| রাত ৮:৫৯ - শুক্রবার - ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

টাইব্রেকারে ব্রাজিলকে হারিয়ে সেমিফাইনালে প্যারাগুয়ে

অনলাইন ডেস্ক, ২৮ জুন ২০১৫, রবিবার:

জমে উঠা কোপা আমেরিকার চলতি আসরে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করতে মাঠে নেমেছিল আট বারের শিরোপা জয়ী ব্রাজিল আর গত আসরের রানার্সআপ প্যারাগুয়ে। নেইমারহীন এ ম্যাচে ব্রাজিল টাইব্রেকে ৪-৩ গোলে হেরে সেমিফাইনালের আগেই বিদায় নিল।

এ ম্যাচে জয়ের ফলে ৪৪তম কোপা আমেরিকার ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করতে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হতে হবে প্যারাগুয়েকে।

প্রথমার্ধে রবিনহোর গোলে এগিয়ে থাকা ব্রাজিলের জালে দ্বিতীয়ার্ধে পেনাল্টি থেকে গোল করেন প্যারাগুয়ের গঞ্জালেজ। নির্ধারিত সময়ে ১-১ এ সমতা থাকায় ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শুটআউটে।

টাইব্রেকার নামক ভাগ্য পরীক্ষায় ব্রাজিল জিততে পারেনি। পেনাল্টি শুটআউটে ব্রাজিলের হয়ে প্রথম গোলটি করেন ফার্নানদিনহো, আর প্যারাগুয়ের হয়ে গোল আদায় করেন মার্টিনেজ। দ্বিতীয় শুটআউটে ব্রাজিলের এভারটন গোল মিস করলে প্যারাগুয়েকে লিড পাইয়ে দেন সাসারেজ। তৃতীয় শটে মিরান্ডা ব্রাজিলকে সমতায় ফেরান। নিজেদের তৃতীয় শটে বোবাদিল্লা প্যারাগুয়েকে এগিয়ে নেন। চতুর্থ শটে সেলেকাওদের কাঁদিয়ে বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হন দগলাস কস্তা। আর নিজেদের চতুর্থ শটে গোল মিস করেন প্যারাগুয়ের সান্তা ক্রুজ।

পঞ্চম শটে গোল করেন ব্রাজিলের কোউতিনহো। শেষ শটে গোল করতে পারলেই ৪-৩ এ ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে উঠে যাবে প্যারাগুয়ে, এমন সমীকরণ নিয়ে শট নিতে আসেন নির্ধারিত সময়ের ম্যাচে গোল করা গঞ্জালেজ। পেনাল্টি শুটআউটে কোনো রকম ভুল করেন নি তিনি। ব্রাজিলের জালে বল জড়িয়ে দিয়ে সেমির টিকিট নিশ্চিত করেন তিনি।

নেইমার ছাড়া এ ম্যাচে ব্রাজিলের আক্রমণভাগের দায়িত্ব পালন করেন উইলিয়ান, কোউতিনহো, রবিনহো আর ফির্মিনো। ৪-২-৩-১ ফরমেশনে কার্লোস দুঙ্গা শুরুর একাদশে আরও ছিলেন জেফারসন, দানি আলভেজ, থিয়েগো সিলভা, ফেলিপ লুইস, মিরান্ডা, ফার্নানদিনহো আর এলিয়াস।

ব্রাজিল গ্রুপপর্বে পেরু ও ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে একই (২-১) ব্যবধানে কষ্টার্জিত জয় পেয়েছিল। তবে মাঝে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে মনোবল হারিয়ে ফেলে কার্লোস দুঙ্গার শিষ্যরা। রামোন ডিয়াজের অধীনে ‘জায়ান্ট কিলার’ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া প্যারাগুয়ে গ্রুপপর্বে অসাধারণ পারর্ফম করে। জ্যামাইকার বিপক্ষে জয়ের পাশাপাশি শক্তিশালী আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের বিপক্ষে ড্র করে দু’বারের কোপা চ্যাম্পিয়নরা। ২০১১ কোপা আসরে উরুগুয়ের কাছে ফাইনালে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হতে হয়েছিল প্যারাগুয়েকে।

ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই প্যারাগুয়ের গোলবারে প্রথম শট নেয় ব্রাজিল। ২৫ গজ দূর থেকে জোরালো শট নেন কোউতিনহো। তবে, প্যারাগুয়ের গোলরক্ষক ভিললার ক্রসবারের উপর দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে খেলার দশম মিনিটে ব্রাজিলের সীমানায় বল নিয়ে প্রবেশ করেন গঞ্জালেজ। বল বাড়িয়ে দেন সান্তা ক্রুজের দিকে। তবে, তার আগেই সেলেকাও দলপতি মিরান্ডায় বাধা পান প্যারাগুয়ের স্ট্রাইকাররা।

১৫ মিনিটে লিড নেয় ব্রাজিল। রবিনহোর গোলে ১-০তে এগিয়ে যায় দুঙ্গার শিষ্যরা। বার্সেলোনার তারকা দানি আলভেজ প্যারাগুয়ের ডি-বক্সে ডানদিক থেকে ক্রস করলে কিছুটা ফাঁকায় থাকা রবিনহো ডানপায়ের আলতো টোকায় প্রতিপক্ষের জাল কাঁপিয়ে দেন।

৩৫ মিনিটে সান্তা ক্রুজের মাটি কামড়ানো একটি শট ব্রাজিল গোলরক্ষক জেফারসনের নাগালের বাইরে দিয়ে চলে যায়। তবে, গোলবারের কিছুটা বাইরে দিয়ে বল চলে গেলে কোনো বিপদের মুখোমুখি হতে হয়নি সেলেকাওদের।

প্রথমার্ধে আর কোনো গোল না হলে ১-০ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় ব্রাজিল। প্রথমার্ধে এগিয়ে থাকা ব্রাজিলের জন্য এ ম্যাচটি ছিল প্রতিশোধের ম্যাচ। কারণ গত আসরে এই কোয়ার্টার ফাইনালেই পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের পেনাল্টিতে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে সেমি নিশ্চিত করেছিল প্যারাগুয়ে।

বিরতির পর ৫২ মিনিটে ডি-বক্সের কিছুটা বাইরে ফ্রি-কিকের সুযোগ পায় প্যারাগুয়ে। জেফারসনের দৃঢ়তায় গোলবঞ্চিত হতে হয় প্যারাগুয়াইনদের। চার মিনিট পর নেলসন ভালদেসের একটি শট ব্রাজিলের গোলবারের অল্প উপর দিয়ে চলে যায়। ৬০ মিনিটের মাথায় উইলিয়ানের বদলি হিসেবে ব্রাজিল দলে যোগ দেন দগলাস কস্তা।

খেলার ৬৩ মিনিটে সমতায় ফেরার সুযোগ এসেছিল প্যারাগুয়ের। কর্ণার থেকে উড়ে আসা বলে হেড করেন দা সিলভা। এবারো দলকে রক্ষা করেন সেলেকাওদের গোলবারের নিচে দায়িত্ব পালন করা জেফারসন। ঝাঁপিয়ে পড়ে দা সিলভা আর প্যারাগুয়েকে গোলবঞ্চিত করেন তিনি।

দ্বিতীয়ার্ধে ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে প্যারাগুয়ে। ৬৯ মিনিটে দলের শক্তি বাড়াতে দুঙ্গা ফির্মিনোকে তুলে নিয়ে মাঠে নামান দিয়েগো তারদেল্লিকে।

৭২ মিনিটে সমতায় ফেরে প্যারাগুয়ে। নিজেদের বক্সে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে ‘হ্যান্ডবল’ করে বসেন থিয়েগো সিলভা। আর সে সুযোগে পেনাল্টি থেকে গোল আদায় করে নেন গঞ্জালেজ।

৭৯ মিনিটে লিড নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল প্যারাগুয়ে। প্রায় মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে ব্রাজিলের ডি-বক্সে ঢুকে জোরালো শট নিয়েছিলেন গঞ্জালেজ। সরাসরি বলের লাইনে থেকে কর্নারের মধ্যদিয়ে ক্লিয়ার করেন সেলেকাও গোলরক্ষক জেফারসন।

দ্বিতীয়ার্ধের বাকী সময়ে আর কোনো গোল না হলে পেনাল্টি শুটআউটে গড়ায় ম্যাচ। টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলের ব্যবধানে জয় নিয়ে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার সঙ্গী হল প্যারাগুয়ে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ১২:০৩ অপরাহ্ণ | জুন ২৮, ২০১৫