| দুপুর ২:২৮ - মঙ্গলবার - ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

কিশোরগঞ্জে মাদক সেবনে বাধা দেয়ায় অটোরিকসা চালককে হাত-পা-চোখ বেঁধে পেট্টোল দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা, গ্রেফতার ২

 

সিম্মী আহাম্মেদ, কিশোরগঞ্জ, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫, শুক্রবার, 
কিশোরগঞ্জে মাদক সেবনে বাধা দেয়ায় শামীম হোসেন (১৯) নামে এক অটোরিকসা চালককে হাত-পা ও চোখ বেঁধে পেট্টোল দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। বৃহস্পতিবার রাতে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের আমাটি শিবপুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। নিহত শামীম আমাটি শিবপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে। এদিকে এ ঘটনায় জড়িত চার সন্ত্রাসীর মধ্যে হোতা জনিকে শুক্রবার বিকালে মিঠামইনের গোপদিঘী ইউনিয়নের খাসাপুর গ্রামের মীরফত আলী মীর নামে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে করিমগঞ্জের ন্যামতপুর এলাকা থেকে সহযোগী সাজনকে কৌশলে আটক করে পুলিশ। নিহাতের চাচা মানিক মিয়া বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় দায়ের করা মামলার দু’জনেই এজাহারভুক্ত আসামি। এদের মধ্যে জনি একই এলাকার ইসলাম উদ্দিনের ছেলে এবং সাজন প্রতিবেশী লাল মিয়ার ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, নিহত শামীমের বাড়ির পাশের গুণু মিয়ার ফিসারির পাড়ে স্থানীয় কয়েক সন্ত্রাসী নিয়মিত মাদকের আসর বসাতো। শামীম তাদের নিষেধ করায় এ নিয়ে প্রায়ই ওই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হতো। একইভাবে গত বুধবার ফিসারির পাড়ে মাদকের আসর জমালে শামীম তাদের বাধা দেয়। এ সময় স্থানীয় চার সন্ত্রাসী জনি, আল-আমিন, শফিক ও সাজন তাকে মারধর করে। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শামীম অটোরিকসা চালানো শেষে শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে জনি, আল আমিন, শফিক ও সাজন তাকে ফিসারিতে ধরে নিয়ে যায়। এ সময় শামীমকে মারপিট করে তার হাত, পা ও চোখ বেঁধে গায়ে পেট্টোল ঢেলে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনের লেলিহান শিখা ও শামীমের আর্তচিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যালে রেফার্ড করা হয়। তবে ঢাকায় নেয়ার পথে রাত ১টার দিকে শামীম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এদিকে শামীম হত্যার দৃষ্টানত্মমূলক বিচার দারি করে শুক্রবার সকালে এলাকাবাসী এলাকায় বিড়্গোভ মিছিল করেছে।
কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক মনোজ কুমার রায় জানিয়েছেন, ভিকটিমের শরীরের অনত্মত ৭০ ভাগ পুড়ে যাওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে রেফার্ড করা হয়েছিল।
পারিবারিক সূত্র জানায়, নিহতের পিতা জাহাঙ্গীর হোসেন মানসিকভাবে অপ্রকৃতিসত্ম। এ কারণে এ ঘটনায় নিহতের চাচা মানিক মিয়া বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেছেন। শুক্রবার দুপুরে দায়ের করা মামলায় একই এলাকার ইসলাম উদ্দিনের ছেলে জনি, মন্নাছ মিয়ার ছেলে আল-আমিন, চাঁন মিয়ার ছেলে শফিক ও লাল মিয়ার ছেলে সাজনের নামোলেস্নখ এবং অজ্ঞাত ৫/৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে নিহত শামীমের লাশ ময়না তদনত্ম শেষে শুক্রবার বিকালে আমাটি শিবপুর গ্রামে নিয়ে আসার পর সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। মাগরিবের নামাজের পর স্থানীয় গোরস্তান মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে সংলগ্ন গোরস্তানে দাফন করা হয়।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন জানান, এরই মধ্যে প্রধান আসামি জনি এবং এজাহার নামীয় আসামি সাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি ছাড়া পলাতক রয়েছে তাদের ধরতেও সম্ভাব্য স্থানসমূহে অভিযান চালানো হচ্ছে। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই তাদেরও গ্রেফতার সম্ভব হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৭:০৯ অপরাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৫