| রাত ১:১১ - মঙ্গলবার - ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৩ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ভারত ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১৪২, উদ্ধার চলছে

লোক লোকান্তরঃ  ভারত এর উত্তর প্রদেশ রাজ্যের পুখরাইয়া এলাকায় ট্রেন দুর্ঘটনায় সোমবার নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪২ জনে দাঁড়িয়েছে। উদ্ধার অভিযান এখনো শেষ হয়নি। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

গত শনিবার ভোররাত তিনটার দিকে কানপুর থেকে ১শ’ কিলোমিটার দূরে পুখরাইয়া এলাকায় ইন্দোর-পাটনা এক্সপ্রেসের ১৪টি বগি লাইনচ্যুত হলে হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, লাইনচ্যুত বগিগুলো থেকে জীবিত উদ্ধারের আশা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে।

 

স্থানীয় সরকারের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। এছাড়া নিহতদের সবার বিশেষত যেসব লাশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা খুবই কঠিন। জেলা পুলিশ প্রধান জ্যাকি আহমেদ বলেন, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বগিগুলোর বেশিরভাগ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর এখন পর্যন্ত ঠিক কতজন আহত হয়েছেন তা বলা যাচ্ছে না।

 

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেয়াদোত্তীর্ণ এ বগিগুলো আগেও দুর্ঘটনায় পড়েছিল। আর রেল কর্মকর্তারা ট্রেনটিতে ১২০০ যাত্রী থাকার কথা বললেও আরও অন্তত ৫০০ যাত্রী বিনা টিকেটে ওই ট্রেনে ভ্রমণ করছিলেন বলে টাইমস অব ইন্ডিয়া’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

 

আঞ্চলিক রেলওয়ে নেটওয়ার্কের এক মুখপাত্র জানান, ঠিক কত জন যাত্রী ট্রেনে ছিলেন তা বলা কঠিন। তবে এ সংখ্যা অবশ্যই দুই হাজারেরও বেশি হবে।

 

সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, দুর্ঘটনার সময় বেশির ভাগ যাত্রী ঘুমাচ্ছিলেন। উত্তর প্রদেশের পুলিশ কর্মকর্তা দলজিৎ সিং চৌধুরী গত রোববার জানান, ভারী যন্ত্র দিয়ে দুমড়ে যাওয়া বগিগুলো কেটে আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধার করা হচ্ছে। আরও যাত্রী আটকে আছেন কি না, তল্লাশি করে দেখা হচ্ছে। টেলিভিশন ফুটেজে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া বগিগুলোকে একটির উপর আরেকটি উঠে থাকতে দেখা যায়।

 

দুর্ঘটনায় আহত কয়েকশ’ মানুষ কাছের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আজও স্বজনদের খুঁজতে অনেক মানুষ দুর্ঘটনাস্থলে ভিড় করছেন। এ দুর্ঘটনায় যারা বেঁচে গেছেন, নিজেদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা সংবাদমাধ্যমকে বর্ণনা করেছেন তারা।

 

ইয়াকুব আহমেদ নামে একজন হিন্দুস্তান টাইমস-কে বলেন, ‘ঘুম ভেঙে ভয়াবহ ঝাঁকুনি টের পাই। কর্কশ শব্দ করে ট্রেন থেমে যায়। আমি মানুষের ভিড়ের নিচে চাপা পড়ে যাই…সবাই সাহায্য চেয়ে চিৎকার করছিল।’

 

বেঁচে যাওয়া আরেক যাত্রী কৃষ্ণ কেশব বিবিসি-কে বলেন, ‘ঝাঁকি খেয়ে জেগে উঠি, দেখি বেশ কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। খুব ভয় পেয়েছিলাম।’

 

কর্মকর্তারা বলেছেন, তাৎক্ষণিকভাবে দুর্ঘটনার কারণ জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, রেললাইনের ত্রুটির কারণে এটা হয়ে থাকতে পারে।

 

বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কানপুর ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন, যে স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশ ট্রেন যাতায়াত করে। সোয়াশ কোটি মানুষের দেশ ভারতে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বিস্তৃত ট্রেন নেটওয়ার্ক ব‌্যবহার করে। কিন্তু যন্ত্রপাতি পুরনো হওয়ায় প্রায়ই সেখানে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে।

 

ভারত সরকার এ বছরের শুরুতে রেল লাইন ও ঝুকিপূর্ণ বগি সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছিল। এর আগে, গত বছর এ খাতের আধুনিকায়ন ও বিস্তৃতির জন্য পাঁচ বছরে ১৩৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

সর্বশেষ আপডেটঃ ২:১৯ অপরাহ্ণ | নভেম্বর ২২, ২০১৬