| রাত ৩:৪৫ - সোমবার - ১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ৪ঠা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

মমেক হাসপাতালের রোগীরা সরকারী অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাচ্ছেন কি?

স্টাফ রিপোর্টার | ৪ মে ২০১৬, বুধবার

ময়মনসিংহে সরকারী অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের দারিদ্র অসহায় গরীব রোগীরা। ধরা যাক, গুরুতর অসুস’ কোনো রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। কিংবা আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য বড় শহরে পাঠাতে হবে। সে ক্ষেত্রে রোগী পরিবহনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স। তবে গুরুত্বপূর্ণ এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারন অসহায় দারিদ্র রোগীরা। ফলে সংকটাপন্ন রোগীদের উন্নত চিকিৎসায় ঢাকায় স’ানান-রের জন্য দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে ব্যক্তিগত মালিকানায় চলাচলকারী বা প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করতে হচ্ছে। মমেক হাসপাতালের তিনটি অ্যাম্বুলেন্স প্রায়ই বিকল বা অচল থাকায় রোগীরা বেশির ভাগ সময়ই অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা পান না। এ ছাড়া যখন সচল থাকে, তখনো একটি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা হয় মমেক হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণাধীন স’ানীয় আরেকটি হাসপাতালের রোগীদের জন্য খাবার সরবরাহ এর কাজে। এ ছাড়াও অন্য অ্যাম্বুলেন্সটিও হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীদের আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য দ্বিতীয় অভিযোগটি অস্বীকার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে প্রায় আড়াই হাজার রোগী ভর্তি হন। তাঁদের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে সাত থেকে আটজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বিশেষায়িত হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। হাসপাতালের তিনটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি অনেক দিন আগেই সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে। ২০০৫ ও ২০০৯ সালে সরবরাহ করা দুটি অ্যাম্বুলেন্স চালু থাকলেও মাঝেমধ্যেই সেগুলো বিকল হয়ে পড়ে। বর্তমানে একটি অ্যাম্বুলেন্স জরুরি ও রেফার্ড রোগী আনা-নেওয়ার কাজে এবং অন্যটি গুরুতর অসুস’ রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট থাকলেও সেটিও রেফার্ড রোগী আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে কখনো কখনো দুটি অ্যাম্বুলেন্সই একই সময়ে নষ্ট হয়ে যায়। আবার স’ানীয় এস কে হাসপাতালে খাবার সরবারাহ কাজেও ব্যস- থাকতে হয় একটি অ্যাম্বুলেন্সকে। ফলে সরকারি এ হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি গুরুতর অসুস’ হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি হন। তাঁর অবস’ার অবনতি ঘটলে ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় রেফার্ড করা হয় তাকে। ওই দিন মমেক হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুলেন্সই অচল থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়। গত ২৯ মার্চ ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়ি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার লোহাগাছা গ্রামে নেওয়ার জন্য সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি। সেদিনও হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সটি অচল ছিল। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক জানান, দুটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি শহরের কালীবাড়ি রোডের এস কে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের তিনবেলা খাবার সরবরাহে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যটি চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মীদের যাতায়াতের জন্য ‘সংরক্ষিত’ রয়েছে। একটি অ্যাম্বুলেন্স দীর্ঘদিন ধরে সম্পূর্ণ অচল রয়েছে। এ বিষয়ে মমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবুল আহসান প্রতিবেদককে জানান, রোগীদের সেবার জন্য অবিলম্বে দুটি অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এখনো এ বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। স’ানীয় এস কে হাসপাতালে খাবার আনা-নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে উপপরিচালক জানান, ওই হাসপাতাল মমেক হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণাধীন। তাই ওখানে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে তিনবেলা খাবার পাঠানো হয়। তবে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স চিকিৎসক ও কর্মী আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাছির উদ্দীন আহমদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। এদিকে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সংকটের কারণে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের ব্যবসা এখন রমরমা। মমেক হাসপাতালের সামনে, ভেতরে ও বাইরে অসংখ্য অ্যাম্বুলেন্স অপেক্ষমাণ থাকে। এরা রোগীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করে বলেও অভিযোগ রয়েছে এদের বিরুদ্ধে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে একজন রোগীকে ঢাকায় স’ানান-র করতে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের জন্য পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। অথচ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের জন্য প্রতি কিলোমিটার ১০ টাকা হারে খুব বেশি হলে আড়াই হাজার টাকা খরচ হতো। আলাপকালে হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা জানান, পাঁচশ শয্যা হাসপাতালের জন্য তিনটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। পাঁচ বছর আগে হাসপাতালটি এক হাজার শয্যায় উন্নীত হলেও সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সমপ্রসারণ করা অপরিহার্য বলে মনে করছেন। এ জন্য স্বাস’্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় বরাবর কমপক্ষে দুটি অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহের আবেদন জানানো হয়েছে। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান জরুরি ভিত্তিতে দুটি অ্যাম্বুলেন্স প্রদানের জন্য স্বাস’্যমন্ত্রীকে ‘ডিও’ লেটার দিয়েছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) ময়মনসিংহ শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মতিউর রহমান জানান, উপজেলা পর্যায়ে ৫০ শয্যা হাসপাতালের জন্য একটি করে অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। কিন’ এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য মাত্র তিনটি অ্যাম্বুলেন্স, যার একটি আবার সম্পূর্ণ অচল, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। তিনি বলেন, দিন দিন এখানে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন’ বাড়ছে না সুযোগ-সুবিধা। এটা খুবই দুঃখজনক।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৮:৫৯ অপরাহ্ণ | মে ০৪, ২০১৬