| রাত ৯:৪৭ - রবিবার - ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২৫শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

‘খালেদা জিয়া ও তার ছেলে বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন’

অনলাইন ডেস্ক | ১২ নভেম্বর ২০১৫, বৃহস্পতিবার,

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ যখন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে তখন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে বাংলাদেশে বিদেশি খুন করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন। বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। তাই যারা নির্বাচন ঠেকাতে মানুষ খুন আর সরকার উৎখাতে মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে তাদের সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে।

তিনি আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বগুড়া শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় একথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বগুড়ায় হয়ত কখনই আওয়ামী লীগ ১-২টির বেশি আসন পায়নি। কিন্তু তাই বলে কখনও বগুড়াকে অবহেলা করা হয়নি। বরং বগুড়ার উন্নয়নে কাজ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ বগুড়ার উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছে। বগুড়ার মানুষ নৌকায় ভোট না দিলেও আমরা এখনও বগুড়ার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। কারণ আমরা সুষম উন্নয়নে বিশ্বাসী। অথচ এই জেলার মানুষ যাদেরকে ভোট দিয়ে বারবার নির্বাচিত করে তারা উন্নয়নের পরিবর্তে মানুষ খুন এবং সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট হরতাল অবরোধের নামে মানুষ হত্যা করেছে। বাস-ট্রাকে পেট্রোল বোমা মেরে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। নির্বাচনে না গিয়ে খালেদা জিয়া যে ভুল করেছেন তার খেসারত দিচ্ছে তার দলের নেতাকর্মীরা।

বগুড়াবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বগুড়ায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পাশাপাশি একটি বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর থেকে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু পর্যন্ত রেল যোগাযোগ সহজ করা হবে। সেই সাথে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ, যমুনা নদীতে ড্রেজিং করা হবে। বগুড়াবাসীর প্রাণের দাবি বগুড়া পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশন, দুটি হাইস্কুল সরকারিকরণ, ফুটবল স্টেডিয়াম ,বগুড়া প্রেস ক্লাব ভবন নির্মাণের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি প্রধানমন্ত্রী।   বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনুর পরিচালনায় জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আজ খালেদা জিয়ার বাড়িতে লক্ষ মানুষের ঢল নেমেছে। আওয়ামী লীগ জনগণকে ভয় করে না। আওয়ামী লীগ সামনা-সামনি লড়াইয়ে বিশ্বাসী। ২০১৯ সালের আগে দেশে কোনো নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই এবং সে নির্বাচনও হবে নির্বাচিত সরকারের অধীনেই। তখন নির্বাচনের মাঠে দেখা হবে।

জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সমস্য হাবিবর রহমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ভূমি মন্ত্রী ও পাবনা জেলা সভাপতি শামছুর রহমান ডিলু, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ডাক্তার সিদ্দিকুর রহমানসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ প্রমূখ।

প্রধানমন্ত্রী বগুড়া সেনানিবাস থেকে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে পৌঁছে ডিজিটাল বোর্ডের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৭শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ১৫টি প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন করেন।  জনসভা উপলক্ষ্যে বগুড়া শহরে ব্যাপক লোক সমাগম হয়। ২৫ হাজার লোকের ধারণ ক্ষমতার আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় আশেপাশের রাস্তায় বসে প্রধানমন্ত্রীর ভাষন শুনেন লোকজন। বগুড়া ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাস-ট্রাকে চড়ে জনসভায় যোগদান করেন।

প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে বগুড়া শহরের সবগুলো মার্কেট এবং দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়। শহরের ভিতর ইঞ্জিনচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। তবে রোগীবাহী কিছু যানবাহন চলাচল করে পুলিশের নির্দেশনায়। শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথার আশে পাশের হোটেল-রেস্তরাঁগুলোও বন্ধ ছিল। ফলে শহরবাসীর পাশাপাশি জনসভায় আগত অসংখ্য মানুষ খাবার ও পানি সংকটে পড়েন। এ কারণে পুরো শহরে হরতালের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। জনসভাস্থল আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠের আশে পাশে এবং সার্কিট হাউজের পাশের রাস্তা বন্ধ করে রিক্সাসহ কোনো ধরনের যানবাহন চলতে দেয়া হয়নি।

জনসভায় যোগদিতে আসা নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। মহাসড়কে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি টহল দেয়। শহরের প্রবেশ পথগুলোতে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশী করে শহরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। সকাল থেকে জনসভার স্থল আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রাখে। সকাল ১০টার পর থেকে জনসভাস্থলে নেতাকর্মীরা আসতে থাকে। এসময় অনেকে হাতে চিড়া, গুড় ও পানি নিয়ে জনসভায়স্থলে প্রবেশ করেন। দোকানপাট বন্ধের কারণে শুকনা খাবার ও পান সিগারেট পাওয়া যায়নি অনেক স্থানে। তাই দুপুর ১২টার মধ্যেই জনসভাস্থল পূর্ণ হয়ে যায়। এরপর মানুষ রাস্তায় দাঁড়ায়। তাই খেলার মাঠের চারিদিকে অর্ধকিলোমিটার জুড়ে মাইক লাগানো হয় এবং কয়েকটি বড় পর্দায় ভাষণ প্রচার করা হয়।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৮:৫৩ অপরাহ্ণ | নভেম্বর ১২, ২০১৫