| রাত ৯:৩৫ - শুক্রবার - ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ময়মনসিংহ শেরপুর জামালপুরে নতুন পার্ক চালু হবে, হাতী রক্ষায় সবুজ বেষ্টনি

 
এমএইচএম মোতালেবঃ ১৯ জুন ২০১৫, শুক্রবার,

বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার শেরপুরে হাতীর তান্ডবে বেশ কিছু ক্ষতি সাধারন করলেও বনবিভাগের ব্যবস’াপনায় উপকরণ সামগ্রী হাতী প্রতিরোধে যথেষ্ঠ কাজে লাগছে। জানা গেছে, বনের বসবাসকারীগনের বাড়ীতে মধুমাসে কাঠাল খাবার জন্যে হাতী লোকালয়ে প্রবেশ করে। আকশ্মিকভাবে হাতীর প্রবেশ রাতের অন্ধকারে ভয়ের কারন হয়ে দাড়ায়। জনসাধারন বনবিভাগের দেয়া মেঘা মাইক দিয়ে বিভিন্ন ধরনের শব্দ শুরু করলে হাতীয় অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হয়। গতকয়েক দিনে অবিরাম বৃস্টির কারনে হাতীর খাবার সংকট দেখা দেয় ফলে হাতীয় লোকালয়ে আসতে বাধ্য হয়। ময়মনসিংহ বিভাগীয় বনকর্মকর্তা ও বন্যপ্রানী সংরক্ষন কর্মকর্তা গোবিন্দ রায় লোক লোকান্তরকে জানান,  জামালপুর, বকশিগঞ্জ ও শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতীতে হাতীর অভয়াশ্রম তৈরী করার জন্য বিশেষ বাগান সৃজন কাজ চলছে। এ বাগান এর সৃজন কাজ সম্পন্ন হলে হাতী আর লোকালয়ে আসতে পারবে না, তাদের যাতায়াত ওখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অপরদিকে গত ১৩জুন/১৫ একটি হাতি গাজীপুর সদর উপজেলার ঝিগজা এলাকায় ঢুকে এলাকার মানুষের বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতি করছে। খবর পেয়ে ড. তপন কুমার দে, বন সংরক্ষক, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষক অঞ্চলকে অবহিত করেন। তার নির্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক, গাজীপুর এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিব প্রসাদ ভট্টাচার্য্য এর নেতৃতে ২টি ট্রাংকুলেজার গান, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, ঔষধসহ (০৭) সাত সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল রাত ১২ টা ৩০ মিনিটে আমতলী এলাকার চিলাই বন বিল থেকে হাতিটিকে আহত অবস’ায় উদ্ধার করতে সক্ষম হন। হাতিটি সকাল ৯ টায় পানিতে নামার পর আতঙ্কিত হয়ে আর উপরে উঠতেছে না। বিল ও আশ পাশের এলাকা জলবদ্ধ থাকায় হাতিটি মেডিসিন প্রয়োগ করে অবশ করা থেকে বিরত থাকে উদ্ধারকারী টিম। রাতের প্রচন্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে খাবার প্রয়োগসহ বিভিন্ন উপায়ে রাতভর হতিটিকে পাড়ে আনার চেষ্টা চলতে থাকে। ভোর ৫টায় মাছ ধরার নৌকায় করে হাতিটিকে তাড়িয়ে ভোর সাড়ে ৬ টার দিকে রাসত্মার পাশে আনা সম্ভব হয়েছে। প্রচুর পরিমান কলাগাছ ও পাকা কাঠাল দিয়ে দীর্ঘ প্রচেষ্টায় সকাল ৮ টায় হাতিটিকে নিবৃত করে উদ্ধারকারী টিম এর মাহুতরা। বন সংরক্ষ ড. তপন কুমার দে এর সার্বিক নির্দেশনায় উদ্ধারকারী টিম হাতিটিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কে নিয়ে আসে। বর্তমানে হাতিটি সাফারী পার্কে সুস’ আছে।
