| বিকাল ৪:৫২ - রবিবার - ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ঈশ্বরগঞ্জে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে হত্যার প্রতিবাদ ৪০ বছর পর রতনের মুখে অন্ন তুলে দিলেন জেলা প্রশাসক

 

ফারুক ইফতেখার সুমন, ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধি-১৩ আগস্ট ২০১৫, বৃহস্পতিবার: 
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কুমারুলী গ্রামের জনপ্রিয় ভলিবল খেলোয়ার হারুন সালেহ রতনের মুখে ৪০ বছর পর অন্ন তুলে দিলেন জেলা প্রশাসক মুস্তাকীম বিলস্নাহ ফারুকী। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারকে হত্যার পর থেকে অদ্যাবধি পর্যনত্ম অন্ন বর্জন করে আসছিলেন তিনি। স্থানীয় গনমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে বিষয়টি শুনে গত ২৭ মে বিকেলে নিজ চোখে রতনকে দেখতে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব কুমার সরকার। প্রায় ঘন্টা খানেক রতনের সাথে কথা বলে তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন তিনি। তার পর ২৮ মে ঈশ্বরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের টিএইচএ ডা. নিখিল রঞ্জন বৈদ্য কে প্রধান করে হাসপাতালের সব বিভাগীয় স্পেশালিষ্ট নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড রতনের চিকিৎসা শুরম্ন করে অব্যাহত রাখেন। প্রায় আড়াই মাস চিকিৎসা চলার পর আজ বৃহস্পতিবার মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী নিজ চোখে দেখতে যান হারম্নন সালেহ রতন কে। তার বাড়ীতে স’ানীয় প্রশাসন অন্ন গ্রহণের ব্যতিক্রমী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জেলা প্রশাসক মুসত্মাকীম বিলস্নাহ ফারম্নকী হারম্নন সালেহ রতনের ঘরে গিয়ে মুখে ডিম মিশ্রিত অন্ন তুলে দিয়ে তাকে মানসিকভাবে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের সাথেও ফোনে রতনের সাথে কথা বলিয়ে দেন জেলা প্রশাসক। এ সময় তিনি ব্যাক্তিগতভাবে রতনকে চিকিৎসায় অংশ নিতে পাঁচ হাজার টাকা তার হাতে তুলে দেন।
পরে জেলা প্রশাসক মুস্তাকীম বিলস্নাহ ফারম্নকী সাংবাদিকদের জানান, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব কুমার সরকার হারম্নন সালেহ রতনের চিকিৎসার দায়িত্বনেন ও তাকে ঘটনাটি জানান। তারপর থেকেই ফোনে নিয়মিত রতনের চিকিৎসার খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন। হারম্নন সালেহ রতন এখনও অন্ন গ্রহনের উপযোগি হননি। মানসিক ভাবে তাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্যে তিনি মুখে অন্ন তুলে দিয়েছেন। ধারাবাহিক ভাবে এ চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও আরো প্রয়োজনীয় কিছু চিকিৎসার পর তিনি ভাত খেতে পারবেন।
এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের টিএইচএ ডা. নিখিল রঞ্জন বৈদ্য জানান, ধীরে ধীরে তাকে অন্ন গ্রহনে অভ্যসত্ম করলে এবং আরো কিছু পরীড়্গা নিরীড়্গার পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিলে তিনি খেতে পারবেন।
উলেস্নখ্য যে, ১৯৭৪ সালে নান্দাইল চন্ডিপাশা স্কুল থেকে এসএসসি পাসকরা, জনপ্রিয় ভলিবল খেলোয়াড় বঙ্গবন্ধু প্রেমিক হারম্নন সালেহ রতন ১৫ই আগস্ট ট্রাজেডির প্রতিবাদে ও শোকে প্রায় ৪০ বছর যাবত অন্ন বর্জন করে আসছিলেন বলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়। ছোট ভাই হুমায়ুন কবীর জানান, তাদের চার ভাইয়ের মধ্যে হারম্নন সালেহ রতন সবার বড়। ১৫ই আগস্ট ট্রাজেডির পর থেকে তিনি অন্ন বজর্ন করে আসছেন।
এ বিষয়ে রতনের স্ত্রী হাজেরা খাতুন বিউটি জানান, বিয়ের রাতে মিষ্টির পরিবর্তে ভাতের ফেন খেতে রাজি হয়েছিলেন তিনি। প্রথম প্রথম তিনি স্বামীর এ আচরণে বিরক্ত হয়ে নিরবে কাঁদতেন। ঘরে যখন ভাত ও মাছমাংস রান্না হতো তখন তার কষ্টটা দ্বিগুণ বেড়ে যেতো। পরিবারের সবাই পেট পুরে মাছমাংস খেলেও ও শুধু খেত ভাতের ফেন। তারপর দিনে দিনে ব্যাপারটা সয়ে গেছে, তবু মাঝে মধ্যে একটু-আধটু খারাপ লাগে। এখন তো পানি খেলেও ছেঁকে দিতে হয়।

সর্বশেষ আপডেটঃ ৯:৫৮ অপরাহ্ণ | আগস্ট ১৩, ২০১৫