| রাত ৩:২৯ - শনিবার - ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২৪শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

কসমেটিক সার্জারি ফেরাবে হাসি

অনলাইন ডেস্ক |১৪ নভেম্বর ২০১৫, শনিবার,

হাসিতে হৃদয় জয়, হাসিতে ভুবন জয়।হাসি বিধাতার এক বিশেষ দান। হাসি আর বিবেকবোধ মানুষকে অন্য ইতর প্রাণী থেকে আলাদা করেছে। কষ্টে মানুষ যেমন কাঁদে,  তেমনই ইতর প্রাণীর চোখেও জল আসে।  কিন্তু মানুষের মতো ইতর প্রাণী হাসতে পারে না। হাসিতে মুগ্ধ হয়ে ‘মোনালিসার মিষ্টি হাসি’ বিশ্ব বিখ্যাত শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি রঙের তুলি দিয়ে ফ্রেমে বন্দি করেছিলেন। রসিক কবিরা বলেন, মেয়েরা নাকি তাদের হাসি দিয়েই পুরুষদের মন জয় করে৷ অনেকেই বিশ্বাস করেন, মানুষের চেহারার সম্পূর্ণ সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যায় যদি তার মুখে হাসির ঝলক না থাকে।
এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা নিজের হাসিতে সন্তুষ্ট নন৷নিজের হাসিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে কসমেটিক  ‘জ’ সার্জারির ওপর নির্ভর করে  খোদার ওপর খোদকারি করছেন অনেকেই৷ যেমন কিছুদিন আগেই বলিউডের জনপ্রিয় নায়িকা করিনা কাপুর ‘জ ইমপ্ল্যান্ট’ করিয়েছেন৷যাঁদের সৌন্দর্যে কাত হচ্ছেন আট থেকে আশি তারাও এখন আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্যে নিজেদের হাসি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছে৷ এমন অনেককেই  যিনি সুন্দর হাসি দিয়েছেন সেই ডা: কমলেশ কোঠারি’র কাছ থেকে  কসমেটিক জ সার্জারি’ সম্পর্কে জানলেন দেবযানী সরকার

প্রশ্ন :  আকর্ষণীয় হাসি পাওয়ার লোভে অনেকেই এখন কসমেটিক ‘জ সার্জারি’ করাচ্ছেন৷এই সার্জারিতে কি আদৌ সেটা সম্ভব?
ডা: কমলেশ কোঠারি:  সুন্দর হাসি মূলত নির্ভর করে দাঁত, চোয়াল ও ঠোঁটের গড়নের ওপর৷ এই তিনটের মধ্যে কোনও একটা যদি সঠিক না হয় তাহলে চোখ, নাক যতই সুন্দর হোক না কেন মুখমন্ডলে একটা খুঁত থেকেই যায়৷ কসমেটিক ‘জ সার্জারি’ বা ‘জ রিঅ্যালাইনমেন্ট’ সার্জারিতে সেটা ঢেকে দেওয়া সম্ভব হয়৷ধরুন কারোর মাড়ি উঁচু বা দাঁতের ওপরের পাটি মুখের বাইরে চলে আসে কিংবা কারোর ঠোঁট কাটা, এই ধরনের ক্রিটিক্যাল কেসগুলো সার্জারির মাধ্যমে মুখমন্ডলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়৷তবে অনেক সময় সার্জারি না করেও ‘জ রিঅ্যালাইনমেন্ট ’ সম্ভব৷

প্রশ্ন : এই ধরনের সার্জারিতে রিস্ক ফ্যাক্টর কী কী থাকে?
ডা: কমলেশ কোঠারি: এখন আগের তুলনায় রিস্ক ফ্যাক্টর অনেক কমে গেছে৷একমাত্র ইনফেকশন না হলে সেকেন্ড টাইম সার্জারির আর দরকার পরে না৷ আগে চোয়ালের সার্জারিতে  স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহার করা হত৷তাতে ২৫ শতাংশ রিস্ক থাকত৷ এখন টাইটেনিয়াম প্লেটস ব্যবহার করা হয়৷এতে ২ শতাংশ রিস্ক থাকে৷

প্রশ্ন : ইনফেকশন  থেকে কি কোনওভাবে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে?
ডা: কমলেশ কোঠারি: না৷ক্যান্সারের কোনও সম্ভাবনা নেই৷

প্রশ্ন : সার্জারির পর আপনারা সাধারণত কী ধরনের ডায়েট সাজেস্ট করেন?
ডা: কমলেশ কোঠারি: সার্জারির পরের দিন থেকে প্রথম ৮-১০ সপ্তাহ আমরা লিকুইড ডায়েটে থাকতে বলি৷ তারপর সবকিছু খাওয়া যায়৷

