| রাত ১:৫০ - বৃহস্পতিবার - ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

তাড়াইলে সেকান্দরনগর গুচ্ছগ্রামের শিশুরা শিক্ষার আলো বঞ্চিত

আমিনুল ইসলাম বাবুল, তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ), ৬ জানুয়ারি ২০১৬, বুধবার,
পড়ালেহা করতে ইচ্ছা করে। ইসকুুলে যাইতে মন চায়। কিন্ত আমরার এইহানে কোনো ইসকুল নাই। তাই লেহাপড়া করতে পারি না। ইসকুলেও যাইতে পারি না। কোথায় লেখাপড়া কর জানতে চাইলে মলিনমুখে এভাবেই উত্তর দিয়েছে মুক্তার হোসেন (৭) নামের এই শিশুটি। শুধু মুক্তার হোসেনেই নয় গায়ে হাওরের কাদাপানিমাখা ময়লা পোষাকে ছুটাছুটি করে ঘুরে বেড়ানো মাহমুদা আক্তার (৮), তোফাজ্জল হোসেন (১০), এনামুল হক (১১) সহ এমন অনেক শিশুই আক্ষেপ করে একই কথা জানায়। ঘটনাস’ল কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার ধলা ইউনিয়নের সেকান্দরনগর গুচ্ছগ্রাম। এ গুচ্ছগ্রামে বিদ্যালয় গমনুপযোগী ৬ থেকে ১২ বছর বয়সের শতাধিক শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে বেড়ে উঠছে। গুচ্ছগ্রামটিতে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় শিশুরা তাদের মৌলিক অধিকার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের শেষ দিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে উপজেলার ধলা ইউনিয়নের শুনুই হাওরে সেকান্দরনগর মৌজার ৮ একর ২০ শতাংশ সরকারি খাস জমিতে সেকান্দরনগর গুচ্ছগ্রামটি গড়ে তোলা হয়। এ গুচ্ছগ্রামে পুর্নবাসিত পরিবার ৭০টি।
শুনুই হাওরে মাঝখানে চারদিকে হাওর বেষ্টিত মূল ভূ-খন্ড বিচ্ছিন্ন সেকান্দরনগর গুচ্ছগ্রামটির অবস্থান। এ গুচ্ছগ্রামটিতে যাতায়াতের জন্য হাওরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত কাঁচা একটি সরম্নরাসত্মা ছাড়া কোন ভালো রাসত্মা নেই। এ রাসত্মা দিয়ে কোন যানবাহন চলাচল তো দুরের কথা, পায়ে হাটাও কষ্টকর। বর্ষাকালে এ রাস্তাটিও পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে শুকনো মৌসুমে পায়ে হেটে এবং বর্ষায় নৌকাই গুচ্ছগ্রামে পুর্নবাসিত পরিবারগুলোর একমাত্র অবলম্বন। এই গুচ্ছগ্রামটির সাড়ে তিন কিলোমিটার দুরে উত্তর সেকান্দরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৪ কিলোমিটরি দুরে সেকান্দরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান। দুর্গম হাওরের মধ্যদিয়ে ফাকা মাঠে এবড়ো-থেবড়ো মেঠোপথ পেরিয়ে পায়ে হেটে দুরবর্তীস্থানের ওই বিদ্যালয়গুলোতে যাওয়া-আসা করা কোমলমতি এই শিশুদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। সম্প্রতি ওই গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা তাঁদের নিজ উদ্যোগে শিশুদের আরবি শিক্ষা দেয়ার জন্য একটি মক্তব চালু করে। কিন্ত অর্থাভাবে এখন সেটিও বন্ধ হওয়ার পথে।
গত ৫ জানুয়ারি সরেজমিনে ওই গুচ্ছগ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত এ গুচ্ছগ্রামে পুর্নবাসিত পরিবারের শিশুরা দলবেঁধে হাওরে ছুটাছুটি করছে। আবার অনেক শিশুই তাদের পরিবারের বাড়তি সচ্ছলতার জন্য অন্যের জমিতে অতি অল্প টাকায় শ্রম বিক্রি করছে।
হাওরের মাঝখানে অবসি’ত এ গুচ্ছগ্রামটির চারপাশে কোন প্রতিরক্ষা দেয়াল না থাকায় প্রতি বছর বর্ষার পানির ঢেউয়ে বিভিন্নস্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এ গুচ্ছগ্রামে বিদ্যুৎ পৌছনি, এর বাসিন্দারা বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এখানকার স্যানিটেশনের অবস্থা খুবই নাজুক। তাঁদের বেশীরভাগ বাড়িতে স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিন বা পায়খানা নেই। এ গুচ্ছগ্রামে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটি ভালো না থাকায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মীরা রীতিমত আসা-যাওয়া করে না। যার ফলে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিকাংশ পরিবারের তিন-সর্বোচ্চ সাতটি পর্যন্ত ছেলে-মেয়ে রয়েছে। গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা রেনু মিয়া (৩৮) বলেন, স্কুল না থাকায় তাঁর ৭ বছর বয়সী একটি ছেলেসহ বিদ্যালয় গমনুপযোগি শতাধিক শিশু লেখাপড়া করতে পারছে না।
সাহাবুদ্দীনের স্ত্রী তহুরা খাতুন (৪০) বলেন, গুচ্ছগ্রমটিতে স্কুল ও যাতায়াতের কোন ভালো রাসত্মা নেই। গত ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট চাইতে আসা প্রার্থীরা স্কুল ও রাস্তা করে দেয়ার আশ্বাস দিলেও ভোটের পড়ে আর কেউ খবর নেয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুলতানা আক্তার বলেন, সেকান্দরনগর গুচ্ছগ্রামটি আমি পরিদর্শন করেছি। এখানে উপ-আনুষ্ঠানিক শিড়্গা কার্যক্রম চালু করার লক্ষে কোনো বেসরকরি সেচ্ছাসেবি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দ্রত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াতের সড়কটি পুনঃনির্মাণ করা হবে বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৪:৫৪ অপরাহ্ণ | জানুয়ারি ০৬, ২০১৬