| সন্ধ্যা ৭:১২ - সোমবার - ১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ৪ঠা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

প্রসাধনীতে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ

বাংলাদেশে উৎপাদিত ও আমদানিকৃত বেশিরভাগ প্রসাধনীতে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে।

এক গবেষণা প্রতিবেদনে শনিবার (০৫ মার্চ) এ চিত্র তুলে ধরেছে বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো)।

গত বছর রাজধানীর রাপা প্লাজা, চকবাজার, নিউমার্কেটহ কয়েকটি বড় বড় মার্কেট থেকে প্রসাধনী সামগ্রী সংগ্রহ করে তার নমুনা পরীক্ষা করে এসব ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি।

এসব মার্কেট থেকে প্রসাধনী সামগ্রী সংগ্রহ করে পাঠানো হয় থাইল্যান্ডের (EARTH XRF Lab) ল্যাব এবং ফিলিপাইনের (Eco-waste XRF Lab) ল্যাবে। এ দু’টি ল্যাবে পরীক্ষার পর যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়, সে অনুযায়ী প্রসাধনী সামগ্রীতে রয়েছে ক্ষতিকর উচ্চমাত্রার টাইটেনিয়াম।  যা মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী।

গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রায় ৭৮ শতাংশেরও বেশি রং ফর্সাকারী ও ব্লিচিং  ক্রিমে পারদের (মার্কারি) পরিবর্তে ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম ও টাইটেনিয়াম ব্যবহার করা হয়। এসব পদার্থের বেশিরভাগই ত্বক উজ্জ্বল  করতে সাধারণ ধাতু হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ রাসায়নিক পদার্থগুলো পারদের চেয়েও দ্বিগুণ ক্ষতিকর এবং এসব পদার্থ থেকে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

রং ফর্সাকারী ক্রিমে গড়ে আর্সেনিক রয়েছে ১৬৩০ দশমিক ০৬ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) । নাম উহ্য রেখে একটি বেবি লোশনের কথা বলা হয়েছে, যা বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় বেবি লোশন। এতে ২৪১ পিপিএম টাইটেনিয়াম এবং সব বেবি  লোশনে গড়ে ৯ দশমিক ০৩ পিপিএম  জিংক পাওয়া যায়।

এছাড়া অন্যান্য প্রসাধনীর তুলনায় ভেষজ (হারবাল) প্রসাধনীগুলোতে দ্বিগুণ পরিমাণ টাইটেনিয়াম ও অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। গবেষণায় দেখা  গেছে, ৮৬ শতাংশ ফেসওয়াশে অধিক মাত্রায় ক্যালসিয়াম রয়েছে, যার গড় পরিমাণ ৭১৩ পিপিএম। সব প্রসাধনীতেই আর্সেনিক রয়েছে অতিমাত্রায়।

যেসব প্রসাধীর নমুনা পরীক্ষা করা হয় তার ব্র্যান্ড নাম হচ্ছে, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ম্যাক্স ফেয়ারনেস, পন্ডস হোয়াইট বিউটি, হিমালিয়া হারবাল, গার্নিয়ার স্কিন ন্যাচারাল,  ক্লিন অ্যান্ড কেয়ার, ডাব বিউটি ময়েশচার।

হারবাল কেমিক্যালের মধ্যে রয়েছে, ফেসপ্যাক চন্দন স্কিন কেয়ার, নিম ন্যাচারাল বিউটিপ্যাক, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ফেয়ারনেস ক্রিম, ফেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসাম, মমতাজ হারবাল, বোটানিক অ্যারোমা ও তিব্বত ক্রিম।

শিশুদের প্রসাধনীর মধ্যে রয়েছে জনসন বেবি লোশন, মেরিল বেবি লোশন প্রভৃতি। ৩৩টি নমুনা প্রসাধনীর মধ্যে ১৪টি বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। ১০টি ভারতে, ৪টি থাইল্যান্ডে, একটি কানাডায়, একটি ফ্রান্সে, একটি ইন্দোনেশিয়ায়, একটি পাকিস্তানে এবং একটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে উৎপাদিত।

গবেষণাপত্রটি তুলে ধরেন সাবেক সচিব সৈয়দ  মাগুব মোর্শেদ। তিনি বলেন, পরীক্ষিত নমুনায় বিউটি লোশনগুলোতে অন্তত ৩ ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ সর্বোচ্চ পরিমাণে পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন এসব প্রসাধনী ব্যবহার করলে ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড.  আবু জাফর মাহমুদ বলেন, ক্ষতিকর এসব প্রসাধনী ব্যবহারে মানুষকে আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে। তাই প্রসাধনী ব্যবহারে সর্তক হওয়া দরকার।

রাজধানীর লালমাটিয়ায় এসডো’র প্রধান কার্যালয়ে গবেষণাপত্রটি তুলে ধরা হয়। এ সময় ইউএনইপি’র মার্কারি বিশেষজ্ঞ ড. শাহরিয়ার হোসেন এবং এসডো’র নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৯:০০ অপরাহ্ণ | মার্চ ০৫, ২০১৬