| দুপুর ১২:১০ - মঙ্গলবার - ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

গৃহকর্মির রহস্যজনক মৃত্যু কিশোরগঞ্জে লাশ নিয়ে মিছিল, ডিসি অফিস ঘেরাও

সিম্মী আহাম্মেদ, কিশোরগঞ্জ, ০৩ আগস্ট ২০১৫, বৃহস্পতিবার,
রাজধানীর মীরপুরে এক আইনজীবীর বাসায় কিশোরগঞ্জের এক গৃহকর্মি তরুণীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। মেয়েটির হাত-পা ভাঙা থাকলেও থানায় হত্যা মামলা না নিয়ে অপমৃত্যু মামলা নিয়েছে বলে স্বজনরা অভিযোগ করেছেন। গৃহকর্মি তরুণীর লাশটি বুধবার গভীর রাতে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ছয়না গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। পরে বৃহস্পতিবার বিকালে লাশ নিয়ে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে।Kishoreganj (House Worker Murdered) Photo 03.09.15
ভিকটিমের বাবা রিকশাচালক জয়নাল আবেদীন জানান, পার্শ্ববর্তী মহিনন্দ এলাকার অনুফা নামে এক মহিলা ৭ মাস আগে তার মেয়ে তাহমিনা আক্তারকে (১৪) ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে মীরপুরের মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে ঢাকা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট লিটনের ৭৬১ নং হোল্ডিংয়ের বাসায় তাহমিনাকে গৃহকর্মি হিসেবে কাজ দেন। অ্যাডভোকেট লিটন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বিন্নাটি এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তাহমিনাকে মাসে ২ হাজার টাকা বেতন দেয়ার কথা থাকলেও অ্যাডভোকেট লিটন এ পর্যনত্ম কোন টাকাই দেননি। বরং বেতন চাইলেই তাহমিনার ওপর নির্যাতন চালানো হতো। গত মঙ্গলবার দুপুরের দিকে মীরপুর ২ নং মডেল থানার এসআই জহিরম্নল ইসলাম মোবাইল ফোনে তাহমিনার বাবাকে মেয়ের মৃত্যুর খবর দিয়ে বলেন, ওইদিন সকাল ৭টা থেকে ১১টার মধ্যে তাহমিনা মারা গেছে। এরপর ঢাকায় অবস’ানরত তাহমিনার খালা ফাতেমা ও খালু মোমতাজকে জানালে তারা ওই দিনই দুপুর ২টার দিকে অ্যাডভোকেট লিটনের বাসায় যান। কিন’ এসআই জহির প্রথমে তাদেরকে বাসায় ঢুকতে দেননি। পরে তাহমিনার খালু মোমতাজকে বাসায় ঢুকতে দিলেও খালাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। মোমতাজ বাসার দোতলায় গিয়ে দেখেন, তাহমিনার দেহটি বিছানায় শোয়ানো। এসময় বাসায় অ্যাডভোকেট লিটন ও তার স্ত্রীকে তিনি পাননি। তাহমিনার হাত-পা ভাঙা ছিল। এদিকে কিশোরগঞ্জ থেকে তাহমিনার বাবা জয়নাল আবেদীন ওই দিনই মীরপুর গিয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করতে চাইলেও পুলিশ পরদিন বুধবার সকালে অপমৃত্যুর ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়রি করে। স্বজনদের ধারণা, তাহমিনাকে পাশবিক নির্যাতনশেষে হত্যা করা হয়েছে। এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান আওলাদ হোসেনও সাংবাদিকদের কাছে এটিকে হত্যাকা- বলেই মনে করেছেন।
বুধবার গভীর রাতে তাহমিনার লাশ এলাকায় নিয়ে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার বিকালে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী লাশ নিয়ে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে মিছিল করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। পরে জেলা মহিলা পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল গৃহকর্মি তাহমিনার বাবা-মাকে নিয়ে জেলা প্রশাসক জিএসএম জাফরউলস্নাহ্‌র সঙ্গে দেখা করে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক জিএসএম জাফরউল্লাহ্‌ তাদের বলেন, একজন গৃহকর্মির এ ধরনের মৃত্যু দুঃখজনক। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ওই তরম্নণীর মৃত্যুরহস্য উদঘাটিত হবে। এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পড়্গ থেকে আমরাও বিষয়টির প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখব।
মীরপুর থানার এসআই জহিরম্নল ইসলাম তাহমিনার গায়ে আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, লাশটি ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে ফাঁসিতে ঝোলানো ছিল। বাড়িওয়ালার উপসি’তিতে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। এ সময় তাহমিনার গৃহকর্তা লিটন আইন পেশায় আদালতে ছিলেন এবং তার স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে ছিলেন বলে এসআই জানিয়েছেন। বাসায় গৃহকর্মি মারা যাওয়ার পরও অ্যাডভোকেট লিটন কি করে আদালতে গেলেন, এ প্রশ্নের উত্তরে এসআই জহির বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না।’ তবে ময়না তদনত্ম রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে বলে এসআই জহির মনত্মব্য করেন।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন জানান, তিনি জেলা প্রশাসকের সামনে মীরপুর থানার ওসির সঙ্গে কথা বলেছেন। ভিকটিমের পক্ষ থেকে মামলা দেয়া হলে সেটি নেয়া হবে বলে মীরপুরের ওসি তাকে জানিয়েছেন। তাই গৃহকর্মির স্বজনদেরকে তিনি মীরপুর থানায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
তাহমিনাকে নিয়ে রিকশাচালক জয়নাল আবেদীনের ১ ছেলে ও ৫ মেয়ে। দারিদ্রের কারণে তার আরো দু’টি মেয়ে ঢাকায় গৃহকর্মি হিসেবে কাজ করছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৬:৫২ অপরাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৫