| বিকাল ৫:৫৭ - রবিবার - ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ৩রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

ময়মনসিংহে যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে নারী ও শিশুসহ ২৪ জনের মৃত্যু ॥ মালিকসহ আটক-৮, ২টি তদন্ত কমিটি গঠন

 

মতিউল আলম , ১০ জুলাই, ২০১৫, শুক্রবার,
ময়মনসিংহে যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে শিশু কিশোর ও নারীসহ অন-ত ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অন-ত ২০জন। আহতদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩ জনের অবস’া আশংকাজনক। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। আহত অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে যে যার মতো বাড়ি চলে গেছে। শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে ময়মনসিংহ শহরের অতুল চক্রবর্তী রোডের নূরানী জর্দা কারখানায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জর্দা ফ্যাক্টরীর মালিক মোহাম্মদ শামীম ও তার পূত্রসহ ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।Mymensingh Pic-1 online
এ ব্যাপারে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন ৩ সদস্য বিশিষ্ট ২ টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যা আগামী ৩ কার্যদিবসে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুল ইসলামকে প্রধান করে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল ও সিকিউরিটি সেলের একজন পুলিশ সুপারকে সদস্য করে ৩ সদ্য বিশিস্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে জেলা প্রশাসক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী জানান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্টেট মল্লিকা খাতুন প্রধান করে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা একে ফয়জুল হক ও এনডিসি তৌহিদুল ইসলামকে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিস্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিহতদের প্রত্যক পরিবারকে ১০ হা্‌জার টাকা করে অনুদান প্রদান করেছেন।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার  মঈনুল হক জানান, শুক্রবার ভোরে নূরানী জর্দা ফ্যাক্টরীর মালিক মোহাম্মদ শামীম নূরানী জর্দা ফ্যাক্টরিতে যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদপদলিত হয়ে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২ শিশুসহ ২২ মহিলা । আহত হয়েছে অন্তত অর্ধশত লোক। উপসি’ত লোকের তুলনায় জায়গা কম হওয়ায় এ ধরনের দূর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে। তার পরও ঘটনার তদন- করে পরবর্তী ব্যবস’া নেয়া হবে।
পদপদলিত হয়ে নিহতরা হলেন- হালিমা বেগম (৪৫) স্বামী হায়দর আলী আকুয়া, নাজমা বেগম (৫০) স্বামী জালাল উদ্দিন, আকুয়া মোড়লপাড়া, ফাতেমা(৬০) স্বামী আঃ ছালাম আকুয়া মোড়লপাড়া, জোহরা খাতুন(৫৫) স্বামী ইসমাইল, সাং আকুয়া মোড়লপাড়া, রেজিয়া আক্তার (৪০) স্বামী আঃ মজিদ, সাং গাঠগোলা বাজার, ফাতেমা বেগম (৪২) স্বামী রবি হোসেন, আকুয়া দক্ষিণ পাড়া, সুফিয়া বেগম (৬০) স্বামী লাল মিয়া সাং চর ঈশ্বরদিয়া, খোদেজা বেগম(৫৫), স্বামী আঃ সালেক থানাঘাট বালুর চর, সিদ্দিক (১২) পিতা সিরাজুল ইসলাম থানাঘাট বালুর চর, লামিয়া (৫) পিতা কৃষ্ণা মিয়া থানাঘাট বালুর চর, সখিনা (৪০) স্বামী কৃষ্ণা মিয়া, থানাঘাট বালুর চর, সামু বেগম (৬০), স্বামী আব্দুল বারেক, থানাঘাট বালুর চর, ফজিলা বেগম (৭৫) স্বামী মাহতাব উদ্দিন কাচারী ঘাট, হাজেরা বেগম (৭০) স্বামী লালু মিয়া, পাটগুদাম বিহারী ক্যাম্প, রুবিয়া আক্তার (১২) পিতা- রতন মিয়া, ঢোলাদিয়া, রহিমা বেগম (৫৫) স্বামী শামসুল হক, আকুয়া দরগা পাড়া, আঙ্গুরী বেগম (৩৫) স্বামী শফিকুল ইসলাম, কালিবাড়ি গোদারাঘাট, সাহারন বেগম (৪০) স্বামী আরজু মিয়া সাং- বালিপাড়া, ত্রিশাল, মেঘনা বসাক(৪০), বসাক পট্রি, রুপালী (৪০) অতুলচক্রবর্তী রোড, সুধারণী সরকার ( ৫৫) ধোপাখোলা ময়মনসিংহ শহর। এ ছাড়াও অজ্ঞাত আরো ১ জন মহিলা। নিহতদের মধ্যে শহরের থানাঘাটে ব্রহ্মপূত্র নদের সাথে বাস্তহারা ক্যাম্পের একই পরিবারের ৩ জন হচ্ছেন শামিমা বেগম (৬০), তার মেয়ে সখিনা(৩৫) ও নাতি লামিয়া (৬)।

