| রাত ৮:২৮ - শুক্রবার - ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

টানা বৃষ্টিতে কিশোরগঞ্জে তলিয়ে গেছে আমন ধান

 

সিম্মী আহাম্মেদ, কিশোরগঞ্জ, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫, শনিবার,
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে কিশোরগঞ্জের কৃষি এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। তলিয়ে গেছে বহু রোপা আমন জমির ধান। অপূরণীয় ড়্গতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।
জেলার কৃষকরা অনুকূল আবহাওয়া পেয়ে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে এবার আমন ধান রোপন করেছিলেন। আরো দু’সপ্তাহ আগেই সব এলাকায় চারা রোপন শেষ হয়ে গিয়েছিল। জমির ধান গাছগুলো গাঢ় সবুজ বর্ণ ধারণ করে বাড়তে শুরু করেছিল। কৃষি বিভাগও অনুকূল আবহাওয়ার সুবাদে এবার বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে মাঠের পর মাঠ তলিয়ে পানি থৈ থৈ করছে। তলিয়ে গেছে মাঠের বাড়ন্ত ধানগাছ। এরকম সময়েই জমির ধান নষ্ট হচ্ছে, যখন আর নতুন করে চারাও পাওয়া যাবে না। এছাড়া এসব জমিতে নতুন করে চারা রোপনও করা যাবে না।
সদর উপজেলার চৌদ্দশত ইউনিয়নের রৌহা বিলে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো বিলের সকল আমন জমিই তলিয়ে গেছে। স্থানীয় কৃষক আব্দুর রহিম, আব্দুল লতিফ, সোলায়মান ও স্বপন মিয়াসহ অনেকেই জানান, তারা ধারদেনা করে আমন আবাদ করেছিলেন। কিন’ এবারের শেষ সময়ের অতিবৃষ্টিতে তাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। তারা যে টাকা দেনা করেছেন, তা কিভাবে শোধ করবেন ভাবতে পারছেন না। একই অবস্থা জেলার বেশিরভাগ এলাকার কৃষকের।
কটিয়াদী উপজেলার মানিকখালী এলাকার সেলিমউদ্দিন খান জানান, তার এলাকার চান্দপুর, মুমুরম্নাদিয়াসহ বিভিন্ন আমন মাঠ এখন পানিতে একাকার হয়ে আছে। এত বেশি পানি হয়েছে যে, এখানে কোন আমন জমি রয়েছে বা কোন ধান লাগানো হয়েছিল, এরকম কোন আলামতই বোঝা যাচ্ছে না। তিনি আরো জানান, জমিতে চারা লাগানোর শুরুর দিকে অতি বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হয়ে গেলে দূরদূরান্তের এলাকা থেকে হলেও চারা জোগার করে আবারো রোপন করা যায়। ইতোপূর্বে অনেকবারই এরকম হয়েছে। কিন’ এবার চারা লাগানোর মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন আর কোথাও চারা পাওয়া যাবে না। এছাড়া চারা রোপনের সময়ও আর নেই। কাজেই মাঠের পর মাঠ পতিত পড়ে থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। করিমগঞ্জ, তাড়াইল, পাকুন্দিয়া, বাজিতপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় এ ধরনের ড়্গতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের পড়্গ থেকে এবার জেলায় মোট ৭৪ হাজার ৮৬৬ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লড়্গ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উফশী ৬৫ হাজার ১৬৫ হেক্টর, হাইব্রিড ১৫ হেক্টর আর স’ানীয় জাতের ধান ৯ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে আবাদের লড়্গ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর চাল উৎপাদনের লড়্গ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ১৩৫ মেট্রিকটন। এর মধ্যে উফশী ধানের চাল ১ লাখ ৭৭ হাজার ১০১ মেট্রিকটন, হাইব্রিড ধানের চাল ৪৮ মেট্রিকটন আর স’ানীয় জাতের ধানের চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৯৮৬ মেট্রিকটন। কিন্ত লাগাতার বৃষ্টিতে সেই লক্ষ্যমাত্রা এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার পর্যনত্ম প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী সারা জেলায় ৪১০ হেক্টর আমন জমির ধান তলিয়ে গেছে। পানি নেমে গেলে এসব জমির তেমন ড়্গতি হবে না। কিন’ যদি আরো এক সপ্তাহ ধান নিমজ্জিত থাকে, তাহলে এসব ধান বিনষ্ট হয়ে যাবে। তবে কিছু আমন বীজতলায় চারা মজুদ আছে। এসব চারা নতুন করে রোপন করে ড়্গতিটা পোষানো যাবে বলে উপ-পরিচালক আশা প্রকাশ করেন।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৪:৫০ অপরাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৫