| রাত ১০:০৩ - মঙ্গলবার - ২৩শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৬ই মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

খরস্রোতা শীলা ও সুতিয়া নদী এখন মরা খাল!

আজহারুল হক, গফরগাঁও | ১ এপ্রিল ২০১৬, শুক্রবার,

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের অধিকাংশ নদ-নদী এখন অসি-ত্ব সংকটে পড়ে। তেমনি অসি-ত্ব হারানোর উপক্রম হয়ে পড়েছে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত শীলা ও সুতিয়া নদীর। এক কালের খরস্রোতা এ দুটি নদী এখন শুধুই মরা খাল! অপরিকল্পিত ক্রসবাঁধ ও স্লুইসগেট নির্মাণ, অবৈধভাবে নদীর পাড় দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ও বাড়িঘর নির্মাণের ফলে শীলা ও সুতিয়া অসি-ত্ব সংকটে পড়ে বলে জানান এলাকাবাসি। বর্তমানে নদী দুটির প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকা শুকিয়ে গেছে। ফলে নদীর শুকিয়ে যাওয়া অংশে স’ানীয় কৃষকরা বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করেছেন।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, শীলা নদীর দৈর্ঘ্য ৭৩.২৫ ও সুতিয়া নদীর দৈর্ঘ্য ৩৮০ কিলোমিটার। এর মধ্যে শীলা নদীর উৎপত্তি হয় ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার দেওয়ান বাড়ি খাল, বোকা বিল, কান খাল এবং পাশ্ববর্তী নিচু এলাকা হতে। এরপর তা প্রবাহিত হয়ে গফরগাঁওয়ের ত্রিমোহনী এলাকায় গিয়ে সুতিয়া নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। অপরদিকে সুতিয়া নদী ময়মনসিংহ সদর উপজেলা থেকে উৎপত্তি হয়ে গফরগাঁওয়ের ত্রিমোহনী এলাকায় বানার নদীতে গিয়ে মিশেছে।
মশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহমদে, মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল আমীন খসর্ব (৮০), পিতা মৃত নূর হোসেন, গ্রাম বীর খার্বয়া, হাসমত আলী ভূইয়া (৭৫), পিতা মৃত আমছর আলী ভূইয়া, গ্রাম কান্দি জানান, গফরগাঁও উপজেলার দীঘা গ্রাম থেকে নিগুয়ারী ইউনিয়নে ত্রিমোহনী পর্যন- শিলা নদীর ওপর ১২টি স্লুইস গেইট রয়েছে। সেচ কাজের জন্য ১৯৮৫ সালে তৎকালীন সরকার এ স্লুইস গেইটগুলোর কাজ শুরু করে ১৯৯০ সালে শেষ করে। নির্মাণের পর থেকে এই স্লুইস গেইটগুলো কোন কাজে আসচে না। উপরন’ তা নদী দুটির মৃত্যু কারন হয়ে দাঁড়ায়। এক সময় সড়ক পথে পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ীরা স্বল্প খরচে শীলা ও সুতিয়া নদী দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পন্য পরিবহন করে করত। এছাড়া নৌকায় করে এ এলাকার মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসল ধান, গমসহ বিভিন্ন পন্য নিয়ে যেত উপজেলার বিভিন্ন হাটে। এখন নৌপথ বন্ধ থাকায় অধিক খরচে তাদের পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে। এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষক। নদীকে কেন্দ্র করে ছিল তাদের জীবন-জীবিকা। নদী দুটি অস্তিত্ব সংকটে পড়ায় এখন তারা চরম হতাশা আর অর্থ কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিতে শীলা ও সুতিয়া নদী ভরে উঠলেও খরা আসতে না আসতেই মরা খালে পরিণত হয়। নিগুয়ারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন জানান, শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় ‘শীলা নদী উপ-প্রকল্প’ এবং ‘আপার শীলা নদী-উপ প্রকল্প’ নামে দুটি সেচ প্রকল্প অকার্যকর হয়ে ১১ হাজারেরও অধিক হেক্টর জমিতে সেচকাজ ব্যহত হয়। বাংলাদেশের মানচিত্রে এখনো শীলা ও সুতিয়া নদীর স’ান থাকলেও বাস-বে নদী দুটির অসি-ত্ব এখন হুমকির মুখে। কোন কোন স’ানে নদী দুটি সম্পুর্ন হারিয়ে গেছে। এর ফলে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে এ অঞ্চলের মৎস সম্পদ। নদী দুটির বুকে এখন সবুজের সমারোহ। যতদুর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। বলা যায় শীলা ও সুতিয়া নদী এখন শুধুই স্মৃতি। ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ মূসা (চলতি দায়িত্ব) জানান, ব্রহ্মপুত্র নদসহ ময়মনসিংহের সকল নদীই নাব্যতা সংকট রযেছে। নদীগুলো খননের পরিকল্পনা থাকলেও বাস-বায়ন নেই। এক কথাই বলা যায় সহসাই খনন হচ্ছে না। শিলা-সুতিয়া নদীর প্রায় পুরোটা জুড়েই নাব্যতা সংকট। তবে এ দুই নদীর কোথাও দখল থাকলেও তা প্যাসিফিক বলা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৫:১৫ অপরাহ্ণ | এপ্রিল ০১, ২০১৬