| সকাল ৬:২৭ - শনিবার - ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২০শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

ত্রিশালের প্রধান শিক্ষক বিহীন ৭৬ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্তের ভারে নুয়ে পড়েছে

এইচ.এম জোবায়ের হোসাইন, ত্রিশাল,
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ভারপ্রাপ্তের ভারে নুয়ে পড়েছে। উপজেলার ১৮০টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। সংশিৱষ্ট সূত্রগুলো বলছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০৯ সাল থেকে মামলা জনিত কারনে সহকারী শিৰক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি বন্ধ থাকায় মাঠ পর্যায়ে সরকারের পলিসি ও নীতি বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়াও বিদ্যমান বদলীর নীতিমালার আলোকে সিনিয়র শিক্ষকদের বদলীর কারনে প্রত্যন্ত এলাকার বিদ্যালয়গুলোর অভিজ্ঞ শিক্ষকগণ সকলেই সুবিধাজনক স্থানে বদলী হওয়ার কারনে জুনিয়র শিক্ষকগণ প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন, এতে করে প্রাথমিক শিক্ষায় ব্যাঘাত হচ্ছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ সব বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদেরই প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা দাপ্তরিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বিদ্যালয়ের পাঠদানে অন্য শিক্ষকদের বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে। এ ছাড়াও উপজেলার ১৮০টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০টি সহকারী শিৰকের পদ খালি রয়েছে। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক পদে ৬৫% পদোন্নতি ও ৩৫% সরাসরি নিয়োগ করার বিধান থাকলেও বান্তবায়নে তা না থাকায় এমন সমস্যার সম্মুখিন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বলে জানান সংশিৱষ্টরা।
ত্রিশাল উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, ত্রিশাল উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ১৮০টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যার মধ্যে ৭৬টি বিদ্যালয়ই চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে ৫-১০ বছর যাবত চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয় পরিচালিত হওয়ায় নুয়ে পড়ছে ত্রিশালের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস’া। অফিসিয়াল কার্যক্রম, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকান্ডে প্রধান শিক্ষকগণ প্রতিনিয়তই ব্যস্ত থাকার কারনে বিদ্যালয়গুলো যেন হয়ে পড়ে অভিভাবকহীন। পদোন্নতি না থাকায় ত্রিশাল উপজেলায় ২৭-৩৩ বছর যাবত সহকারী শিৰক পদে চাকুরী করছেন এমন শিক্ষকের সংখ্যাও রয়েছে অনেক।
উপজেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যনুযায়ী, পোড়াবাড়ী ক্লাস্টারে ১৫টি, ত্রিশাল পৌরসভায় ৩টি, ধানীখোলা ক্লাস্টারে ৮টি, সাখুয়া ক্লাস্টারে ৯টি, বিয়ারা ক্লাস্টারে ১৩টি, বিলবোকা ক্লাস্টারে ৪টি, আমিরাবাড়ী ক্লাস্টারে ১৭টি ও বাগান ক্লাস্টারের ৭টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে।
বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে, বাহাদুরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরমাদাখালী নতুন চর সপ্রাবি, ধলা নামাপাড়া সপ্রাবি, ধলা খাঁ পাড়া সপ্রাবি, মান্দাটিয়া সপ্রাবি, কুষ্টিয়া ২য় খন্ড সপ্রাবি, ঝিলকি সপ্রাবি, চাঁদবাড়ী সপ্রাবি, বড়মা সপ্রাবি, ফাতেমা জালাল সপ্রাবি, দেওপাড়া সপ্রাবি, তালতলা সপ্রাবি, বালিদিয়া কচিকাচা সপ্রাবি, বেকির চর মাদুশা সপ্রাবি, বানিয়া ধালা সপ্রাবি, যশ্বিদার কালিম উদ্দিন সপ্রাবি, মাগুরজোড়া সপ্রাবি, গোলাভিটা সপ্রাবি, হরিরামপুর পূর্ব সপ্রাবি, রায়েরগ্রাম সপ্রাবি, চাউলাদী সপ্রাবি, বড়গাও সপ্রাবি, কাঠাঁলীবন্দ সপ্রাবি, গুজিয়াম সপ্রাবি, কাচাচড়া সপ্রাবি, কুর্ষানগর সপ্রাবি, নামা বড়গাঁও সপ্রাবি, চান্দেরটিকি সপ্রাবি, নিঘোরকান্দা সপ্রাবি, চাউলাদী এম.এইচ সপ্রাবি, শেখ আব্দুল হাই একাডেমী সপ্রাবি, ধনিয়ারচালা সপ্রাবি, গুজিয়াম দৰিণ পাড়া সপ্রাবি, কোনাবড়ী সপ্রাবি, অলহরী জয়দা সপ্রাবি, অলহরী দুর্গাপুর সপ্রাবি, মঠবাড়ী উত্তর সপ্রাবি, আনিছ মান্নান সপ্রাবি, পাঁচপাড়া সরকার বাড়ী সপ্রাবি, আউলটিয়া কামাল উদ্দিন সপ্রাবি, লালপুর সপ্রাবি, জামতলী সপ্রাবি, বাদামিয়া সপ্রাবি, মঠবাড়ী সপ্রাবি, কুর্বয়াগাছা সপ্রাবি, নিজবাখাইল উত্তর সপ্রাবি, সানকিভাঙ্গা দৰিন সপ্রাবি, সানকিভাঙ্গা বিবাদিয়া সপ্রাবি, ফুটি সপ্রাবি, ১৬৯নং মঠবাড়ী সপ্রাবি, হরিয়াগুনি সপ্রাবি, খাঘাটি মধ্যপাড়া সপ্রাবি, খাঘাটি নতুন বাজার সপ্রাবি, রায়মনি দৰিন সপ্রাবি, বামনাখালী সপ্রাবি, চিকনা মনোহর সপ্রাবি, ধানীখোলা দক্ষিণ ভাটিপাড়া সপ্রাবি, দৰিন ধানীখোলা সপ্রাবি, উজানদাস পাড়া সপ্রাবি, সোনাখালী পাজলার চর সপ্রাবি, পলাশতলী সপ্রাবি, শিমুলিয়াপাড়া সপ্রাবি, সোনাখালী মধ্যপাড়া সপ্রাবি, ঝাইয়ারপাড় সপ্রাবি, ভাওয়ালিয়াপাড়া সপ্রাবি, ধানীখোলা ঝাইয়ারপাড় সপ্রাবি, চকরামপুর সপ্রাবি, বাবুপুর সপ্রাবি, সাখুয়া সপ্রাবি, কাজিরকান্দা সপ্রাবি, আখরাইল সপ্রাবি, কাকচর উত্তর সপ্রাবি, সাখুয়া শেখ বাজার সপ্রাবি, নগরচড়া সপ্রাবি ও বীররামপুর নামপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বিজ্ঞ মহল মনে করেন, যদি কোন মামলা জনিত কারনে পদোন্নতি বন্ধ থাকে তবে সে ক্ষেত্রে সরকার সিনিয়র শিৰকদের চলতি দায়িত্ব প্রদান করার নীতিমালা থাকলেও বাস্তবে এই নীতিমালার বাস্তবায়ন না থাকায় একদিকে যেমন সৃষ্টি হচ্ছে হতাশা আর অন্যদিকে মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন হচ্ছে বাধার সম্মুখিন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আহমেদ জানান, মাঠ পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষার সফল বাস্তবায়নে অতিদ্র্বত প্রধান শিৰক পদে ৩৫% সরাসরি নিয়োগ ও ৬৫% পদে পদোন্নতি/চলতি দায়িত্ব প্রদান করলে দ্র্বত এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু জাফর রিপন জানান, বিষয়টি আমি খোজ নিয়েছি, সংশিৱষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা করা হবে। আশাকরি দ্র্বত এর সমাধানের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যাগুলো সমাধান হবে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৬:২৬ অপরাহ্ণ | আগস্ট ০২, ২০১৬