর্ম ইতিহাস। সবসময় তিনি তৃণমূল পর্যায়ের চিন্তা ভাবনা করতেন।

 

ঐ সময় তার পত্রিকাতে সুসং দুর্গাপুরের টঙ্গ প্রথার বিরুদ্ধে কৃষক প্রজা আন্দোলনের খবর প্রকাশ করে, তিনি কারাবরন হন। শেরে বাংলা এ কে এম ফজলুল হক ও প্রখ্যাত কবি বন্দে আলী মিয়ার সাথে পরিচয় হয়েছিল তার সাপ্তাহিক চাষী পত্রিকার মাধ্যমে।  মজিবুর রহমান খান ফুলপুরী ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবের (১৯৫৯) সনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি দির্ঘদিন সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। তবে মজিবুর রহমান খান ফুলপুরীর সহযোগী ছিলেন বর্তমান ধর্মমন্ত্রীর বড় ভাই ও প্রবীন সাংবাদিক জিয়া উদ্দিন।

 

প্রবীনদের মুখে শোনাযায় সাংবাদিক জিয়া মজিবুর রহমান খান ফুলপুরীর সাহেবের সাপ্তাহিক চাষী পত্রিকার সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখতেন। তিনি মত্যু কালেও তার পাশে ছিলেন। অন্যদিকে এ এইচ এম এড. আব্দুল মতিন (নাতি) মজিবুর রহমান খান ফুলপুরীর সাপ্তাহিক চাষী পত্রিকার অন্যতম সহযোগী ছিলেন।

 

মজিবুর রহমান খান ফুলপুরী ১৯৬৯ সালের ৭ই ফেব্ররুয়ারী ওল্ড পুলিশ ক্লাব রোডস্থ বাস ভবনে মত্যুবরন করেন। মৃত্যু কালে তার বয়স ছিল ৮০। তার মৃত্যুর সংবাদ কলকাতার আকাশবানী রেডিও থেকে পচার করা হয়। কালের বিভর্তে হারিয়ে যাচ্ছে মজিবুর রহমান খান ফুলপুরী নাম।

 

তার উত্তরস্বরীর পক্ষ থেকে সকারের কাছে দাবী জনান, তার ইতিহাস সম্বলিত তথ্য উদঘাটনের জন্য সরকার যাতে উদ্যোগ গ্রহন করে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৩:২২ অপরাহ্ণ | ডিসেম্বর ০৪, ২০১৬