| রাত ৯:৩৩ - রবিবার - ২১শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ৬ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৪ই মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

গফরগাঁওয়ে উপজেলা প্রকৌশলী উৎকোচ ছাড়া——

 

আজহারুল হক, গফরগাঁও ঃ ২৮ জুন ২০১৫, রবিবার:
১১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মেরামতের জন্য ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। পরে প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধানগণ বরাদ্দকৃত টাকার সমপরিমাণ সংস্কার শেষে সংস্কারের ছবি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে জমা দেন। কিন্তু উপজেলা প্রকৌশলী তফাজ্জল হোসেনের কাজের তদারকির দায়িত্ব থাকায় তার কাছ থেকে মেরামতকাজ ভাল হয়েছে এই মর্মে ক্লিয়ারেন্স নিতে হয় সকল বিদ্যালয়কে। এমন সময়েই শুরম্ন হয় ব্যাপক উৎকোচ বাণিজ্য। প্রতিটি বিদ্যালয়ের বিপরীতে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা উৎকোচ না দিলে মেলেনা ক্লিয়ারেন্স।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে প্রাথমিক বিদ্যালয় মেরামত/সংস্কারের জন্য গফরগাঁও উপজেলার ৬০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ২০ হাজার ও ৫৫টি বিদ্যালয়কে ৩০ হাজার টাকা করে ২৮লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়।
পরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে মেরামত কাজ শেষে বরাদ্দ পাওয়া বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে টাকা উত্তোলনের নির্দেশ প্রদান করে। আর কাজের তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয় উপজেলা প্রকৌশলীকে। পরে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক গত ১৮ জুন সকল বিদ্যালয় মেরামত কাজ শেষ করে টাকা উত্তোলনের পূর্বে ক্লিয়ারেন্সের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে কাজের ছবি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি জমা দেন। আর এই সুযোগে উপজেলা প্রকৌশলী যে সকল বিদ্যালয় মেরামতের জন্য ২০হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছে সে সকল বিদ্যালয় থেকে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার ও যে সকল বিদ্যালয় ৩০হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছে সে সকল বিদ্যালয় থেকে ৪হাজার থেকে ৫হাজার টাকা করে উৎকোচ নিয়ে ক্লিয়ারেন্স প্রদান করেন। আর যে সকল বিদ্যালয় উৎকোচ দেয়নি আটকে যায় সেসব বিদ্যালয়ের ক্লিয়ারেন্স। প্রকৌশলীর কার্যালয়ের কাজ শেষে সংশিস্নষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধানরা উপজেলা হিসাব রড়্গণ অফিসে এসে পড়েন আরেক বিড়ম্বনায়। সেখানে প্রতিটি বিদ্যালয় মেরামত কাজের বিল করতে হাত খরচ বাবদ ৪’শ টাকা করে আদায় করা হয়।
২০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া সংশিস্নষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা জানান, উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে কাজের ছবি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়ার পর ক্লিয়ারেন্সের জন্য বাধ্য হয়ে উপজেলা প্রকৌশলীকে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে।
৩০হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া বিদ্যালয় প্রধানরা জানান, ক্লিয়ারেন্স বাবদ উপজেলা প্রকৌশলীকে ৪ থেকে ৫হাজার ও ট্রেজারী অফিসে হাত খরচ বাবদ ৪’শ টাকা করে দিতে হয়েছে। ওইসব টাকা না দিলে ক্লিয়ারেন্স মিলেনা। তাই বাধ্য হয়ে তাদের চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ দিতে হয়েছে। তবে এবার শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মেরামত কাজের বরাদ্দের টাকার চেক পেতে কোন প্রকার উৎকোচ বা হাত খরচ দিতে হয়নি।
উপজেলা প্রকৌশলী তফাজ্জল হোসেন উৎকোচ গ্রহনের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার অফিসের অন্য কোন কর্মকর্তা টাকা নিয়েছে কিনা তা আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।
উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান বলেন, বিল করে দেওয়া বাবদ আমার অফিসে কেউ হাত খরচ বাবদ কোন টাকা নেয়নি। ব্যক্তিগতভাবে কোন শিক্ষক টাকা দিয়ে থাকলে সে তাদের বিষয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ শংকর কুন্ডু বলেন, এ ব্যাপারে আমি অবগত নই। তবে বিষয়টি নিয়ে আজই সংশিস্নষ্টদের সাথে কথা বলব।

সর্বশেষ আপডেটঃ ১০:১১ অপরাহ্ণ | জুন ২৮, ২০১৫