| সকাল ৬:২৪ - শনিবার - ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২০শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

উরুগুয়েকে হারিয়ে সেমিফাইনালে চিলি

অনলাইন ডেস্ক,২৫ জুন ২০১৫, বৃহস্পতিবার:

কোপা আমেরিকার ৪৪তম আসরের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে মাঠে নেমেছিল স্বাগিতক চিলি আর ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে। প্রথম সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করতে দারুণ উত্তেজনা ছড়ানো এ ম্যাচে ইসলার একমাত্র গোলে নয়জনের দলে পরিণত হওয়া উরুগুয়েকে হারিয়েছে চিলি।
ম্যাচের শুরুর একাদশে সর্বোচ্চ ১৫বার কোপা আমেরিকার শিরোপা জেতা অস্কার তারাবেজের উরুগুয়ে ৪-৪-২ ফরমেশন খেলতে থাকে। চিলির বিপক্ষে ৪৩বার জয় পাওয়া উরুগুয়ের শুরুর একাদশে মাঠে নামেন মুসলেরা, পেরেইরা, জিমিনেজ, দিয়েগো গডিন, আরেভালো, কার্লোস সানচেজ, গঞ্জালেস, রদ্রিগুয়েজ, রোলান, এডিনসন কাভানি ও ফুসিলি। ৪-৩-১-২ ফরমেশনে জর্জ সাম্পাওলি তার শিষ্যদের খেলাতে থাকেন। উরুগুয়ের বিপক্ষে ১৭বার জয়ী চিলির হয়ে মাঠে নামেন ক্লদিয়ো ব্রাভো, ইসলা, মেদেল, জারা, মেনা, ডিয়াজ, আরানগুয়েজ, ভিদাল, ভালদিভিয়া, অ্যালেক্সিজ সানচেজ আর ভারগাস।
ম্যাচের শুরু থেকেই নিজেদের ডি-বক্স সামলে খেলতে থাকে দুই দল। আক্রমণের দিক দিয়েও সমান তালে এগুতে থাকে স্বাগতিক আর ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। তবে, প্রথমার্ধে কোনো দলই গোলের দেখা পায় নি।
কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে স্বাগতিকরা প্রতিপক্ষের জালে সর্বোচ্চ ১০ বার বল জড়িয়েছে। তবে, প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে অস্কার তারাবেজের উরুগুয়ের বিপক্ষে কিছুটা চাপ নিয়েই খেলে র‌্যাংকিংয়ের ১৯ নম্বর দলটি। ম্যাচের ১৫ মিনিটের মাথায় স্বাগতিক তারকা স্ট্রাইকার অ্যালেক্সিজ সানচেজ আর ভিদালের একটি আক্রমণ রুখে দেন উরুগুয়ের ডিফেন্ডাররা।
র‌্যাংকিংয়ের আট নম্বর দল উরুগুয়ে বেশ কয়েকটি আক্রমণ করলেও দেখা যায় নি ভালো কোনো ফিনিশিং। নিষেধাজ্ঞা থাকায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের দলে নেই দেশটির সেরা তারকা লুইস সুয়ারেজ। অভিজ্ঞ ফোরলানও ছিলেন না এ আসরে। এক এডিনসন কাভানির উপর নির্ভর করা উরুগুয়ে ভালো ফিনিশারের অভাবে প্রথমার্ধে কোনো গোলের দেখা পায়নি।
কখনো কোপা আমেরিকার স্বাদ নিতে না পারা চিলি সানচেজের দুরন্ত গতিতে বেশ কয়েকবার গোলের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল। টুর্নামেন্টে চারবার ফাইনাল থেকে পরাজয়ের স্বাদ নেওয়া লা রোজারা প্রথমার্ধে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না দেখায় গোলশূন্য অবস্থায় বিরতিতে যায়।
বিরতির পর ম্যাচের ৪৮ মিনিটের মাথায় আবারো উরুগুয়ের ডি-বক্সে আক্রমণ শানে জর্জ সাম্পাওলির শিষ্যরা। ভিদালের কোনাকুনি নেওয়া বাঁকানো শটটি উরুগুয়ের গোলরক্ষক মুসলেরার হাতে গিয়ে পড়ে।