প্রশ্ন : এই সার্জারি পর ভবিষ্যতে কি কোনও সমস্যা হতে পারে?
ডা: কমলেশ কোঠারি: নাঃ৷ প্রথম তিনমাস একটু সচেতনভাবে খাওয়াদাওয়া করলে কোনও সমস্যা হয় না৷

প্রশ্ন : সার্জারির পর কি ডাক্তারের অবজারভেশনে থাকার দরকার পড়ে?
ডা: কমলেশ কোঠারি: সার্জারির পর প্রথম তিনমাসে তিন বার, এরপর পরের তিন মাসে একবার, তারপর পরের ছমাসে একবার৷

কলকাতা24×7: এই সার্জারিটা করতে কতক্ষণ সময় লাগে?
ডা: কমলেশ কোঠারি: এটা ডিপেন্ড করে৷১ ঘণ্টাতেও হতে পারে আবার  ৬ ঘণ্টাও লাগতে পারে৷তবে এর বেশী সময় লাগে না৷

প্রশ্ন : সার্জারির পর কতদিন বিশ্রামে থাকতে হয়?
ডা: কমলেশ কোঠারি: ১৫ থেকে ২০ দিন৷smile-2

প্রশ্ন : এই ধরনের সার্জারি কারা বেশি করান, মহিলা না পুরুষ?
ডা: কমলেশ কোঠারি: মহিলাদের পার্সেন্টেজই বেশি৷ এদের মধ্যে অবিবাহিত মহিলাদের পার্সেন্টেজ বেশি৷ শুনলে অবাক হবেন, পুরুষরা যাঁরা আমার কাছে  ‘কসমেটিক জ সার্জারি’ করাতে আসেন তাঁরা আসেন নিজেদের কেরিয়ারে উন্নতির জন্য৷মার্কেটিং বা মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টটেটিভরাই বেশী আসেন৷

প্রশ্ন : মূলত কোন বয়সীরা বেশী আসেন?
ডা: কমলেশ কোঠারি: ১৮-৩০৷১৭ বছরের আগে এই ধরনের সার্জারি করা উচিত নয়৷

প্রশ্ন : বেশী বয়সীদের ক্ষেত্রে কি এই ধরনের সার্জারি করা যায়?
ডা: কমলেশ কোঠারি: যদি পেসেন্ট সুস্থ থাকে তাহলে কোনও অসুবিধা নেই৷সাধারণত বয়স হলে ডায়াবেটিসের একটা সমস্যা দেখা দেয়৷ ওটাকে কন্ট্রোল করার পর সার্জারি করা যেতেই পারে৷ তিনটে সমস্যা থাকলে এই সার্জারি হয় না৷১. হাই ডায়াবেটিস, ২. স্টেরয়েড থেরাপি, ৩. ব্লাড ডিসওর্ডার৷

প্রশ্ন : পেসেন্টরা মূলত  অর্থনৈতিকভাবে কোন শ্রেণি থেকে বেশি আসেন?
ডা: কমলেশ কোঠারি: অনেকেই ভাবেন খুব রিচ ফ্যামিলির লোকজনই হয়তো এই ধরনের সার্জারি বেশী করায়৷কিন্তু একেবারেই তা নয়৷বরং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বেশী আসে পেসেন্টরা৷ কারণ ওই সমস্ত পরিবার থেকে যাঁরা আসেন তাঁরা মূলত অবিবাহিত৷মুখের সামনের অংশটা খারাপ বলে অনেকরই বিয়ের একটা সমস্যা হয়৷

প্রশ্ন :কীরকম খরচ পড়ে?
ডা: কমলেশ কোঠারি: এটা ডিপেন্ড করে৷ মোটামুটি ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত৷

প্রশ্ন : আচ্ছা, যদি আপনার কাছে কেউ এসে বলে সুচিত্রা সেন, মাধুরী দিক্ষিত কিংবা হৃতিক রোশনের মতো করে দিন তাহলে কি সেটা সম্ভব?
ডা: কমলেশ কোঠারি: একেবারেই না৷আমার কাছে এই ধরনের কেস আসলে আমি এগুলো একদমই নিই না৷এগুলো হচ্ছে সাইকোলজিক্যাল ডিসওর্ডার৷ধরুন কারোর মুখ গোল৷ সেই মুখে হৃতিকের হাসি কিভাবে সম্ভব? হৃতিকের মুখ তো লম্বা৷ এটা পুরোটাই ঠিক করা হয় মুখের আদলের ওপরে৷

সর্বশেষ আপডেটঃ ১:২৬ অপরাহ্ণ | নভেম্বর ১৪, ২০১৫