| সকাল ৭:২২ - রবিবার - ২১শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ৬ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৪ই মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

জেলা পরিষদ নির্বাচন এ ভোটার হচ্ছেন যারা

লোক লোকান্তরঃ  জেলা পরিষদ নির্বাচন এর অংশ হিসেবে বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতির মাধ্যমে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনে স্থানীয় সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জনপ্রতিনিধিরা ভোটার হবেন। কিন্তু প্রার্থীদের কোনো ভোটাধিকার থাকবে না।

 

এর আগে মঙ্গলবার জানানো হয়েছে যে, জেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। আর এ জন্য তফসিল ঘোষণা হবে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

 

এদিকে, বিদ্যমান আইনে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, আইনের সংশোধন হলে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনটি দলীয় প্রতীকে নাকি নির্দলীয় হবে, তা নিয়ে সৃষ্ট ধোঁয়াশাও কেটে যাবে। স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইন ২০০০ পর্যালোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকারের ৪টি প্রতিষ্ঠানের ৪ ধরনের জনপ্রতিধিরা এই নির্বাচনের ভোটার হবেন। স্থানীয় কোনও স্তরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জেলা পরিষদে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না থাকায় প্রার্থীদের ভোটাধিকার প্রয়োগেরও সুযোগ থাকছে না।

 

জেলা পরিষদ নির্বাচন ২০১৬
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের কার্যনির্বাহী সংসদ এবং আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচনের কথা জানান। ওই সময় তিনি বিদ্যমান আইনে এই নির্বাচন হবে বলে জানান। এর পরে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচনের আগে জেলা পরিষদ আইনের সংশোধনীর প্রয়োজনীয়তার কথা জানান। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এটি সংশোধনের উদ্যোগ নেবে।

 

জানা গেছে, আইনটির প্রয়োজনীয় সংশোধনীর উদ্যোগ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হয়েছে। এটা আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পরে মন্ত্রিসভায় তা অনুমোদন করা হবে।

 

এদিকে, গত বুধবার (১০ আগস্ট) জেলা পরিষদের সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচনের জন্য ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণে বিধিমালা জারি করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী প্রতিটি জেলায় ১৫ জন সাধারণ ও ৫ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচিত হবেন। এ হিসেবে সাধারণ সদস্য নির্বাচনের জন্য প্রত্যেকটি জেলাকে ১৫টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হবে এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের জন্য হবে ৫টি ওয়ার্ডে বিভক্ত।

 

কারা ভোটার হবেন জেলা পরিষদে
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের মেয়র/চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর/সদস্য, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর/সদস্য জেলা পরিষদের নির্বাচনমণ্ডলীর সদস্য/ভোটার হবেন।

 

এ বিষয়ে বিদ্যমান আইনের ১৭ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও সব কমিশনার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার চেয়ারম্যান ও সব কমিশনার এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সব সদস্যের সমন্বয়ে জেলার পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হবে।’ তবে উপজেলা পরিষদে দু’জন করে ভাইস-চেয়ারম্যান থাকলেও আইনটি প্রণয়নের সময় এ পদ দু’টি উপজেলা পরিষদ আইনে না থাকায় নির্বাচকমণ্ডলীতে তাদের উল্লেখ নেই। এক্ষেত্রে আইন সংশোধন করে এটা অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে।

 

এদিকে আইনে নির্বাচকমণ্ডলী হিসেবে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর/সদস্যের নাম স্পষ্ট করে বলা না থাকলেও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ মনে করেন সদস্য বলতে দুই ধরনের সদস্যইকে বোঝায়।

 

আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, সদস্য বলতে সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য উভয়কে বোঝায়। কাজেই সব সদস্যই নির্বাচকমণ্ডলী বলে গণ্য হবে। তবে, সংশোধনের মাধ্যমে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করলে ভালো হয়। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইনটি যখন প্রণীত হয়, তখন উপজেলা পরিষদে ভাইস চেয়ারম্যান পদটি ছিল না। যে কারণে এটা আইনে উল্লেখ নেই। তবে শুনেছি আইন সংশোধন হবে। তখন অবশ্যই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদটিও নির্বাচকমণ্ডলীতে যুক্ত হবে।

 

সংসদ সদস্যদের নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য করার বিরোধিতা করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যরা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সদস্য। কিন্তু সংসদ সদস্যরাও তা নন। কাজেই স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ নেই।

 

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আব্দুল মালেক বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার প্রক্রিয়া দ্রুত করা হচ্ছে। এজন্য প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন করা হচ্ছে। নতুন আইনে জেলা পরিষদে একজন নারীসহ দু’জন ভাইস চেয়ারম্যানের পদও সৃষ্টি করা হবে বলে তিনি জানান। এই নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে কিনা—এ সম্পর্কে তিনি কিছু জানাননি।

 

প্রার্থীদের ভোটাধিকার থাকবে না
জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হলেও তারা কোনও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না। আইনে বলা হয়েছে, নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য না হলে কোনও ব্যক্তি ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার যোগ্য হবেন না। আর আইনের অন্য একটি ধারায় বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদের সদস্য বা অন্য কোনও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বা সদস্য হলে তিনি প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন। অর্থাৎ অন্য কোনও সংস্থার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না হলে যেমন ভোটার হওয়া যাবে না তেমনই কোনও সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি হলে জেলা পরিষদে প্রার্থী হওয়া যাবে না।

 

জেলা পরিষদ নির্বাচনে কেবল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এ হিসেবে স্থানীয় সরকারের ৪টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬৭ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি এই নির্বাচনে ভোট দেবেন।এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি ভোটার হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদে। দেশে বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৭১টি। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গড়ে ১৩ জন করে প্রায় ৬০ হাজারের মতো নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে। এভাবে ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদে প্রায় দেড় হাজার, ৩২০টি পৌরসভায় সাড়ে ৫ হাজার এবং ১১টি সিটি করপোরেশনে প্রায় সাড়ে ৫০০ নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৩:৩৭ পূর্বাহ্ণ | অক্টোবর ২৭, ২০১৬