৫১ মিনিটে কাভানির জোরালো শট আর ৫৫ মিনিটে রোলানের ফ্রি-কিক চিলিকে কাঁপিয়ে দেয়। এবারের আসরে নিজেকে খুঁজে ফেরা কাভানি ৩৫ গজ দূর থেকে জোরালো শট নেন। তবে, প্রস্তুত ছিলেন স্বাগতিক গোলরক্ষক মুসলেরা। চার মিনিট পর ফ্রি-কিক থেকে উড়ে আসা বল প্রতিহত করেন গোলবারের নিচে থাকা মুসলেরা।
ম্যাচের ৬৩ মিনিটে উরুগুয়ের জন্য বড় একটি ধাক্কা আসে। প্রথমার্ধের ২৮ মিনিটে লাইন্সম্যানের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ানো পিএসজির তারকা স্ট্রাইকার আর উরুগুয়ের নির্ভরতার প্রতিক কাভানিকে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়। ৬৩ মিনিটের মাথায় প্রতিপক্ষের ফুটবলার জারাকে মুখে আলতো ভাবে আঘাত করায় রেফারি কাভানিকে লাল কার্ড দেখান। ফলে, দশ জনের দলে পরিণত হয় গ্রুপ পর্বে বাজে সময় পেরিয়ে কোয়ার্টারে আসা উরুগুয়ে।
কোয়ার্টার ফাইনালে নামার আগেই কাভানিকে শুনতে হয়েছিল সড়ক দুর্ঘটনায় তার বাবা গ্রেফতারের ঘটনা। ১৯ বছর বয়সী এক মোটরসাইকেল আরোহী তাতে মারা গেলে গ্রেফতার করা হয় কাভানির বাবাকে। এ ম্যাচটি খেলেই সেখানে যেতে চেয়েছিলেন পিএসজি তারকা। তবে, মাঠের বাইরের বাজে প্রভাব মাঠেও দেখা যায় কাভানির খেলায়।
দশ জনের উরুগুয়েকে পেয়ে আরও হিংস্র হয়ে উঠেন সানচেজ, ভিদাল, ভালদিভিয়ারা। ৭৬ মিনিটে ভালদিভিয়ার একটি শট গ্লাভসবন্দি করেন উরুগুয়ের গোলরক্ষক মুসলেরা। দুই মিনিট পরেই কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বল নিয়ে কার্লোস সানচেজ স্বাগতিকদের কাঁপিয়ে দেন। ৩০ গজ দূর থেকে রদ্রিগুয়েজের দারুণ পাস থেকে বল পেয়েছিলেন সানচেজ। তার শটটি রুখে দেন প্রস্তুত থাকা চিলিয়ান গোলরক্ষক ব্রাভো।
৮১ মিনিটের মাথায় লিড নেয় সাম্পাওলির শিষ্যরা। চিলির হয়ে গোল করেন ইসলা। ভালদিভিয়ার অ্যাসিস্ট থেকে গোলটি করেন ইসলা। ভালদিভিয়ার শট রুখে দেন উরুগুয়ের গোলরক্ষক মুসলেরা। ফিরতি বলে টপ ‘ডি’ থেকে শট নেন ইসলা। বামদিকে ঝাঁপিয়ে পড়লেও শেষ রক্ষা করতে পারেন নি উরুগুয়ের গোলরক্ষক। ফলে, ১-০ তে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
স্বাগতিকদের সেরা তারকা সানচেজকে ফাউল করায় হলুদ কার্ড দেখেন উরুগুয়ের ফুসিলি। প্রথমার্ধের ৪০ মিনিটে একবার হলুদ কার্ড দেখা ফুসিলিকে ম্যাচের ৮৮ মিনিটে আরও একবার হলুদ কার্ড দেখতে হয়। ফলে, রেফারি লাল কার্ডের নির্দেশ দিলে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় উরুগুয়ের ফুসিলিকে। এর মধ্যে দিয়ে নয় জনের দলে পরিণত হয় তারাবেজের উরুগুয়ে।
ম্যাচের বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলে ইসলার একমাত্র গোলে জয় নিয়ে প্রথম সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে চিলি। ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করতে বলিভিয়া আর পেরুর মধ্যকার দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালের জয়ী দলের বিপক্ষে প্রথম সেমিফাইনালে লড়বে চিলি।

সর্বশেষ আপডেটঃ ১২:৫০ অপরাহ্ণ | জুন ২৫, ২০১৫