থানা পুলিশ ও পোস্টমের্টেমের ভয়ে পদপদলিত মৃত্যুর পর নিহতদের লাশ ঘটনাস’ল থেকে এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গেইট থেকেই ময়না তদন- ছাড়াই তাদের স্বজনরা বাড়িতে নিয়ে গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।
এ ঘটনায় ২০জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে হেনা (৫৪) ময়না (৭০) ও রাসেলসহ (২৫) ৩জনের অবস’া আশঙ্কাজনক।
ঘটনার পর পরই পুলিশ নূরানী জর্দা ফ্যাক্টরির মালিকসহ ৮জনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন, মালিক মোহাম্মদ শামীম (৬৫) ও তার পূত্র হেদায়েত তালুকদার (৩০), ফ্যাক্টরির ম্যানেজার ইকবাল হোসেন (৩৫), ইকবাল (৪০), আরমান হোসেন (৩৫), আলমগীর হোসেন (৩৪), আরশাদুল ইসলাম (৩২), ড্রাইভার পারভেজ (৩৫) ও কর্মচারী আঃ হামিদ (৩৬)।
কোতোয়ালী মডেল থানার এএসপি হারুন রশিদ জানান, নূরানী জর্দা ফ্যাক্টরিতে পদদলিত মৃত এ পর্যন-২৪ জন মারা গেছে।  ময়না তদন্ত শেষে মৃত ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
এ ঘটনার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী, পুলিশ সুপার মইনুল হক দুর্ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন।
গ্রেফতারকৃত জর্দা ফ্যাক্টরীর মালিক শামীম জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ৬০০জনকে জাকাতের কাপড় দেয়ার জন্য কার্ড প্রদান করা হয়ে ছিল। তিনি এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা দুঃখ প্রকাশ করে জানান , এর আগে এমন ঘটন কখনো ঘটেনি।
প্রত্যক্ষদর্শী থানাঘাট এলাকার কৃষ্ণা মিয়ার ছেলে ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্র শরিয়তুল সুপ্ত জানায়, সে তার নানী, মা ও বোন নিয়ে ভোর চারটার দিকে জাকাতের কাপড়ের জন্য নুরানী জর্দা ফ্যাক্টরীতে যায়। এ সময় অনেক লোক ফ্যাক্টরী গেইটের সামনে ভীড় করছিল। ফ্যাক্টরী গেইটটি ছিল হালকা ও দুর্বল। ভিতর থেকে বাশঁ দিয়ে ঠেকা দিয়ে রাখছিল। জাকাত প্রত্যাশীরা গেইট খোলার জন্য ধাক্কা দিলে ফ্যাক্টরীর লোকজন গেইট খুলেনি। এমতাবস্থা্য় শতশত মানুষের ধাক্কাধাক্কিতে গেইট ভেঙ্গে যায়। এপর হুড়াহুড়ি করে ফ্যাক্টরীতে প্রবেশের সময় পায়ের নীচে চাপা পরে অনেক লোক মারা যায়। সে কোন মতে বেচে গিয়ে ফ্যাক্টরী সিড়িতে দাড়িয়ে তার মা, নানী ও বোনকে খুজতে থাকে। খোঁজাখোজির পর তার নানী, মা ও বোনের লাশ দেখতে পায়।
প্রত্যক্ষদশীরা জানান, ভোরে গেইট খোলার সাথে সাথে শতশত জাকাত প্রত্যাশীরা হুমকি খেয়ে পড়ে পদদলিত হয়ে মারা যায়।

সর্বশেষ আপডেটঃ ২:১১ অপরাহ্ণ | জুলাই ১০, ২০১৫