অপরদিকে বন্যপ্রানী সংরক্ষণ সার্কেলের কনজারভেটর অব ফরেস্ট ও প্রকল্প পরিচালক (বন্যপ্রানী সংরক্ষণ প্রকল্প) ড. তপন কুমার দে আমাদের এ প্রতিনিধির সাথে মুঠোফোনে আলাপচারিতায় জানান, হাতি নির্বিচারে হত্যা করা হলে আমাদের দেশে হাতির সংখ্যা কমবে। এক সময় সারা দেশে সকল জায়গাতেই হাতি দেখা যেত। আপনাদের বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা, ফুলবাড়ীয়ায়, ভালুকা, হালুয়াঘাট, টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর ও উত্তর টাঙ্গাইল, শেরপুর জেলায় ঝিনাইগাতি, বকশিগঞ্জ, নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা, দূর্গাপুর। বর্তমানে শেরপুর ও জামালপুর জেলায় হাতী লোকালয়ে আসতে দেখা যায়। জনসাধারনের হাতে বেশ’কয়েকটি হাতীর মৃত্যু হয়েছে। অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে। সরকার হাতী কৃর্তৃক হতাহতদের ক্ষতিপুরন হিসেবে নগদ দু’লক্ষ টাকা আহতদের ৫০হাজার টাকা প্রদান করে আসছে। তাঁদের পুনর্বাসন করছে। তিনি আরো জানান হাতীকে লালন করতে হব্‌ে হাতী আমাদের উপকারী এর দ্বারা নানা রোগের ঔষধ তেরী করা হয়। হাতী সংরক্ষনের জন্য শেরপুর জেলার বকশিগঞ্জ ও ঝিনাইগাতি উপজেলার সীমান-বর্তী স’ানে হাতীর অভয়াশ্রম এক’শ হেক্টর ভুমিতে সবুজ বেষ্টনী তৈরী করার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। চলতি অর্থবছরেই এ বিশেষ বাগান সৃজনের কাজ শেষ হবে। এদিকে শেরপুর ও জামালপুর জেলায় হাতীর উপদ্রব প্রতিরোধে ক্ষতিগ্রস-দের মাঝে জেনারেটর, টচলাইট, মেঘা হর্ণ ইত্যাদি উপকরণ দেয়া হয়েছে। যেন বনে বসবাসকারীরা এ সকল উপকরণ ব্যবহার করে হাতী প্রতিরোধ করছে। তবে আগের মতো ক্ষয়ক্ষতি করছে না। এভাবে হাতি নিধন হলে এক সময় বাংলাদেশ থেকে হাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সম্পুন্র্‌ প্রাকৃতিক পরিবেশে শাল বনে ন্যাশনাল পার্ক স’াপন করা হচ্ছে। ৯০% ভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি কাজ চলতি অর্থবছরেই শেষ হবে। তিনি আশা করছেন আগামী বিনোদন মৌসুম এর পূর্বাহ্নে আনুষ্ঠানিকভাবে জনসাধারনের ব্যবহারের জন্য খুলে দেয়া হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকৃতি প্রেমিক। তার সার্বিক সহযোগিতায় উল্লেখিত ভালুকায় একটি শালবনে প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। এর আগে বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক, কক্সেজবাজারে ফাশিয়াখালীতে বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক স’াপিত হয়েছে। দেশের প্রকৃতি প্রেমিকগন শিক্ষার্থীরা অংশ গ্রহন করছে। অপরদিকে ময়মনসিংহ বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা গোবিন্দ রায় জানান, সুন্দর মনোরম পরিবেশে ময়মনসিংহের ভালুকায় কাগিড়ে ৮৫০ একর বনভূমিতে শালবনে ন্যাশনাল পার্ক স’াপন করা হয়েছে। যা দেখলে আগামী প্রজন্ম তাদের প্রা্রকৃতিক বনকে খুজে পাবে। তিনি আশা করে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়া হলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এ পার্ক জনসাধারনের জন্য খুলে দেয়া হবে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ১১:০৮ অপরাহ্ণ | জুন ১৯, ২০১৫