| রাত ১:৩৬ - সোমবার - ২১শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ফুলবাড়িয়ায় আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ, নিহত-২, আহত শতাধিক

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ   ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজকে জাতীয় করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের হামলা, লাঠিপেটা ও সংঘর্ষে কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আবুল কালাম ও পথচারী ভ্যান চালক সফর আলী (৫৫) নামে দুজন নিহত হয়েছে। আহত হয় ১০ পুলিশ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে শতাধিক।

 

রোববার দুপুরে কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করতে চাইলে এঘটনা ঘটে। বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাড়ে ৩ ঘন্টাব্যাপী চলা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, গুলি ও সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়।

 

প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীরা জানায়, পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটায় কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আবুল কালামসহ গুরুত্বর আহত হয় কমপেক্ষ শতাধিক। পরে গুরুত্বর আহত ওই শিক্ষককে ময়মনসিংহের চুরখাই কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকাল ৪টার দিকে মারা যায়। এছাড়া পুলিশের লাঠিপেটায় সফর আলী নামে একজন পথচারী ঘটনাস্থলেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মারা যায়। পরে তাকে ফুলবাড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সফর আলীকে মৃত ঘোষণা করে। তারা জানায়, দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ যাকে রাস্তায় পেয়েছে তাকেই পিটিয়েছে।

 

15220149_1817401435142015_3322897016265332640_n

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানায়, প্রায় ৪ ঘন্টাব্যাপী চলা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এসময় এলোপাতারি কয়েকশ রাউন্ড গুলি ও রাবার বুলেট ছুঁড়েছে।

 

এব্যাপারে পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, পুলিশের উপর শিক্ষার্থীরা উশৃঙ্খল আচরণ করে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ আত্মরক্ষায় লাঠিচার্জ করে এবং ১৫/২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। নিহত দুজনই অসুস্থ ছিলো বলে জানান তিনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে বলে ও তিনি জানান।

 

এব্যাপারে ফুলবাড়িয়া থানার ওসি রিফাত খান রাজিব জানান, সফর আলী সংঘর্ষে মারা যায়নি। সে অসুস্থ ছিলো। তিনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১০/১৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়া হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত।

 

আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা জানায়, বহু পুরনো ফুলবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজকে জাতীয়করণ না করে নতুন ও এমপিও বিহীন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা মহাবিদ্যালয়কে জাতীয় করণ করায় ফুঁসে উঠে ফুলবাড়িয়াবাসী। এনিয়ে ক্ষুব্ধ ফুলবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জণ করে কলেজটি জাতীয়করণের দাবিতে টানা ৪৩ দিন ধরে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচী পালন করে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় রোববার দুপুর ২টার দিকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ প্রধান ফটকে আটকে দেয়। এসময় পুলিশ মারমুখী হয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ব্যাপক লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে পুলিশ কলেজের প্রশাসনিক ভবনে ঢুকে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পেটায়। পরে এসময় এক শিক্ষার্থী আটক করলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়।

 

pic-f-3

 

সংঘর্ষের সময় কলেজের সামনে সফর আলী নামে এক পথচারী ভ্যান চালক গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে পড়ে থাকে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এদিকে গুরুত্বর আহতদের মধ্যে সহকারী অধ্যাপক আবুল কালামকে ময়মনসিংহে কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকাল ৪টার দিকে মারা যান তিনি। এছাড়াও আহতদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয়করণ দাবী আন্দোলন কমিটি আহবায়ক সহকারী অধ্যাপক আবুল হাশেম, সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন,, সহকারী অধ্যাপক উপেন্দ্র চন্দ্র সহকারী অধ্যাপক ফজলুল হক, প্রভাষক রুমা আখতার, শিক্ষার্থী আসাদ, কামাল, রুবেল।

 

আহত ফুলবাড়ীয়া কলেজ সরকারিকরণ দাবি আদায় কমিটির আহবায়ক এসএম আবুল হোসেন ও যুগ্ম-আহবায়ক রুহুল আমীন জানান, বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশ কলেজের প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়েছে। এসময় পুলিশ নির্বিচারে গুলি ছুঁড়ে। যে কারনে আমাদের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আবুল কালামসহ দুজন মারা গেছে।

 

ক্রন্দনরত কন্ঠে শিক্ষক নেতা এসএম আবুল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, এমন পৈশাচিক মারধর চোর-ডাকাতকেও মারা হয় না। শিক্ষক মেহেদি হাসান অভিযোগ করেন, পুলিশকে শেষ পর্যন্ত বাপ-ভাই ডেকেছি, না মারার জন্য। কিন্তু কোনো কথাই কাজে আসেনি। এসআই রকিবুল ও তাজুলের নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসনিক ভবনে ঢুকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। তিনি বলেন, গুরুত্বর আহত আবুল কালাম স্যারকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে ৩টি এ্যাম্বুল্যান্স আনা হয়। কিন্তু বাঁধা দেয়। পরে কলেজের পিছন দিয়ে বের হয়ে কোনো রকমে চুরখাই সিবিএমসিবিতে ভর্তি করি। এরপর মারা যান তিনি।

 

নিহত শিক্ষক আবুল কালামের স্ত্রী একই কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারি  অধ্যাপক সাইফুন্নার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে অভিযোগ করেন, স্বামীকে উপযুক্ত সময়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে হয়তো বেঁচে যেতেন তিনি।

 

এদিকে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। পুরো ফুলবাড়িয়াজুড়ে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা ও আতংক।

সর্বশেষ আপডেটঃ ১২:২৬ পূর্বাহ্ণ | নভেম্বর ২৮, ২০১৬