| দুপুর ১২:২৩ - বুধবার - ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

৪ জেলা নিয়ে নিকারের বৈঠকে ময়মনসিংহ বিভাগ অনুমোদন করায় ময়মনসিংহে বইছে আনন্দের জোয়ার, মিষ্টি বিতরণ

 

মতিউল আলম,  ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫, সোমবার,
উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ জেলা ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণা দেয়ায় সর্বস-রের মানুষের মাঝে বইছে আনন্দের জোয়ার।  বিভিন্ন গনমাধ্যমে বিভাগ ঘোষণার খবর শুনে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। আজ কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইলকে বাদ দিয়ে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোণা এই চার জেলা নিয়ে এটি হলো দেশের অষ্টম বিভাগ।  বিভাগ ঘোষণার পর আজ বিকেলে পৌর মেয়র ইকরামূল হক টিটুর পক্ষ থেকে এক বিশাল আনন্দ মিছিল বের করে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা নাগরিক আন্দোলন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক আনন্দ মিছিল করেছে। এ ছাড়াও গভীর রাত পর্যন্ত ময়মনসিংহ শহরের অলিতে-গলিতে খন্ড খণ্ড আনন্দ মিছিল বের করা হয়।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় ধর্মমন্ত্রীর সভাপতিত্ব করার কথা ছিলো। বিভাগ ঘোষণায় ধর্মমন্ত্রী ও ময়মনসসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মতিউর রহমান সোমবার হঠাৎ ময়মনসিংহবাসীদের সাথে আনন্দে যোগ দেন। সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিভাগ ঘোষণায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনার প্রতি  সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞ জানিয়ে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়নের অনুরোধ জানালে প্রধানমন্ত্রী বলেন ২টি জেলা তো ময়মনসিংহ বিভাগে আসতে চায় না। তখন ধর্মমন্ত্রী বলেন, নেত্রী কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলা যদি আসতে না চায় তাহলে ২টি জেলাকে বা দিয়েই বিভাগ ঘোষণা করার জন্য পুনরায় অনুরোধ জানালে তার প্রতিউত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ (সোমবার) থেকে ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণা করা হলো বলেন ধর্মমন্ত্রী। তিনি প্রধানমন্ত্রীর জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন। বিভাগ বাস্তবায়নের ব্যাপারে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালানোর জন্য বিরোধী দলীয় নেতা ও বেগম রওশন এরশাদ এমপিকেও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

বিরোধীদলীয় নেতা ও ময়মনসিংহ সদরের এমপি বেগম রওশন এরশাদ এক বিবৃতিতে নিকার বৈঠকে ৪ জেলা নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম বৃহত্তর ময়মনসিংহকে ৪টি জেলা নিয়ে বিভাগ ঘোষনার নীতিগত সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে এঅঞ্চলের উন্নয়নে সুযোগ করে দেয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। আজ মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় জেলা জাতীয় পার্টির উদ্যোগে এক সমাবেশ ও র‌্যালী করবে বলে জানান। এতে বেগম রওশন এরশাদ প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন।
বিভাগ বাস্তবায়নের দীর্ঘ ২৬ বছর আন্দোলনের পর সোমবার নিকারের বৈঠকে ময়মনসিংহ বিভাগ অনুমোদন দেয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। তারা হলেন- জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও ময়মনসিংহ সদর আসনের সংসদ সদস্য বেগম রওশন এরশাদ এমপি, ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ও জেলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ইকরামূল হক টিটু, বিভাগ বাস্তবায়ন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান খান, মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবু আলী, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম মোশাররফ হোসেন, ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নূরুল আমিন কালাম, ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কোতুয়ালী বিএনপির সভাপতি কামরুল ইসলাম মোঃ ওয়ালিদ, জেলা জাসদের সভাপতি অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ট্যাক্সেস বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাদিক হোসেন, জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত, জেলা ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ সুজিত বর্মণ, ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী মোঃ ইয়াসিন, ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আতাউল করিম খোকন, ময়মনসিংহ সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি এম আইয়ুব আলী, সাধারণ সম্পাদক মতিউল আলম, প্রেসক্লাব ময়মনসিংহের সভাপতি আফছর উদ্দিন প্রমূখ।
বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপরসন বেগম খালেদা জিয়া একাধিকবার ময়মনসিংহ জনসভায় এসে ময়মনসিংহকে বিভাগ করার ঘোষণা দেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলা নিয়ে ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণা নিয়ে কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইল সবসময়ই বিরোধীতা করে আসছিল।
প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার) সোমবার নতুন এই বিভাগ অনুমোদন দিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে নিকার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সচিব বলেন, ঢাকা বিভাগকে ভেঙে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা জেলা নিয়ে নতুন এই বিভাগ গঠনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হলো সোমবার। নতুন এই বিভাগের লোকসংখ্যা প্রায় এক কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার প্রায়।
পর্যায়ক্রমে ঢাকা বিভাগকে ভেঙে আবারও ফরিদপুর বিভাগ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান সচিব।
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি নতুন এই বিভাগের বিষয়ে মন্ত্রিসভায় নীতিগত সিদ্ধান- নেওয়া হয়েছিল। সোমবার নিকারের বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হলো। এ ছাড়া নোয়াখালী ও কুমিল্লাকে নিয়ে আরও একটি বিভাগ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান সচিব।
ময়মনসিংহকে বিভাগ করার কথা অনেক দিন ধরেই চলছে। তবে কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইল এই বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হতে না চাওয়ায় বিভাগ গঠন নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। অবশেষে এই দুই জেলাকে বাদ দিয়েই গঠিত হলো বাংলাদেশের অষ্টম বিভাগ ময়মনসিংহ। কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইল ঢাকা বিভাগেই রইলো। #

সর্বশেষ আপডেটঃ ৯:৫৫ অপরাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