| দুপুর ২:৪৩ - শুক্রবার - ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

আজ ১৭ এপ্রিল গফরগাঁওয়ে বিমান হামলার ৪৫তম বার্ষিকী, ১৯ শহীদকে স্মরণ করেননা কেউ

আজহারুল হক, গফরগাঁও:  বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায়  যে প্রবাসী সরকার গঠন করা হয়, তার শপথ গ্রহণ হয় ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর আম্রাকাননে। পরে তা মুজিবনগর দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এই মুজিব নগর সরকারের সমর্থনে সেদিন সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ন্যায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়েছিল ময়মনসিংহের গফরগাাঁওয়েতে।

সেদিন  সকাল ৯টায় গফরগাঁওয়ের আকাশে শুরু হয় পাক বাহিনীর বিমান মহড়া। হতচকিত গফরগাঁওয়ের মানুষ। অল্পক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় বিমান আক্রমন। হানাদার বাহিনী সেদিন জঙ্গী বিমান থেকে গণহত্যার জন্য ফেলেছিল ন্যাপাম বোমা। প্রথম টার্গেট গফরগাঁও বাজারের তিনতলা বিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন আব্দুল বেপারী কমপ্লেক্স । এই সুউচ্চ ভবনেই সেদিন উড়ছিল স্বাধীন বাংলার পতাকা। এই ভবনের মালিক ছিলেন তৎসময়ের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী,সমাজ সেবক ও স্থানীয়ভাবে মক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের একজন আব্দুল বেপারী।gafargaon pic-16-04-16

সেদিনের ঘটনায় এমনই স্মৃতিচারণ করেন সত্তুরের নির্বাচনে আ.লীগ মনোনীত সাংসদ ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবুল হাশেম। সেদিনের বোমা হামলার প্রাক্কালে আব্দুল বেপারীসহ কয়েকজনে মিলে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে তাদের নিরাপদ স্থানে সড়ে যেতে বলছিলেন। এমনই সময়ে এসে তার ভবনের দক্ষিণের বারান্দা ঘেষে একটি বোমা বিস্ফেরিত হয়। আর এই বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে প্রথম শহীদ হলেন আব্দুল বেপারী। শহীদ আব্দুল বেপারীর স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে তার বড় ছেলে আজিজুল হক বলেন, বাবাসহ আরও ১৮ জনের লাশ সনাক্ত করে সেদিন দাফন করেছিলেন আবুল হাশেম এমপি। সেদিন আমরা এতিম হলেও আজও শহীদের সন্তান হিসেবে গর্ব বোধ করি। গফরগাঁওয়ের প্রবীণ লেখক, কবি মোহাম্মদ ফারুক তার লেখা নিবন্ধে বিমান আক্রমনে হতাহতদের কথা উল্লেখ করেছেন ১৫০ জনেরও বেশী । তবে তৎসময়ে সেই সব ক্ষত-বিক্ষত লাশের মধ্যে সনাক্ত করা গেছে ১৯ জনকে। সেদিনের বোমা হামলায় শহীদরা হলেন শহীদ আব্দুল বেপারী (রাঘাইচটি),আব্দুল মজিদ (শিলাসী), ছোবেদ আলী ( শিলাসী), মীর শাসছুদ্দিন (পুখুরিয়া), মীর জিয়াউল হক (ঘাগড়া), যমুনার মা (ষোল হাসিয়া), আব্দুল হাই (শিলাসী), আব্দুল মতিন (রাঘাইচটি), আব্দুল জলিল-কুলি (তেতুলিয়া), ইছর আলী ( শিলাসী), ভুলু (তেতুলিয়া), গোপেন চন্দ্র দেবনাথ ( ঠাকা), আব্দুল গফুর ( শিলাসী), আব্দুল হেলিম ( চং বিরই), মংলার বাপ ( আঠার বাড়ি), হাই মিয়া ( খারুয়া), কাইল্যা ( খারুয়া মুকন্দ), গফুর আলী ( জন্মেজয়) জয়নাল ( শ্রীপুর) । গফরগাঁও বাজারের তৎসময়ের ব্যবসায়ী ‘খোস মহল‘ রেস্টুরেন্টের মালিক এলাহী মিয়া বলেন,সেদিন সকালে সবে মাত্র মানুষ জন বাজারমুখী হচ্ছিল। এমন সময় বিমান মহড়ার বিকট শব্দে মানুষজন আতংকগ্রস্ত হয়ে ছোটাছুটি করছিল। আব্দুল বেপারীসহ গন্যমান্য কয়েকজন ব্যবসায়ী আমার স্টলে বসে চা খাচ্ছিল। তিনি দ্রুত উঠে বাজারের সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সড়ে যেতে চিৎকার করছিলেন। কয়েক মুহুর্ত পরেই শুরু হয়ে যায় বোমা হামলা। সেই হামলায় প্রথম শহীদ হলেন আমাদের সবার অভিভাবক জন দরদী আব্দুল বেপারী কাকা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর  ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ এমপি আবুল হাশেমের উদ্যোগে গফরগাঁও বাজারের প্রবেশ মুখে শহীদ আব্দুল বেপারীর নামে একটি তোরণ স্থাপন করা হয়েছিল। সেটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন সময়ের শিল্প মন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম। এখন আর এই দিবসটির কথা কেউ সেভাবে স্মরণ করেনা। প্রতি বছর শুধু শহীদ আব্দুল বেপারীর স্মরণে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে তার পরিবার। অনেকটা নীরবে নি:শব্দে চলে যায় গফরগাঁওয়ের শহীদদের এই শাহাদাত বার্ষিকী।

সর্বশেষ আপডেটঃ ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ | এপ্রিল ১৭, ২০১৬