| রাত ১২:৪২ - শুক্রবার - ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

প্রতিশোধ নিলো বাংলাদেশ

মুস্তাফিজুর রহমানের দুর্দান্ত এক স্লোয়ারে রোহিত শর্মা কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই বল চলে গেল মিড অফ। সহজ ক্যাচ মাশরাফির, দানবীয় উল্লাস! সেই উল্লাসের পিছনে নিশ্চয়ই লুকিয়ে আছে গত ১৯ মার্চের স্মৃতি। মেলবোর্নে বিশ্বকাপের মঞ্চে সেদিন বাংলাদেশের স্বপ্ন চুরি করেছিল এই ভারত, বাজে আম্পায়ারিংয়ের সুবাদে।

আর সেদিনের সেই বিতর্কিত ‘নো-বল’-এর সাথে জড়িয়ে আছে এই রোহিত শর্মার নাম। রুবেল হোসেনের বলে সেদিন আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড নো না ডাকলে ইতিহাসটা হয়তো লেখা হতে পারতো ভিন্ন ভাবে।

এবার আর ‘জোর’ করে ইতিহাস বদলে দিতে পারেনি ভারত। মহেন্দ্র সিং ধোনির ‘অখেলোয়াড়োচিত’ কনুইয়ের ধাক্কায় কুপোকাত হন নি মুস্তাফিজুর রহমান। সবিনয়ে দু:খিত বলে নিজেকে শাঁনিয়ে নিয়েছেন মাঠের লড়াইয়ের জন্য। দিন শেষে ৫০ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে নায়ক হয়ে গেছেন ১৯ বছরের মুস্তাফিজ।mash_10995551

ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতে গেল ৭৯ এর বড় ব্যবধানে। হয়ে গেল ইতিহাসে; বিশ্বকাপ-প্রতিশোধটা এর চেয়ে ভাল ভাবে খুব সম্ভবত নেয়া যেত না! দেশের মাটিতে এটা বাংলাদেশের টানা নবম জয়।

বাংলাদেশের দেয়া ৩০৮ রানের জবাবে ৯৫ রানের উদ্বোধনী জুটিটা মাশরাফিদের বুকে ভয় ধরিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু সেটা শেষ হয়ে যাওয়ার পেছনে ছিল একটা ‘জুয়া’। চার পেসার খেলানো দু:সাহস। আর তাতে বিনা উইকেটে ৯৫ রান থেকে ২০ রানের মধ্যে পড়লো ‘বিখ্যাত’ ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপের চারটি উইকেট।

১২৮ রানের মাথায় ভারতের ‘ম্যাচ উইনার’ অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে সাজঘরে পাঠিয়ে দেন বাঁ-হাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান।

বাকিটা সময় শুধু পেসারদের। আরও নির্দিষ্ট করে বললে অভিষিক্ত মুস্তাফিজুর রহমানের। ইতিহাসের মাত্র ১০ জন বোলার ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডেতে পাঁচ উইকেট পাওয়ার কীর্তি গড়েন। আর মুস্তাফিজকে নিয়ে এই তালিকায় বাংলাদেশি দাঁড়ালো দু’জন।

ঠিক এক বছর দুই দিন আগে এই ভারতের বিপক্ষে ২৮ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ। সেটাই অভিষেক ম্যাচে কোন বাংলাদেশি বোলারের সেরা পারফরম্যান্স। মুস্তাফিজ তাসকিনকে পারফরম্যান্সের দিক থেকে ছাড়িয়ে যেতে না পারলেও দলকে জয় তো এনে দিলেন। এদিক দিয়ে অন্তত তাসকিনকে ছাড়িয়ে গেলেন মুস্তাফিজ!

এর আগে টস ভাগ্যে জিতেছিলেন মাশরাফিই। সর্বশেষ যে ১২ ম্যাচে টসে জিতেছিলেন তার মধ্যে আটটিতেই প্রথমে ব্যাটিং নিয়েছিলেন, তার সবগুলোতেই ম্যাচ জিতেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ১৩ ওভার চার বলে চলে এসেছিল ১০২ রান। এরপরই ছোট্ট একটা ধস ১৪৬ রান হতে না হতেই চলে গেল বাংলাদেশের চারটি উইকেট।

এরপর হাল ধরলেন সাকিব আল হাসান ও সাব্বির রহমান রুম্মান। তাদের ৮৩ রানের জুটিতে শেষ অবধি বড় স্কোর গড়ার স্বপ্নটা সত্যি হয় বাংলাদেশের। তবে, লোয়ার মিডল অর্ডার ও টেল এন্ডাররা সেই ধারাবাহীকতা ধরে রাখতে পারেননি।

শেষ অবধি দুই বল বাকি থাকতে অল আউট হওয়ার আগে বাংলাদেশ ৩০৭ রান করে। যদিও এটাই ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড।

এর আগে পাঁচ বছর আগে এই ঢাকাতেই ত্রিদেশীয় সিরিজে ভারতের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ছয় উইকেটে ২৯৬ রান করেছিল বাংলাদেশ। সেদিক থেকে ভারতের বিপক্ষে এবারই প্রথমবারের মত ৩০০-এর বেশি রান করলো বাংলাদেশ। আর নবম বার ওয়ানডেতে কোন দলের বিপক্ষে ৩০০ রানের বেশি করলো বাংলাদেশ।

সর্বোচ্চ ৬২ বলে ৬০ রান আসে ওপেনার তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে। এছাড়া সৌম্য ৫৪ ও সাকিব ৫২ রান করেন। সাব্বিরের ৪১ কিংবা অধিনায়ক মাশরাফির ১৮ বলে ২১ রানকেও মনে রাখতে হবে।

ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। আর দুটি করে উইকেট নেন ভূবনেশ্বর কুমার ও উমেশ যাদব।

আর বাকিটা সময় ইতিহাস। সাকিবের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে গেলেন উমেশ যাদব; মাশরাফি-তাসকিনে চিরচেনা সেই ‘ম্যাশকিন’ উদযাপন!

সর্বশেষ আপডেটঃ ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ | জুন ১৯, ২০১৫